এম. বেদারুল আলম :
# চালকদের আড়াই কোটি টাকা নেতাদের পেটে
অটোরিক্সা ও সিএনজি চালকদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে কামাইকৃত আড়াই কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে।
জেলার শতাধিক স্পটে জেলা অটোরিক্সা সিএনজি চালক সমিতির নামে গণহারে চাঁদা আদায়ের অভিযোগ দীর্ঘ দিনের। বিষয়টি নিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়ালেও থামেনি চাঁদাবাজি।
ইতোমধ্যে পুলিশ বিষয়টি তদন্ত শুরু করে শ্রমিকদের ঘামের টাকা আত্মসাৎ করার সত্যতা পেয়েছে। সমিতির হিসাবে প্রতিদিনের কষ্টে অর্জিত জমানো আড়াই কোটি চাঁদার টাকা নেতারা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা রয়েছে নেতারা এমনটাই দাবি চালকদের।
জানা যায়, জেলা অটোরিক্সা টেম্পু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়ন নাম ব্যবহার করে জেলার অর্ধশত সড়কের গুরুত্বপূর্ণ অংশে ব্যারিকেড দিয়ে চালকদের কাজ থেকে দীর্ঘ দিন চাঁদা তুলে আসছে কতিপয় শ্রমিক নেতা।
এরমধ্যে অন্যতম সভাপতি নামধারী পাহাড়তলির জালাল উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক নামধারী দক্ষিণ তারাবনিয়ারছড়ার নুরুল হক, খরুলিয়ার আমান উল্লাহ, একই এলাকার শফিকুল ইসলাম শমসু, দক্ষিণ কলাতলীর নজির আহমদসহ একদল সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্র। ১ যুগের বেশি সময় তারা জেলার বিভিন্ন সড়কের অংশে অটোরিকশা ও সিএনজি চালকদের জিম্মি করে চাঁদাবাজি করে আসছে।
তাদের রয়েছে উপজেলা ভিত্তিক শক্তিশালী সিন্ডিকেট। দৈনিক গড়ে ৫০ টি স্পট থেকে ৩ লাখ টাকার বেশি চাঁদা তুললেও চালকদের ঘামের টাকা নিজেরাই আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবি শতাধিক চালকদের।
শহরের বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন সিকদার পাড়ার সিএনজি চালক আবছার মিয়া জানান- সংগঠনটির ১৬৮০ জন সদস্য প্রতিদিন চাদা দেয় এর বাইরে অনেক রেজিষ্ট্রেশন ছাড়া অটোরিকশা সিএনজি থেকে চাঁদা তুলে উক্ত সিন্ডিকেট। কিন্তু চালকদের স্বার্থ রক্ষা ও বিপদে এ টাকা ব্যবহার করার কথা থাকলেও তাদের পাওয়াও যায়না।
সিএনজি চালক আবছার মিয়ার দাবি, ২০১৮ সাল থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত সমিতির সদস্যদের কাছ থেকে ১০ টাকা হারে ২ কোটি ৪১ লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে তা সমিতির একাউন্টে জমা না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে উক্ত ৫ নেতা। সিএনজি চালকরা তাদের কাছ থেকে হিসাব চাইতে গেলে উল্টো মারধর এমনকি মামলার হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি জানেন। সিএনজি চালক মোঃ রুবেল মিয়াকে কয়েকদিন আগে বেধড়ক পিটিয়েছে সংগঠনের চাদা তোলার কাজে নিয়োজিত চাঁদাবাজরা।
