কক্সবাজার-৪: নৌকার বিপক্ষে চোখ রাঙাচ্ছে ঈগল

এম ফেরদৌস, উখিয়া :

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার -৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনের নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে সাধারণ ভোটারদের মাঝে। গ্রামেগঞ্জে চায়ের দোকানেও জমে উঠেছে নির্বাচনী আমেজ।

নৌকার মনোনীত দলীয় প্রার্থী শাহীন আকতারের পথের কাঁটা হয়ে মাঠে চষে বেড়াচ্ছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর। তিনি ঈগল মার্কার প্রতিক নিয়ে নৌকার বিপক্ষে উখিয়া টেকনাফের নির্বাচনী মাঠ চাঙ্গা করেছেন বলে মন্তব্য করছেন সাধারণ ভোটাররা।

উখিয়া টেকনাফ সংসদীয় আসনে দীর্ঘদিন ধরে নির্জীব থাকা আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীদের ও স্ব স্ব প্রার্থীর পক্ষে বেশ জোরালো অংশগ্রহণ দেখা যাচ্ছে। প্রচার প্রচারণা ও মাইকিংয়ের সময়েও নিশ্চুপ থাকা নেতাকর্মীদের নাম শুনা যাচ্ছে নির্বাচনী মাঠে।এককথায় আড়ালে চলে যাওয়া নির্জীব নেতাকর্মীরা সতেজ ও প্রাণবন্ত হয়ে উঠেছেন আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে।

প্রধান বিরোধীদল বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুসারে ভোটের লড়াই তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। এ লক্ষ্যে নিজেদের মনোনীত প্রার্থীর বাইরে দলীয় নেতাদের স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে। এতে সাধারণ ভোটারের ভোটেই জয়ের জন্য লড়তে হবে প্রার্থীদেরকে।

এ কারণে প্রার্থীদের কাছে তাদের কদর বাড়ছে। আগের দুটো (২০১৪ ও ২০১৮ সালের) নির্বাচনে জোটবদ্ধ আওয়ামী লীগ ও মিত্রদের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণের নির্বাচনে প্রার্থীদের নিকট সাধারণ ভোটারদের গুরুত্ব ততটা ছিল না বলে মন্তব্য করছেন সাধারণ ভোটাররা। তখন নির্বাচনে উৎসব আমেজ কিংবা স্বতঃস্ফূর্ততা ততটা দেখা না গেলেও এবার চিত্রটা সম্পূর্ণ ভিন্ন।

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বাইরে স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটের লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন। কক্সবাজার -৪ আসনে নৌকার মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন গত বারের নির্বাচিত সাংসদ শাহীন আকতার এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন টেকনাফ উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি নুরুল বশর। প্রার্থী দুজনেই আওয়ামী লীগের জনপ্রিয় নেতা হওয়ায় আওয়ামী লীগের ভোট ভাগাভাগি হবে এটা আন্দাজ করা যাচ্ছে।

এক্ষেত্রে নির্বাচনে জয়লাভ করতে উখিয়া টেকনাফের সাধারণ ভোটারদের ওপর নির্ভর করতে হবে। যেহেতু উভয় প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট সক্রিয় থাকবে সেহেতু ভোট কারচুপির সুযোগ থাকবে না। মোড়ে মোড়ে, চায়ের স্টলে, বাজারে, হাটে, মাঠে, ঘাটে এখন জল্পনা শুরু হয়েছে এ নির্বাচনী প্রচারনা।

কিন্তু এবার এ অবস্থা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। তাছাড়া দলীয় শাস্তির ভয়ও থাকছে না। তাই তারা সক্রিয় হয়েছেন স্ব স্ব প্রার্থীর পক্ষে। অনেকেই বলছেন নিজ দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী দিয়ে নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে যে কৌশল প্রধানমন্ত্রী নিয়েছেন তা জাদুর মতো কাজ করছে।

ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কে কার আগে দলের নেতাকর্মীদের নিজের পক্ষে টানতে পারেন সে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন। সব মিলিয়ে এরই মধ্যে উখিয়া টেকনাফে ভোটের মাতাল হাওয়া বইছে।

সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থীরা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ভোট চাইতে শুরু করেছেন। গ্রামেগঞ্জে ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে কৌশলে। প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন। ভোটারদের সুবিধা-অসুবিধা, সুখ-দুঃখের খোঁজখবর নিচ্ছেন।

দীর্ঘদিন নির্জীব থাকা কয়েকজন নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী তেমন ছিল না তাই শুধু তাদের পছন্দ মতো ঘরোয়া নেতারা ছাড়া ভোটারদের কাছে তেমন কেউ যায়নি এমনকি তাদের ও কেউ ডাকেনি। বর্তমানে প্রত্যেক কর্মীদের ব্যাপক হারে কদর বেড়েছে।

উখিয়া উপজেলার বেশ কয়েকজন ভোটার জানান, দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী যেহেতু মাঠে আছেন সেহেতু আমরা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে যেতে পারবো।

দলীয় প্রার্থী শাহীন আকতারের সাথে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল বশর জানান, আমি দলীয় শৃঙ্গলা মেনে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে উখিয়া টেকনাফের অবহেলিত গনমানুষের সুখে দুঃখে পাশে থাকবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ১২ দফা দাবি নিয়ে ঈগল মার্কায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করতেছি।

তাছাড়া আওয়ামীলীগের ত্যাগীনেতা এবং মুক্তিযুদ্ধা পরিবারকে মূল্যায়নের মাধ্যমেই আমার নির্বাচনী মাঠ শুরু করেছি। ইনশাআল্লাহ বিজয় সুনিশ্চিত।

আরও খবর