সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপে কেয়াবন পুড়িয়ে উল্লাস

টেকনাফ অফিস :

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপে যাতায়াতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও মানছে না কেউ। সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে আসা পর্যটক এবং স্থানীয়রা লাইফ বোট ও স্পিডবোটে ছাড়া সৈকত দিয়ে ছেঁড়া দ্বীপে যাতায়াত করছেন। এমনকি ছেঁড়া দ্বীপের কেয়াবন পুড়ে আনন্দ উল্লাস করেছে পর্যটকদের একটি দল।

মঙ্গলবার (৩১ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ছেঁড়া দ্বীপে একদল তরুণ কেয়াবন পুড়ে আনন্দ উল্লাস করেছে। শুধু তা না এসব ছবি ফেসবুকেও দিয়েছেন তারা। সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পর লাইফ বোট ও স্পিডবোটের পরিবর্তে সৈকত দিয়ে অটোরিকশা, ভ্যানসহ মোটরসাইকেলে চলাচল করছেন পর্যটকসহ স্থানীয়রা।

এভাবে কেয়াবন ধ্বংসের পেছনে জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতরের গাফিলতিকে দায়ী করছেন বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবাদীরা।

এ বিষয়ে সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, ‘ঘটনাটি খুব দুঃখজনক। আমি এ বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’

জানতে চাইলে কক্সবাজারের পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোসাইটির (ইয়েস) প্রধান নির্বাহী এম ইব্রাহিম খলিল মামুন বলেন, ‘ছেঁড়া দ্বীপে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কেউ মানছেন না। বরং ছেঁড়া দ্বীপে কেয়াবন পুড়ে লোকজন আনন্দ উল্লাস করছে- বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। দিন দিন ছেঁড়া দ্বীপের সামুদ্রিক প্রবালগুলো হুমকির মুখে রয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারের নানা উদ্যোগের কথা শুনেছি, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। দ্বীপ রক্ষায় আগে অবৈধ স্থাপনাগুলো ভাঙা দরকার। পাশাপাশি সরকারের উচিত সেন্টমার্টিনে পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন ও তদারকি করা। তা না হলে দ্বীপটি আগামী ২০ বছরের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যাবে।’


এদিকে ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপ অংশে পর্যটকদের যাওয়া নিষিদ্ধ করা হয়। একইসঙ্গে পরিবেশ-প্রতিবেশ রক্ষায় সেন্টমার্টিনে ছয় ধরনের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দেয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। সেখান থেকে জারি করা এক পরিপত্রে এসব নির্দেশনা দেওয়া হলেও তা মানছেন না পর্যটকরা। এসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে কোনও তদারকি নেই স্থানীয় প্রশাসনের।

স্থানীয়রা বলছেন, সেন্টমার্টিন দ্বীপের ‘রক্ষাদেয়াল’ সারিবদ্ধ কেয়াবন। পাঁচ বছর আগেও দ্বীপের চারপাশে কেয়াবন ছিল। এখন উজাড় হতে হতে এখন প্রায় শেষের দিকে। তাছাড়া সেন্টমার্টিনে কেয়াবন উজাড়ের একমাত্র কারণ হোটেল, রিসোর্ট, রেস্তোরাঁসহ নানা স্থাপনা নির্মাণ করে আসছিল অনেকে। এসব স্থাপনা নির্মাণ করতে গিয়ে কেয়াবন আগুনে পুড়িয়ে ও কেটে ধ্বংস করা হয়েছে। এর ফলে সৈকতের বালিয়াড়ি বিলীন হচ্ছে। এর প্রভাবও ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। দুই বছর ধরে সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে বিলীন হচ্ছে দ্বীপের শত শত নারিকেল গাছ ও বসতবাড়ি- যা আগে কখনও হয়নি।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আদনান চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি শুনেছি। খোঁজ নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আরও খবর