এদিকে সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, শুধুমাত্র কক্সবাজার পৌরসভার অভ্যন্তরে ১৫ টি স্পটে চাঁদা তুলছে সিএনজি অটোরিক্সা সমিতির নাম ব্যবহার করে জালাল নুরুল হক সিন্ডিকেট। কিছু চিহ্নিত চাঁদাবাজ কমিশনের ভিত্তিতে ১৫ টি স্পটে চাঁদা তুলে নিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন চাঁদাবাজির অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে চালকরা নিরুপায় হয়ে পড়েছে। ১৫টি স্পটে চাঁদা তুলছে যারা তাদের মধ্যে অন্যতম হলো বাজারঘাটায় এহসানুল্লাহ, নবাব মিয়া, রুবেল।
কক্সবাজার বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্টেডিয়াম সংলগ্ন এলাকায় কবির আহমদ, কোর্ট বিল্ডিং চত্বরে মোঃ রাসেল, বিলকিস মার্কেট এলাকায় মোঃ শফি, কলাতলীর ডলফিন মোড়ে মোহাম্মদ রুবেল, বাস টার্মিনাল এলাকায় বিশাল দুইটি স্পটে চাঁদা তুলছে আবু তাহের, আবুলু এবং আব্দুল জলিল।
কক্সবাজার পৌরসভার বাইরে বিভিন্ন উপজেলার অন্তত ৪০ টি স্পটে প্রতিদিনের চাঁদা উত্তোলন করছে উক্ত সিন্ডিকেটের নেতৃত্বে।
স্পটগুলো হল শাপলাপুর, হোয়াইক্ষং, উখিয়া, বাজার কোট বাজার, মরিচা বাজার, লিংক রোড, রামু স্টেশন, ঈদগাঁও স্টেশন,ঈদগড় স্টেশন, গর্জনীয়া বাজার, চকরিয়া স্টেশন, বদরখালী বাজার, পেকুয়া বাজার, মহেশখালী গোরকঘাটা, বাংলাবাজার, কুতুবদিয়া স্টেশন, মাতারবাড়ি স্টেশন হ্নীলা স্টেশন, বাইশারী স্টেশন, চৌফলদন্ডী বাজার, খুরুষ্কুল বাজার এবং খুরুশকুল রাস্তার মাথা বাজার।
গণহারে চালকদের কাছ থেকে সমিতির নামে চাঁদা আদায়ের বিষয়ে শ্রমিক নেতা রাশেদুল মোস্তফা জানান- সিএনজি চালকদের ঘামের টাকা আত্মসাতের বিষয়টি আমি শুনেছি। গণহারে চাদা আদায়কারীরা প্রতিবাদ করলে উল্টো চালকদের হেনস্তা করে। পুলিশের নামে চাঁদা আদায় করে নিজেরা পকেটে ভরে। চালকদের স্বার্থে বিষয়টি উর্ধতন প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। ২ হাজার চালকের প্রায় আড়াই আত্মসাৎকারী আত্মসাৎকারীরা দেশ ও জাতির শত্রু।
এদিকে জেলার বিভিন্ন সড়ক উপসড়কে বিআরটিএ’র নিবন্ধিত ১৫ হাজার সিএনজি এবং নাম্বার বিহীন প্রায় ৫ হাজার সিএনজি চলাচল করে। উক্ত ২০ হাজার যানবাহন থেকে এবং শতাধিক মাহিন্দ্র থেকে গড়ে ১০ টাকা করে চাঁদা আদায় করে সংগঠনের নাম ব্যবহার করে। কিন্তু সমিতির নিজস্ব একাউন্ট থাকলেও সেখানে উক্ত টাকা জমা না করে আত্মসাৎ করেছে বলে চালকদের দাবি।
শ্রমিক সংগঠনের নামে সড়কে গাড়ি থামিয়ে চাঁদাবাজি কতটুকু বৈধ এবং কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা এ বিষয়ে কক্সবাজার ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন বলেন-সড়কে চলাচলরত কোন যানবাহনের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করা যাবেনা। কোন সমিতি কিংবা পৌরসভার কেউ চাঁদা উত্তোলন করলে সেটা আইনগত অবৈধ। সিএনজি চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ও অবৈধ। এ ব্যাপারে ট্রাফিক পুলিশ মাঠে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-