ডেস্ক রিপোর্ট :
হাইকোর্টের রায় অনুযায়ী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হাজী সেলিমসহ সাজাপ্রাপ্ত কেউই আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) প্রধান আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।
সোমবার (২৩ অক্টোবর) সুপ্রিম কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মতামত তুলে ধরেন।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘হাইকোর্ট গতকালকের প্রকাশিত রায়ে বলেছেন, সাজা কখনও স্থগিত হয় না। উপযুক্ত আদালতে সাজা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ নাই। এই রায়ের আলোকে খালেদা জিয়া, হাজী সেলিমসহ দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত কোনও ব্যক্তিই আসন্ন সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। কারণ, তাদের সাজা বাতিল হয়নি। যদি হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগ সংশোধন করেন বা বাতিল সেটা ভিন্ন কথা।’
এর আগে, গত ২২ অক্টোবর দুর্নীতির মামলায় দুই বছরের বেশি দণ্ডিতদের দণ্ড বাতিল না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সুযোগ নেই বলে হাইকোর্টের রায় প্রকাশিত হয়। একইসঙ্গে আপিল বিচারাধীন থাকা অবস্থায় দণ্ড স্থগিতের সুযোগ নেই বলেও রায় দেন উচ্চ আদালত। ২০১৮ সালের ২৭ নভেম্বর দেওয়া রায়ের ৪৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডিত পাঁচ বিএনপি নেতার আবেদন খারিজ করে মামলাটির রায় দিয়েছিলেন বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ।
আদালতে আবেদনকারী ওয়াদুদ ভূঁইয়ার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এ কে এম ফখরুল ইসলাম, মো. আব্দুল ওহাবের পক্ষে ছিলেন মো. ওয়াজেদ আলী, মো. মশিউর রহমানের পক্ষে ছিলেন মো. আমিনুল হক, কেএইচ বাহার রুমি ও মাহবুব শফিক, এ জেড এম জাহিদ হোসেনের পক্ষে ছিলেন রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আহসানুল করিম, খায়রুল আলম চৌধুরী ও তানভীর হোসেন খান, আমান উল্লাহ আমানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. আরিফুল ইসলাম। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, তৎকালীন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না। আর দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান ও একেএম ফজুলল হক খান।
প্রকাশিত রায় প্রসঙ্গে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান বলেন, ‘নৈতিক স্খলনের মামলায় দুই বছর বা তার বেশি সাজা হলে সেই ব্যক্তি সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হন। সংবিধানের এ সংক্রান্ত ৬৬ (২) (ডি) এর ব্যাখ্যা দিয়ে আদালত একটি রায় দিয়েছেন। রায়ে বলা হয়, সাজা কখনও স্থগিত হয় না। দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত কিছু ব্যক্তি বিচারাধীন আপিলে একটি দরখাস্ত দিয়েছেন সাজা স্থগিতের জন্য। কারণ স্থগিত না হলে তারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সেটার ব্যাখ্যা দিয়েছেন হাইকোর্ট। আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত দণ্ড বহাল থাকবে, কাজেই সাজা কখনও স্থগিত হয় না।’
সংবিধানের ৬৬ (২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, কোনও ব্যক্তি সংসদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার এবং সংসদ-সদস্য থাকবার যোগ্য হবেন না, যদি তিনি নৈতিক স্খলনজনিত কোনও ফৌজদারি অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয়ে অন্যূন দুই বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হন এবং তার মুক্তির পর পাঁচ বছর অতিবাহিত না হয়ে থাকে।
এই পাঁচ আবেদনকারীর বিষয়ে বলা হয়েছে, আবেদনকারীদের জামিন দেওয়া হয়েছে, তবে এটি বলা যায় না যে, তারা খালাস পেয়েছে বা তাদের অব্যাহতি অথবা মুক্তি দেওয়া হয়েছে বা শেষ পর্যন্ত তারা দোষী সাব্যস্ত ও সাজা থেকে খালাস পেয়েছে। সুতরাং সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের পরিপ্রেক্ষিতে দণ্ডিতদের ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, তা উপযুক্ত আদালতে বাতিল হওয়া পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আপিল আদালতে কারও জামিন হলে অথবা কোনোভাবে সাজা স্থগিতের আদেশ হলে দণ্ডিতদের সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের পরিপ্রেক্ষিতে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার অযোগ্যতার দায় থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় না।
আদালত আরও বলেন, যেহেতু সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী আবেদনকারীরা সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা বা অংশগ্রহণের অযোগ্য, তাই তাদের দণ্ডাদেশ স্থগিতের কোনও সুযোগ নেই।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-