সবার নজর এখন ২৮ অক্টোবরে

সাঈদ শিপন •

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে বিএনপি। একই দিন মতিঝিলের শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।

ওইদিনই বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে রাস্তা বন্ধ করে কোনো দলকে সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) যুগ্ম কমিশনার (প্রশাসন) বিপ্লব কুমার সরকার।

ডিএমপির নির্ভরযোগ্য সূত্র বৃহস্পতিবার রাতে জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর ঢাকায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে তাদের পছন্দের ভেন্যুতে সমাবেশ করতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ডিএমপি। তবে এখনো কোনো দলকেই আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমতি দেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, শাপলা চত্বরে সমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ডিএমপিকে চিঠি দিলেও ইতিবাচক সাড়া পায়নি জামায়াত। দলটিকে কোনোভাবেই ঢাকায় সমাবেশ করতে মাঠে নামতে দিতে রাজি নয় পুলিশ। তবে শাপলা চত্বরেই সমাবেশ করার বিষয়ে দলের অনড় অবস্থানের কথা জানিয়েছেন জামায়াত নেতারা।

একই দিনে কাছাকাছি দূরত্বে তিন বৃহৎ রাজনৈতিক দলের এই পাল্টাপাল্টি সমাবেশ কর্মসূচি ঘিরে ঢাকার বাতাস বাড়তি উত্তাপ ছড়াচ্ছে। ২৮ অক্টোবর সামনে রেখে সাধারণ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে নানান শঙ্কা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মধ্যেও শঙ্কা দানা বাঁধছে। কেউ কেউ রাজনৈতিক পরিস্থিতি চরম অবনতির আশঙ্কা করছেন। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, ঢাকার রাজনীতি উত্তপ্ত হলেও অতীতের মতো সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতির কারণে রাজনৈতিক দলগুলো হয়তো বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনো ধরনের সংঘাতের দিকে যাবে না।

রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় এমনিতেই অর্থনীতি চাপে রয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। বিনিয়োগ কমছে। কাঁচামালের আমদানি কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো সংঘাতে জড়ালে তা দেশের অর্থনীতির জন্য আরও সময় নিয়ে আসবে

তবে পরিস্থিতি যা-ই হোক, সবার নজর এখন ২৮ অক্টোবরের দিকে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ২৮ অক্টোবর কী হতে চলেছে সবাই এখন তা দেখার অপেক্ষায়। ওইদিন কী ঘটতে পারে, তা আগে থেকে কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয়। ২৮ অক্টোবর যদি রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি শেষ করে তা সবার জন্য ভালো। আর যদি সংঘাতের সৃষ্টি হয়, তা দেশের জন্য যেমন ভালো হবে না, তেমনই দলগুলোর জন্যও ভালো বার্তা দেবে না।

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব এবং ডলার সংকটের কারণে দেশের অর্থনীতিতে এমনিতেই মন্থরগতি দেখা দিয়েছে। তার ওপর শুরু হয়েছে নির্বাচনী ডামাঢোল। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় এমনিতেই অর্থনীতি চাপে রয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। বিনিয়োগ কমছে। কাঁচামালের আমদানি কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো সংঘাতে জড়ালে তা দেশের অর্থনীতির জন্য আরও সংকট নিয়ে আসবে।

২৮ অক্টোবর কী হতে চলেছে সবাই এখন তা দেখার অপেক্ষায়। ওইদিন কী ঘটতে পারে, তা আগে থেকে কারও পক্ষে বলা সম্ভব নয়। ২৮ অক্টোবর যদি রাজনৈতিক দলগুলো শান্তিপূর্ণভাবে তাদের কর্মসূচি শেষ করে তা সবার জন্য ভালো। আর যদি সংঘাতের সৃষ্টি হয়, তা দেশের জন্য যেমন ভালো হবে না, তেমনই দলগুলোর জন্যও ভালো বার্তা দেবে না

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনের সড়কে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। এ সমাবেশ ঘিরে ঢাকায় বড় ধরনের সহিংসতার আশঙ্কা করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এজন্য সম্ভাব্য সহিংসতা মোকাবিলা করে রাজপথের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে দলীয়ভাবে প্রস্তুতিও নিচ্ছে দলটি। দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অন্তত গত কয়েকদিনের বিভিন্ন বক্তব্যে তেমন ইঙ্গিতই মিলেছে।

