কক্সবাজার থেকে শুরু হলো বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল

এম.এ আজিজ রাসেল :

অবশেষে ফুরালো অপেক্ষার প্রহর। বাস্তবে রূপ নিলো কক্সবাজারবাসীর ৯২ বছরের লালিত বহুল কাঙ্খিত স্বপ্ন। ১ ডিসেম্বর দুপুর সাড়ে ১২টায় ১ হাজার ২০ জন যাত্রী নিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার থেকে রাজধানী ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়লো প্রথম ট্রেন। এর মাধ্যমে শুরু হলো বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল।

ইতিহাসের পাতায় আজীবন লিপিবদ্ধ থাকবে, তাই দিনক্ষণ ঠিক ছিল আগে থেকেই। শুক্রবার সকাল থেকে ব্যস্ততা বাড়ে কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশনে। বেলা বাড়তেই আসতে থাকেন কক্সবাজার এক্সপ্রেসের যাত্রীরা। কড়া নিরাপত্তায় তাঁদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় ট্যুরিস্ট পুলিশ ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যাত্রীদের পাশাপাশি রেল প্ল্যাটফর্মে জড়ো হন স্থানীয়রাও। সবার মাঝে উৎসাহ-উদ্দীপনা।

ইতিহাসের স্বাক্ষী হতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত পর্যটকেরা। তাঁদের অভিমত, ট্রেনে চড়ে কক্সবাজার আসবো বা বাড়ি ফিরবো কখনো চিন্তা করেনি। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হলো আজ। আশা করছি এখন থেকে ট্রেন হবে নিরাপদ যাতায়াত ও বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম।

বাণিজ্যিকভাবে রেল চালু হওয়ায় কক্সবাজারে আগের তুলনায় দুই-তিন গুণ পর্যটক বাড়বে। এতে আরও সমৃদ্ধ হবে পর্যটন শিল্প। তাই পর্যটকদের নিরাপত্তায় নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘কক্সবাজারে পর্যটকদের নিরাপদে আসা-যাওয়া নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশের একাধিক টিম কাজ করবে। টহল টিমের পাশাপাশি থাকবে স্পেশাল ফোর্স। এছাড়া পর্যটকদের সুবিধার্থে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম, জরুরি সেবা ও হটলাইন।’

কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো. মুজিবুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বদন্যতায় কক্সবাজারবাসীর মানুষের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। রেল চালুর মধ্য দিয়ে নতুন যুগে প্রবেশ করলো কক্সবাজার। এখন থেকে যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন আসবে। পাশাপাশি এই রেল ঘিরে কক্সবাজারসহ দেশের অর্থনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটবে।’

কক্সবাজার আইকনিক রেল স্টেশন থেকে প্রথম বাণিজ্যিক রেল যাত্রা পরিদর্শনে আসেন রেল মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবির। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় বাণিজ্যিকভাবে রেল চলাচল শুরু হলো। আন্তঃনগর এই ট্রেন ২০টি বগি নিয়ে কক্সবাজার থেকে ঢাকা ও ঢাকা থেকে কক্সবাজার চলাচল করবে। চাহিদা বাড়লে বগিও বাড়ানো হবে।’

তিনি আরও বলেন, বর্তমান ট্রেনটিতে কোন কেবিন সুবিধা নেই। এসি শোভন কোচে চেয়ার থাকবে পর্যাপ্ত। জানুয়ারি থেকে আরও কয়েকটি ট্রেন চালু হবে। তবে আপাতত লোকাল ট্রেন চালু হচ্ছে না।’

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার এক্সপ্রেস চট্টগ্রামে বেলা ৩টা ৪০ মিনিটে এবং ঢাকায় পৌঁছবে রাত ৯টা ১০ মিনিটে। পর্যটন শহর থেকে রাজধানী ঢাকা যেতে সময় লাগবে ৮ ঘণ্টা ১০ মিনিট।

কক্সবাজার থেকে ঢাকা পর্যন্ত শোভন চেয়ারের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৯৫ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া ১ হাজার ৩২৫ টাকা, এসি সিটের ১ হাজার ৫৯০ টাকা এবং এসি বার্থের ভাড়া ২ হাজার ৩৮০ টাকা।

গত ১১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজার-দোহাজারি রেলপথের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

আরও খবর