যেকারণে আবারও আলোচনায় সাবেক সংসদ বদি!

সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার •

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা নিয়ে গঠিত কক্সবাজার-৪ আসন। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ইতোমধ্যেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন ডজনখানেক প্রার্থী। তবে উখিয়া-টেকনাফ আসনের জনগণ এবার মনে প্রাণে চাচ্ছেন একজন সৎ, মেধাবী ও ক্লিন ইমেজের (মাদক কলঙ্ক মুক্ত) যোগ্য জনপ্রতিনিধি।

কক্সবাজার-৪ (সংসদীয় আসন ২৯৭) আসনের দুই উপজেলায় ১১ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌর সভা রয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় বর্তমানে মোট ভোটার সংখ্যা ২,৬৫, ৮২৪। তৎ মধ্যে পুরুষ ভোটার ১,৩৩,৮২১ ও মহিলা ভোটার ১,৩২,০০৩ জন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা বিভিন্ন সভা সমাবেশের মাধ্যমে প্রার্থিতার ঘোষণা দিচ্ছেন। নিজ নিজ এলাকা তথা নিজ নিজ উপজেলায় বিভিন্ন জনসংযোগ, সভা-সমাবেশ করছেন তারা।

আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবার বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার চৌধুরি ছাড়াও সাবেক সংসদ সদস্য ও টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বদি, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মুর্শেদ, কক্সবাজার জেলা যুব লীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর, ঢাকা সিটি ছাত্রলীগ নেতা শাওন আরমান, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক শাহ আলম চৌধুরি (রাজা শাহ আলম), উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরি, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আদিল উদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী, জেলা পরিষদের সদস্য আশরাফ জাহান চৌধুরী কাজল দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অন্যতম। তাঁদের নাম জোরালোভাবে শোনাও যাচ্ছে। তারাও স্ব স্ব অবস্থানে কাজ করে যাচ্ছেন, পাশাপাশি ভোটারদের ও কেন্দ্রীয় নেতাদের মন জয় করার জন্য বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন।

কক্সবাজার-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে দৌড়ে থাকা বর্তমান সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার চৌধুরী, সাবেক সংসদ সদস্য ও টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রহমান বদি, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল বশর, টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মুর্শেদ, কক্সবাজার জেলা যুব লীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর ও ঢাকা সিটি ছাত্রলীগ নেতা শাওন আরমান টেকনাফ উপজেলার বাসিন্দা। টেকনাফ উপজেলায় এরা পরিচিত মুখ হলেও উখিয়া উপজেলার সাধারণ ভোটাররা আবদুর রহমান বদিকে ছাড়া আর কাউকে তেমন চিনেন না।
কখনো তাঁদের নামও শোনেননি অনেক ভোটার। নিজ নিজ উপজেলায় এরা জোরালোভাবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, সমাজসেবা ও উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজ করলেও উখিয়া উপজেলায় তাদের কোনো কার্যক্রম নেই বললেই চলে।

অপরদিকে একই অবস্থা কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক শাহ আলম চৌধুরী (রাজা শাহ আলম), উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজাপালং ইউনিয়ন পরিষদের টানা ৩ বারের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী, উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যাপক আদিল উদ্দিন চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা জাফর আলম চৌধুরী, জেলা পরিষদের সদস্য আশরাফ জাহান চৌধুরী কাজলের। এরা সবাই উখিয়া উপজেলার বাসিন্দা। উখিয়া উপজেলায় এদের ব্যাপকভাবে পরিচিত ও শক্ত অবস্থান থাকলেও টেকনাফ উপজেলার সর্বসাধারণের কাছে তাদের পরিচিতি অনেক কম। তবে নিজ নিজ উপজেলায় এরা জোরালোভাবে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, সমাজসেবা ও উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজ করে যাচ্ছে।