অন্যদিকে বিএনপির মহাসমাবেশের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন। মহাসমাবেশ ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীরা কয়েকদিন ধরে যেভাবে পাল্টাপাল্টি ও আক্রমণাত্মক বক্তব্যও দিচ্ছেন, তাতে নগরবাসীর মধ্যে ২৮ অক্টোবর নিয়ে স্বাভাবিকভাবেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।

বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) ডিএমপি সদরদপ্তরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (প্রশাসন) বিপ্লব কুমার সরকার বলেন, সব রাজনৈতিক দলকে অর্থাৎ যারা সভা-সমাবেশ করার অনুমতি চেয়েছে তাদের বলা হয়েছে জনদুর্ভোগ কমাতে রাস্তা বাদ দিয়ে মাঠ বা খোলা স্থান পছন্দ করতে। সেটা খোলা মাঠও হতে পারে। নিজেদের ভেন্যু নিজেরাই পছন্দ করে ডিএমপিকে জানাতে বলা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের ঢাকা শহর মেগা সিটি। এখানে লাখ লাখ মানুষের সমাগম হলে ঢাকার দুই-আড়াই কোটি নগরবাসীর জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে নিতে সমস্যা হয়। সব দিক বিবেচনা করেই নগরবাসীর স্বার্থে নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য এ বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ডিএমপি কমিশনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সমাবেশ করতে চাওয়া দলগুলোকে রাস্তা বাদ দিয়ে ভিন্ন স্থানে সমাবেশ করতে বলা হয়েছে। বিকল্প স্থান ঠিক করে আবেদন করলে কমিশনার চিন্তা করে দেখবেন তারা অনুমতি পাবেন কি না।

রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় এমনিতেই অর্থনীতি চাপে রয়েছে। বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। বিনিয়োগ কমছে। কাঁচামালের আমদানি কমে যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক দলগুলো সংঘাতে জড়ালে তা দেশের অর্থনীতির জন্য আরও সময় নিয়ে আসবে।

এদিকে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশের জন্য নয়াপল্টনের বিকল্প ভেন্যু খোঁজাসহ সাত তথ্য জানতে পুলিশ যে চিঠি দিয়েছিল, তার জবাব দিয়েছে বিএনপি। দলটি বলেছে, ২৮ অক্টোবর তারা নয়াপল্টনেই মহাসমাবেশ করতে চায়। বুধবার (২৫ অক্টোবর) রাতে ডিএমপির পক্ষ থেকে বিএনপিকে এ চিঠি দেওয়া হয়। পল্টন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন মিয়ার পাঠানো চিঠিতে সমাবেশের জন্য নির্ধারিত স্থান নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছাড়াও বিকল্প দুটি ভেন্যুর নাম প্রস্তাবের অনুরোধসহ আরও কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

এর জবাবে বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) দুপুরে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী পল্টন মডেল থানার ওসি বরাবর একটি চিঠি পাঠান। এতে বলা হয়েছে, ২৮ অক্টোবরের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়াপল্টনে বিএনপির প্রধান কার্যালয়ের সামনেই আয়োজনের সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। অন্য কোনো ভেন্যুতে যাওয়া সম্ভব হবে না।

এর আগে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে সমাবেশ করতে পুলিশকে চিঠি দিয়েছিল বিএনপি। এরপর সুনির্দিষ্ট সাতটি তথ্য জানতে চেয়ে বিএনপিকে চিঠি দেয় ডিএমপি। সেই চিঠিতে সমাবেশে লোকসমাগমের সংখ্যা, সময়, বিস্তৃতি, কোন কোন স্থানে মাইক লাগানো হবে, অন্য দলের কেউ উপস্থিত থাকবেন কি না- এ বিষয়গুলো সম্পর্কে তথ্য জানতে চাওয়া হয়।

