ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন এখনই চলবে না

তৌফিকুল ইসলাম বাবর, চট্টগ্রাম

ট্রেন চলাচলের জন্য অনেকটাই প্রস্তুত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন। ইতোমধ্যে বসানো হয়ে গেছে ১০২ কিলোমিটার রেললাইন।

আগামী ২ নভেম্বর পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেনও চলবে এই রেলপথে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১২ নভেম্বর বহুল প্রত্যাশিত নতুন এই রেলরুটে ট্রেন চলাচল উদ্বোধন করবেন। এর আগে বর্তমানে কর্ণফুলী নদীর কালুরঘাট সেতুর চলমান সংস্কার কাজ দ্রুত শেষ করতে দিনরাত কাজ চলছে। তার পরও চট্টগ্রামে বাইপাস না থাকায় রাজধানী থেকে সরাসরি ট্রেন চলাচল সম্ভব হবে না। সেটি করতে হলে সীতাকুণ্ডের ফৌজদারহাট থেকে ষোলশহর পর্যন্ত বাইপাস রেললাইন স্থাপন করতে হবে। এটা না হওয়া পর্যন্ত ঢাকা থেকে কক্সবাজারগামী এবং ফিরতি ট্রেনকে প্রথমে চট্টগ্রাম স্টেশনে যেতে হবে। সেখানে ইঞ্জিন পরিবর্তন করে তারপর যেতে হবে গন্তব্যে। এর ফলে গোটা যাত্রায় বাড়তি এক থেকে দেড় ঘণ্টা সময় লাগতে পারে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, রেললাইনের সঙ্গে সংগতি রেখে পরিকল্পিতভাবে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ এবং বাইপাস রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে কর্ণফুলী নদীর ওপর কালুরঘাট সেতু সংস্কার করে তা ভারি ইঞ্জিনের ট্রেন চলাচলের উপযোগী করতে হচ্ছে। এই সংস্কার কাজ শেষ হতে আরও এক মাস সময় লেগে যেতে পারে। আবার সরাসরি ট্রেন চলাচলে নতুন করে উদ্যোগ নিতে হচ্ছে বাইপাস রেললাইন স্থাপনে। প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় এসব বিবেচনায় নেওয়া হলে সমস্যা দেখা দিত না।

রেলওয়ে অবশ্য বলছে, ঢাকা থেকে যাতে চট্টগ্রাম হয়ে সরাসরি কক্সবাজারে ট্রেন যেতে পারে, সে জন্য বাইপাস রেললাইন স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফৌজদারহাট থেকে ষোলশহর পর্যন্ত বাইপাস রেললাইন স্থাপন করা হবে। এটি হলে সরাসরি ট্রেন চলাচলে আর বাধা থাকবে না।

জানা গেছে, ঢাকা থেকে ট্রেন চট্টগ্রাম স্টেশনে না গিয়ে যাতে সরাসরি কক্সবাজার যেতে পারে, সে জন্য আলাদা বাইপাস নির্মাণে রেলওয়ের অনেক আগে থেকেই উদ্যোগ ছিল। কিন্তু দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পের সঙ্গে এটি শুরু না হওয়ায় কাজ পিছিয়ে যায়। এখন আলাদা বাইপাস রেললাইন স্থাপন করা হলে ওই বাইপাস ধরে ঢাকা থেকে আসা ট্রেন পাহাড়তলী স্টেশন হয়ে পাহাড়তলী রেলওয়ের মার্শালিং ইয়ার্ড-আমবাগান বাইপাস ব্যবহার করে ষোলশহর স্টেশন হয়ে সরাসরি কালুরঘাট সেতু দিয়ে কক্সবাজারে যাবে। আগামী বছরের জুলাইতে দোহাজারী-কক্সবাজার প্রকল্পের কাজ শুরু হবে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন।

গত সোমবার দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন পরিদর্শন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। দোহাজারী স্টেশন থেকে মোটর ট্রলিতে করে এই রেললাইন দিয়ে কক্সবাজার যান তিনি। আগামী ১২ নভেম্বর উদ্বোধন করা হলেও এই রুটে বাণিজ্যিক ট্রেন চালু করতে আরও কিছুটা সময় লাগবে বলে জানান তিনি। রেলমন্ত্রী সমকালকে বলেন, ‘ট্রেনে করে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে কক্সবাজার যাওয়ার স্বপ্ন মানুষের দীর্ঘদিনের। এখন সেই স্বপ্ন বাস্তব রূপ নিচ্ছে। রেললাইন প্রস্তুত হওয়ার পরপরই দ্রুত ট্রেন চালু করা হবে। প্রথম দিকে একটি ট্রেন চলাচল করবে। পরবর্তী সময়ে পর্যায়ক্রমে ট্যুরিস্ট ট্রেনসহ চালু হবে একাধিক বাণিজ্যিক ট্রেন।

রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত ১ আগস্ট থেকে কালুরঘাট সেতুতে সংস্কারকাজ শুরু হয়। এর পর ৭ আগস্ট থেকে সেতু দিয়ে ট্রেন এবং সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়। যদিও এর আগেই ৬ আগস্ট এই রুটে চলাচলের জন্য ছয়টি নতুন বগি এবং একটি ২২০০ সিরিজের ইঞ্জিন আনা হয়েছে; যেগুলো রাখা আছে পটিয়া স্টেশনের সামনে। কোরিয়া থেকে আনা এসব বগিতে ৬০ জন করে যাত্রী বসতে পারবেন। মূলত পরীক্ষামূলক ট্রেন চালানোর পর যাতে রুট উদ্বোধন করা যায়, সে জন্য এই বগি ও ইঞ্জিন আনা হয়েছে।

আরও খবর