উখিয়ায় গুলিবিদ্ধ বিএনপি নেতার মৃত্যু: বুধবার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল, ৪২ জনের বিরুদ্ধে মামলা

কক্সবাজার জার্নাল প্রতিবেদক :

কক্সবাজারের উখিয়ায় জালিয়াপালংয়ে র‌্যাবের টহল দলের ওপর হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ এক বিএনপি নেতার মৃত্যু হয়েছে।

মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) সকালে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। এ ছাড়া একই ঘটনায় বিএনপির ৪২ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে র‍্যাব।

গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া বিএনপি নেতা জাগির হোসেন (৩৮) জালিয়াপালং ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের পাইন্যাশিয়া গ্রামের মৃত মো. আলমের ছেলে। তিনি ওই ওয়ার্ডের বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত ৫ নভেম্বর (রোববার) মধ্যরাতে র‌্যারের টহল দল নাশকতা মামলার আসামি উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সোলতান মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্য আসামিদের ধরতে জালিয়াপালং ইউনিয়নের পাইন্যাশিয়া গ্রামে গেলে হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় বিএনপির নেতা-কর্মী-সমর্থক লাঠিসোঁটা নিয়ে র‌্যাবকে ঘিরে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকেন। পরবর্তীতে র‍্যাব আত্মরক্ষার্থে ফাঁকা গুলি ছুড়ে।

এদিকে গুলির শব্দ পেয়ে এলাকায় ডাকাত পড়েছে জানিয়ে মসজিদ থেকে মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়। একপর্যায়ে উভয় পক্ষে গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। ইট-পাটকেলের আঘাতে র‌্যাবের একটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং র‍্যাবের কয়েকজন সদস্যও আহত হয়। এসময় স্থানীয়দের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয় তিনজন। সেখানে জাগির হোসেন (৩৮) নামে একজনের পেটে গুলি লাগে। তাকে উদ্ধার করে নিকটস্থ অরিজিন হাসপাতালে নিয়ে আসলে কক্সবাজারে রেফার করা হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া বিএনপি নেতা জাগিরের ভাতিজা শিহাব উদ্দিন বলেন, র‍্যাবের সাথে ঘটনার সময় তাঁর চাচার (জাগির) পেটে গুলি লাগে। এরপর তাঁকে চমেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। তাঁর স্ত্রী ও দুই সন্তান রয়েছে। তার মৃত্যুতে গ্রামবাসীর মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে।

উখিয়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ চৌধুরী জানান, ঐদিন র‌্যাব ও সাদা পোশাকে ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা যৌথভাবে পাইন্যাশিয়া এলাকায় অর্তকিত হামলা চালায়। আমার নিজের বাসভবন সহ স্থানীয় লোকজনের কয়েকটি বসতবাড়ীতে নির্বিচারে ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। এই খবর এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এলাকাবাসী এসময় ডাকাত দল ভেবে তাদের প্রতিরোধ করার চেষ্টা করে। সাথে সাথে র‌্যাব ও সাদা পোষাকের ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা গ্রামবাসীকে লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে ভীতি কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এসময় তাদের গুলিতে অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী আহত হয় এবং ১০ টির অধিক বসতবাড়ি ভাংচুর এবং লুটপাট করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডাররা।

এ নিয়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট শামীম আরা স্বপ্না একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়েছেন।

কক্সবাজার জেলা বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক এডভোকেট হাসান সিদ্দিকীর পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ৫ নভেম্বর রাতে উখিয়া উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক সুলতান মাহমুদ চৌধুরীর বাসায় র‌্যাব ও পুলিশ এবং আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী কর্মীরা যৌথ ভাবে বাড়িতে গিয়ে তাকে না পেয়ে ঘর ভাংচুর করে এবং গ্রামবাসির উপর গুলি চালায়। এতে ৩ জন বিএনপি নেতা-কর্মী আহত হয়। আহতদের মধ্যে স্থানীয় বিএনপি নেতা জাগির হোসেন (৩৭) মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ গনতান্ত্রিক আন্দোলনে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নির্বিচারে নেতা-কর্মীদের উপর গুলি চালিয়ে নিহত করার প্রতিবাদে কক্সবাজার জেলায় বুধবার সকাল সন্ধ্য হরতালের ঘোষণা দেন।

বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ জানান কক্সবাজার জেলায় আইনশৃংখলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলিতে একজন বিএনপি নেতা নিহত হয়েছে। আহত হয়েছে ২ জন। এ ছাড়া গত ২৮ অক্টোবরের পরে বিভিন্ন থানায় মামলা দিয়ে ৫৫ জন বিএনপি নেতা কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে।

হামলার ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে র‌্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু সালাম চৌধুরী বলেন, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে অভিযোগে নাশকতা মামলার প্রধান আসামি বিএনপি নেতা সোলতান মাহমুদ চৌধুরীসহ অন্য আসামিদের ধরতে র‌্যাবের একটি টহল দল পাইন্যাশিয়া গ্রামে গেলে বিএনপির নেতা-কর্মীসহ কয়েক শ মানুষ র‌্যাবকে ঘিরে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকেন। এ সময় গুলিও ছোড়া হয়। একপর্যায়ে র‌্যাবের একটি গাড়ির কাচ ভেঙে যায়। তখন পরিস্থিতি সামাল দিতে র‌্যাব কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।

উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, র‌্যাবের ওপর হামলার ঘটনায় থানায় বিএনপির ৪২ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তবে এ মামলায় তখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। ওসি বলেন, উভয় পক্ষের গোলাগুলিতে আহত জাগির হোসেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি-জামায়াতের ঢাকা দেশব্যাপী সকাল সন্ধ্যার হরতালে উখিয়াতে সড়ক অবরোধ করে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরে অভিযোগে বিএনপি নেতা সোলতান মাহমুদ চৌধুরীকে প্রধান আসামি করে উখিয়া থানায় ৩৫ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা করে পুলিশ। গত ৩০ অক্টোবর উখিয়া থানায় মামলাটি করেন ওই থানার এসআই মো. আবদুল ওয়াহেদ।

আরও খবর