অন্যদিকে ২৮ অক্টোবর সমাবেশের জন্য আওয়ামী লীগের কাছে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটের বিকল্প দুটি ভেন্যুর নাম চেয়েছিল ডিএমপি। জবাবে দলটি জানিয়েছে, ২৮ অক্টোবর শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আয়োজনের জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এমতাবস্থায় স্বল্প সময়ের মধ্যে অন্য কোনো ভেন্যুতে নতুনভাবে সমাবেশের প্রস্তুতি নেওয়া দুরূহ। বৃহস্পতিবার পল্টন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দিন মিয়া বরাবর এক চিঠিতে এ তথ্য জানান ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক মো. রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ।

চিঠিতে তিনি আরও জানান, সমাবেশে লোকসমাগম সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে এবং সন্ধ্যা ৭টায় শেষ হবে। সমাবেশে প্রায় দুই লাখ লোকের সমাগম হবে। সমাবেশ জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেট থেকে পল্টন মোড়, জিপিও মোড়, শিক্ষা ভবন, গোলাপ শাহ মাজার, নতুন ভবন, নবাবপুর সড়ক, মহানগর নাট্যমঞ্চ, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল সড়ক এবং স্টেডিয়াম পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সমাবেশে বক্তব্য প্রচারের জন্য উল্লিখিত স্থানগুলোতে মাইক স্থাপন করা হবে। সমাবেশে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠনের নেতাকর্মী, সমর্থক, নারী সংগঠন, তরুণ প্রজন্ম ও সর্বস্তরের জনগণ অংশ নেবেন। সমাবেশে অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করা হবে।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি সমাবেশ করার ঘোষণা দিয়েছে জামায়াতে ইসলাম। তারা ২৮ অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরেই মহাসমাবেশ করতে চায়। এ বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার (২৬ অক্টোবর) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন দলটির ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা, জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমানসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও আলেম-ওলামাদের মুক্তি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের দাবিতে ২৮ অক্টোবর মতিঝিল শাপলা চত্বরে মহাসমাবেশ করবে জামায়াত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের সংকটময় এক কঠিন রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আমরা আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা নিশ্চয়ই অবগত আছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আর মাত্র কিছুদিন পরই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। অথচ এখনো নির্বাচনের কোনো পরিবেশ তৈরি হয়নি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করা পূর্বশর্ত। কিন্তু সরকার তা করার কোনো চিন্তাই করছে না।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে বিএনপি

২৮ অক্টোবর ঢাকায় রাজনৈতিক দলগুলোর এমন মুখোমুখি অবস্থানকে কীভাবে দেখছেন- জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ২৮ অক্টোবর কী হবে সেটা এখন বলা সম্ভব নয়। তবে কথা হলো দুই দলের সমাবেশের মধ্যে কিছুটা দূরত্ব আছে। কাজেই আমি আশাবাদ পোষণ করি কেউ ধ্বংসাত্মক অবস্থার মধ্যে যাবে না। বাস্তব পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় তা ২৮ অক্টোবরই বোঝা যাবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা-আশঙ্কা তো আছেই।

বর্তমান পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হলে তা অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সেটা তো নিঃসন্দেহে খারাপ হবে। রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমে গেছে। বিনিয়োগ কম হচ্ছে। কাঁচামাল আমদানি কমে যাচ্ছে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে কেউ বিনিয়োগ করবে না। আর বিনিয়োগ না করলে কর্মসংস্থান হবে না। এখন যদি অস্থির অবস্থা সৃষ্টি হয় তাহলে অর্থনীতির অবস্থা আরও খারাপের দিকে চলে যাবে।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে বিএনপি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, গত কয়েকদিন ধরে যা ঘটছে, তাতে পরিস্থিতি ট্রেস করা খুবই মুশকিল। শোডাউন তো হচ্ছেই। বিএনপি অনেক আগে থেকেই শোডাউন করছে। আওয়ামী লীগ আবার পাল্টা শোডাউন করছে। এর সঙ্গে এখন যুক্ত হলো জামায়াত। ভেন্যু নিয়ে বার্গেনিং হবেই, এখানে না ওখানে। আগে শাপলা চত্বর নিয়ে একটা ইনসিডেন্ট আছে। এটা জনগুরুত্বপূর্ণ স্থান। সবকিছু মিলিয়ে একটা উত্তেজনাকর অবস্থা বিরাজ করছে।