এলাকার সাধারণ মানুষের মতে, বর্তমান সাংসদ শাহিন আক্তার নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সরকারী-বেসরকারি ও দলীয় কাজে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। বিগত ৫ বছর স্থানীয় লোকজন তাকে কেউ স্বপ্নেও দেখেনি। যার কারণে তিনি বর্তমানে সম্পূর্ণ জনবিচ্ছিন্ন একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবে এলাকায় পরিচিত লাভ করেছেন।

সচেতন মহলের মতে, বঙ্গবন্ধুর শোক সভায়, দলীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানে এবং সরকারি প্রোগ্রামগুলোতে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদির সম্প্রতি দেওয়া বক্তব্য গুলো খুবই বিতর্কিত ও আপত্তিকর।

স্থানীয় লোকজনের মতে এইসব বক্তব্য ভাইরাল হওয়ার বক্তব্য। তার এসব বক্তব্যে কোনো দিক নির্দেশনা বা গঠনমূলক ছিল না । একজন সাবেক সংসদ সদস্যের কাছে এমন বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। তবে একজন দানবীর নেতা হিসাবে পুরো কক্সবাজার জেলায় আবদুর রহমান বদির আলাদা গ্রহণযোগ্যতা ও স্বীকৃতি রয়েছে।

দলীয় কিছু নেতা কর্মীরা মনে করেন, আবদুর রহমান বদির সাম্প্রতিক সময়ে দেওয়া বক্তব্য এগুলোর কারণে তিনি পুরো কক্সবাজার জেলায় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে এসেছে। সে কারণে আবারও জেলাব্যাপী আলোচনায় চলছে সাবেক সাংসদ বদিকে নিয়ে। পাশাপাশি এসব আলোচিত বক্তব্যের কারণে তার জনসমর্থন অনেক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। উখিয়া ও টেকনাফের সাধারণ ভোটারদের কাছে তার জনপ্রিয়তার ব্যাপক। তবে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বর্তমানে সাবেক সাংসদ বদির ঘোর বিরোধী অবস্থানে রয়েছে। এদিকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অনুদান প্রদান ও অসহায় মানুষদের সহযোগিতা করার দিক দিয়ে আবদুর রহমান বদি যেমন অদ্বিতীয়, তেমনি মাঝে মাঝে তার লোক দেখানো দান এবং অনুদান নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা রয়েছে। এতো কিছুর পরও বদির প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা ছাড়া কক্সবাজার-৪ আসনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয় হয়ে আসা অন্য যে কোন প্রার্থীর জন্য হিমালয়ের পাহাড় ডিঙানোর মতো হবে বলে দলের অনেক নেতারা মনে করেন।

সাংগঠনিক ভাবে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব মুর্শেদ অবস্থান অনেক গভীর ও শক্তিশালী এবং একক আধিপত্য রয়েছে দলের নেতাকর্মীদের উপর। উখিয়ায় জাহাঙ্গীর ও টেকনাফে মুর্শেদ দলের নেতাকর্মীদের মুহূর্তের মধ্যে দলকে একত্রিত করে সামনে এগিয়ে নেওয়ার বা বিরোধী দলকে মোকাবেলা করার ক্ষমতা রাখেন বলে আওয়ামী লীগের বেশিরভাগই নেতাকর্মীরা মত প্রকাশ করেছেন।

উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী টানা ৩ বার রাজা পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে নিজের কর্মদক্ষতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং সফল একজন জনপ্রতিনিধি হিসাবেও সাধারণ মানুষের কাছে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে বলে স্থানীয় রাজাপালং ইউনিয়ন বাসী মনে করেন। তিনি একজন ভালো গঠনমূলক বক্তাও। তবে তিনি একজন অহংকারী নেতা হিসাবে তার বিরোধী শিবিরে প্রচার রয়েছে।

ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুরের পক্ষে দলের সচেতন নেতাকর্মীরা মত প্রকাশ করলেও তার সবসময় কক্সবাজার শহরে অবস্থান বা বসবাস করাকে অনেক নেতাকর্মী ও সর্বসাধারণ ভালো চোখে দেখেন না।

আরও খবর