বিশেষ প্রতিবেদক :
মহান বিজয় দিবসের ছুটি আর পর্যটন মৌসুমের শুরুতেই কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পর্যটকদের ভিড় বেড়েছে। হরতাল ও অবরোধে পর্যটন ব্যবসায় মন্দা দেখা দিলেও দু‘দিনের ছুটিতে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরেছে সৈকতের নগরীতে।
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতকে ঘিরে কক্সবাজারে গড়ে উঠেছে ৫১৬টি হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও কটেজ। এছাড়াও রয়েছে রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে এখন চাঙাভাব। হরতাল, অবরোধের ভোগান্তিতেও পর্যটদের উচ্ছ্বাস কমেনি। নগর জীবনের যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি পেয়ে বাঁধভাঙা আনন্দে মেতেছেন তারা।
তবে, দিনে কক্সবাজারে প্রকৃতির দৃশ্য পর্যটকদের বিমোহিত করলেও সন্ধ্যার পর দেখা বা আনন্দের কিছু নেই—এ অভিযোগ দীর্ঘদিনের। শুরু থেকে পর্যটন পরিকল্পিতভাবে এগোতে না পারাই রাতের বিনোদনে কোনো স্থায়ী আয়োজন এখনো হয়ে ওঠেনি।
এ অবস্থায় মাসখানেক সময় ধরে চলা কক্সবাজার শিল্প ও বাণিজ্য মেলা কক্সবাজারের স্থানীয় ভ্রমণপিয়াসী ও আগত পর্যটকদের রাতের বিনোদনের খোরাক জোগাচ্ছে। সৈকতের লাবণী পয়েন্টে ঝাউবাগান ঘেরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন পর্যটন গলফ মাঠে চলমান শিল্প ও বাণিজ্য মেলায় রাত ১২টা পর্যন্ত কেনাকাটাসহ নানাভাবে বিনোদিত হচ্ছেন আগত আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা।
ঈদগাঁও থেকে সপরিবারে শুক্রবার সৈকতে বেড়াতে এসেছেন মোহাম্মদ ইউনুস খান। তিনি বলেন, ‘দিনে সৈকত ও প্রকৃতি দেখে সময়টা সবার ভালোই কেটেছে। তবে সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফিরে যাওয়া ছাড়া আর কোনো বিনোদন নেই। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরতে চাননি কেউ। এক বন্ধু জানালো, মোটেল শৈবালের পাশে বাণিজ্য মেলা চলছে। পরে পরিবার নিয়ে মেলায় ঢুকেছি। রাত ১২ কখন বেজেছে বুঝতেই পারিনি।’
চট্টগ্রামের আনোয়ারা থেকে আসা প্রবাসী ফরিদুল আলম বলেন, ‘সারাদিন সৈকতের সৌন্দয উপভোগের পর রাতে মাইকের শব্দ শুনে মেলায় ঢুকেছি। এটা-সেটা কেনাকাটা, বিভিন্ন রাইডে চড়া ও খাওয়া-দাওয়ার মধ্য দিয়ে সময় ভালোই কেটে গেলো।’
মেলায় আসা শিক্ষার্থী সিদরাতুল মুনতাহা ও মারজান রেখা বলে, ‘নৌকা দোলনা, নাগরদোলা, ফাইবার ইলেকট্রিক চরকি ও মিনি হাতি ঘোড়ায় চড়ে প্রচুর আনন্দ পেয়েছি। জাদু প্রদর্শনীও দেখেছি।’
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের যৌথ উদ্যোগে এ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গিয়ে দেখা যায়, দৃষ্টিনন্দন প্রধান ফটক। প্রবেশ মুখেই স্থাপন করা হয়েছে পানির পোয়ারা। রয়েছে সুউচ্চ টাওয়ার। প্রস্তুত রয়েছে ফায়ার ইউনিট ও মেডিকেল টিম। ধুলাবালি কমাতে পুরো মাঠে ইট বিছানো হয়েছে। মেলার চারপাশ আলোকসজ্জায় ঝলমল।
মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব শাহেদ আলী সাহেদ বলেন, প্রতিবারের মতো এবারও মেলাটি ব্যতিক্রম ও জাঁকজমকভাবে সাজানো। রয়েছে বিনোদনের বিভিন্ন ব্যবস্থা। মেলায় বসেছে শতাধিক স্টল ও একাধিক মুখরোচক খাবারের দোকান। মেলায় অংশ নেওয়া প্যাভিলিয়ন ও সাধারণ স্টলে প্রসিদ্ধ গার্মেন্টস, হোমটেক্স, ফেব্রিকস পণ্য, হস্তশিল্পজাত, পাটজাত, গৃহস্থালি ও উপহারসামগ্রী, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, তৈজসপত্র, সিরামিক, প্লাস্টিক, পলিমার পণ্য, কসমেটিকস, হারবাল ও প্রসাধনী সামগ্রী, খাদ্য ও খাদ্যজাত পণ্য, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, ইমিটেশন ও জুয়েলারির সমাহার।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, পর্যটনে রাতের বিনোদনে স্থায়ী কিছু এখনো গড়ে ওঠেনি। কিন্তু গত একমাস ধরে বাণিজ্য মেলাটিই রাতে পর্যটক ও স্থানীয় দর্শনার্থীদের বিনোদন অনুষঙ্গ। এতে বেড়াতে আসা দূর-দূরান্তের পর্যটকরাও খুশি।
মেলা আয়োজক কমিটির চেয়ারম্যান ও পৌরসভার প্যানেল মেয়র-১ সালাউদ্দিন সেতু জানান, মেলায় সার্বক্ষণিক নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তায় চারপাশে ও ভেতরে রয়েছে সিসিটিভি। পোশাকধারী ও সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। নিরাপত্তার স্বার্থে মেলাস্থলে সবধরনের হকার ও ভিক্ষুক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, খাবারে অনিয়ম রুখতে মূল্যতালিকা রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইভটিজিং রোধে মেলায় রয়েছে পুলিশের বিশেষ টিম। জানুয়ারিতেও থাকবে মেলার কার্যক্রম।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ইভটিজিংসহ যেকোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে সচেষ্ট রয়েছে পুলিশের বিশেষ টিম। মেলায় স্থানীয় ছাড়াও বিদেশি ক্রেতা ও পর্যটক অংশ নিচ্ছেন, এটা আনন্দের।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-