তিনি বলেন, বর্তমান যে অবস্থা তাতে কোন পরিস্থিতিতে কী হবে এটা বলা খুব মুশকিল। কারণ দুই দলই শোডাউন করছে। দুই দলই নিজেদের অবস্থানে অনড়। আমার যেটা মনে হলো সাধারণ মানুষ খুবই বিরক্ত, উদ্বিগ্ন। সাধারণ মানুষ ধরেই নিয়েছে- ওইদিন (২৮ অক্টোবর) কোনো কাজ রাখা যাবে না, ঢাকা শহরে যাওয়া যাবে না, এ রকম একটা অবস্থা। সাধারণ মানুষের আচরণে আমার কাছে এমনটা মনে হয়েছে। যারা দৈনিক উপার্জনের ওপর নির্ভরশীল তারা সবচেয়ে বেশি বিরক্ত। এ শ্রেণির মানুষেরা মনে করছে, দেশে অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনকালীন সহিংসতার মতো একটা অবস্থা আবারও শুরু হতে যাচ্ছে।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে বিএনপি

পারিপার্শ্বিক অবস্থা দেখে কী মনে হচ্ছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে? এমন প্রশ্ন করা হলে অধ্যাপক কে এম মহিউদ্দিন বলেন, অস্থিরতা সৃষ্টির একটা আশঙ্কা আছে। তবে খুব বেশি দূর যাবে তা নয়। কারণ আমেরিকার যে এমবার্গো (নিষেধাজ্ঞা) আছে, তার কারণে এর আগে যেগুলো করেছে মানে চূড়ান্ত পরিস্থিতির দিকে গেছে, সে রকম সহিংসতা করার এবার মনে হয় সাহস করবে না। আওয়ামী লীগ বলেন, আর বিএনপি- নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে যারা আছেন প্রত্যেকের আমেরিকা বা ইউরোপে যাওয়া দরকার। ফলে তারা গুডবুকেই থাকতে চাইবে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের আরেক অধ্যাপক মো. শামসুল আলম বলেন, ২৮ অক্টোবর ঘিরে যে অবস্থা, তাতে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আমরা সবাই আতঙ্ক বোধ করছি, সারাদেশেই উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। আমার দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে এটার জন্য সরকারি দলের লোকজনই সিংহভাগ দায়ী। তারাই বিষয়টাকে আতঙ্কের মধ্যে নিয়ে যাচ্ছে। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা যে ভাষায় কথা বলছেন, এগুলো তো কোনো দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দলের ভাষা হতে পারে না।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে বিএনপি

তিনি বলেন, বিএনপি বারবার বলছে তারা এতদিন ধরে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করছে, কোথাও সংঘাত হয়নি। ২৮ তারিখের বিষয়েও তারা আগে থেকে বলছে, এটা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, তারা বসে পড়বে না। ওই ধরনের কোনো নির্দেশনাও নেই। সেক্ষেত্রে সরকারের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের সমাবেশ করতে দিলেই তো হয়।

‘বর্তমানে যে ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে, তার সুযোগ নিয়ে যদি কোনো পক্ষ ঝামেলা করতে চায়, তাহলে তা দেশের জন্যই ক্ষতি। কোনো তৃতীয় পক্ষ সুযোগ নিয়ে কী করবে, সেটা তো আমরা জানি না। কাজেই আমরা শঙ্কিত। উভয়পক্ষের সংযত হয়ে সমাবেশ করা উচিত’- বলেন অধ্যাপক শামসুল।

সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আগামী ২৮ অক্টোবর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করার বিষয়ে অনড় অবস্থানে বিএনপি

তিনি বলেন, বিএনপি অনেকদিন ধরেই নয়াপল্টনে সমাবেশ করছে। আওয়ামী লীগও বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে সমাবেশ করে। ২৮ তারিখ যেহেতু শনিবার, কোনো অফিসও সেভাবে নেই। ফলে সমাবেশ ঘিরে তেমন জনভোগান্তি হওয়ার কথা নয়।

জাতীয় নির্বাচন ঘিরে দলগুলো পাল্টাপাল্টি বা মুখোমুখি অবস্থান না নিয়ে দেশ ও জনগণের মঙ্গলার্থে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে একটা গ্রহণযোগ্য সমাধানে আসবে, এমন আশার কথাই জানান অধ্যাপক শামসুল আলম।

আরও খবর