সাবেক সংসদ বদি’র উন্নয়নের ছোঁয়ায় বদলে গেছে উখিয়া-টেকনাফ

সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার •


সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। সারা বাংলাদেশে আলোচিত এক নাম। নানা সময় তাকে নিয়ে হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। আর এসবের মধ্যে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন দুইবার। এর আগে ছিলেন টেকনাফ পৌরসভার মেয়র। বর্তমানের তার স্ত্রী শাহিন আকতার উখিয়া-টেকনাফ আসনের সংসদ সদস্য।

দেশের সীমান্ত এলাকার সংসদীয় আসন উখিয়া-টেকনাফ। স্বাধীনতার পর থেকে এই আসনে যিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তার দলই সরকার গঠন করেছে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আ. লীগ সরকার দেশকে উন্নয়নের দূর্বার গতিতে এগিয়ে নিচ্ছে। সমগ্র দেশব্যাপী উন্নয়নের অংশ হিসেবে ২০০৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুর রহমান বদি এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর ব্যাপক উন্নয়নের কাজ করেছেন। এ দুই উপজেলায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার দেশ পরিচালনায় আবদুর রহমান বদির হাত ধরে উন্নয়নের ছোঁয়ায় পাল্টে যেতে থাকে সীমান্ত উপজেলা উখিয়া-টেকনাফের চিত্র। কিন্তু ইতিপূর্বে সেই অনুপাতে এই এলাকার তেমন উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে।

এরপর ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারো বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবদুর রহমান বদি। তিনি উখিয়া-টেকনাফের বিভিন্ন ইউনিয়নে রাস্তা ঘাট সংস্কার ও নির্মাণ, বিভিন্ন সামাজিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ, শিক্ষা সামগ্রী বিতরণ, মসজিদ, মন্দির নির্মাণ ও সংস্কার, স্বাস্থ্য, কৃষি ও মৎস্য খাতে ব্যাপক উন্নয়ন সহ বিভিন্ন উন্নয়ন মূলক কাজ গেছেন। স্বাধীনতা ৪০ বছরে যে উন্নয়ন হয়নি গত ১০ বছরে সেই উন্নয়ন হয়েছে বলে দাবী করেছেন এই এলাকার জনগণ।

অসীম ধৈর্য ও নেতৃত্বের দৃঢ়তার কারণে নিয়মিত ছুটে যান তার নির্বাচনি এলাকা উখিয়া-টেকনাফের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তিনি সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ সর্বস্তরের নারী-পুরুষের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ করেন। কার কি সমস্যা তা তিনি ধৈর্য সহকারে শুনেন, তাৎক্ষনিক সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থাও করেন। এসব কারণে তার নির্বাচনি এলাকার ভোটারদের মন জয় করেছেন তিনি এবং আস্থা অর্জন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

পরপর দুইবার কক্সবাজার-৪ আসন থেকে নির্বাচিত এই সংসদ সদস্য বেশির ভাগ সময় ব্যয় করেন তার নির্বাচনি এলাকার জনগণের মাঝে।

এছাড়া সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন সময় অসহায় মানুষের মাঝে আর্থিক অনুদান, চাল, কম্বল সহ নানা প্রয়োজনীয় জিনিস বিতরন করে যাচ্ছেন এখনও। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে নগদ অর্থ বিতরণ, রাস্তা-ঘাট সংস্কার করার ক্ষেত্রে তিনি সরকারের অনুদানের আশায় বসে না থেকে ব্যক্তিগত তহবিল থেকে অর্থ দান করে সমস্যার সমাধান করেছেন। এছাড়াও তার নিজস্ব অর্থায়নে উখিয়া-টেকনাফের প্রায় ৫ শতাধিক ছাত্র-ছাত্রীকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। যা শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

রাস্তাঘাট-মসজিদ-মন্দির-মাদ্রাসার উন্নয়নের পাশাপাশি উখিয়া-টেকনাফের মানুষের স্বাস্থ্যসেবায় হাসপাতালের আসন বৃদ্ধি, দুই উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশন স্থাপন, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে দৃষ্টি নন্দন ১৫টি ব্রীজ-কালভার্ট নির্মান, অধিকাংশ এলাকায় সাইক্লোন শেল্টার, জেটি নির্মান, প্রত্যেক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘূর্নিঝড় আশ্রয় কেন্দ্র, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন ভবন, উখিয়ায় ৩ টি রাবার ড্যাম নির্মান সহ উন্নয়নের মাইলফলক স্থাপিত হয়েছে।

এছাড়াও টেকনাফ সাবরাংয়ে ট্যুরিস্ট জোন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে এই জোনের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করা হয়েছে। আর এর জন্য মেরিন ড্রাইভ রোডের নির্মান কাজ প্রায় শেষের পথে।

দুই উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস, উখিয়া ও টেকনাফ কলেজে নতুন ভবন ও অনার্স চালু করা হয়েছে। আর এমপি বদির একান্ত প্রচেষ্টায় সরকারীকরন হয়ে যাচ্ছে উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজ ও উখিয়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়।

উখিয়া উপজেলায় নতুন তিনটি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এসকল কারণে, উখিয়া-টেকনাফের লোকজন বলে মহাজোট সরকারের আমলে যে উন্নয়ন বিপ্লব ঘটেছে, তা অন্যকোনো সরকারের আমলে হয়নি। যা সম্ভব হয়েছে এমপি বদির সার্বিক প্রচেষ্টায়। তাই তাকে একজন সফল রাজনীতিক ব্যক্তি ও সফল এমপি বলেই মনে করেন এলাকাবাসী।

২০০৮ সাল থেকে একাধারে প্রায় ১৫ বছর তার পরিবারেরই দখলে সংসদ সদস্যের পদ রয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত আবদুর রহমান বদি সংসদ সদস্য ছিলেন। দুদকের একটি মামলার সাজা হওয়ায় আইনি জটিলতা ২০১৮ সালের নির্বাচনে তিনি সংসদ নির্বাচন প্রার্থী হতে পারেন তিনি। তার পরিবর্তে স্ত্রী শাহিন আকতার আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হন। শাহিন আকতার স্বামী আবদুর রহমান বদির ইমেজকে কাজে লাগিয়ে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। উখিয়া টেকনাফের বর্তমান সংসদ সদস্য হলেন আবদুর রহমান বদি স্ত্রী শাহিন আকতার।

এদিকে এবারের জাতীয় শোক দিবসে নিজস্ব অর্থায়নে উখিয়া টেকনাফ উপজেলার লক্ষাধিক মানুষের জন্য গণভোজ / কাঙ্গালি ভোজ আয়োজন করেছেন আবদুর রহমান বদি। তৎমধ্যে টেকনাফ উপজেলায় ৭০ হাজার এবং উখিয়া উপজেলায় ৩০ হাজার মানুষের জন্য এই কাঙ্গালি ভোজ আয়োজন করা হয়।

এই আয়োজনের জন্য সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদি ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীলদের মাঝে গরু ও অর্ধশতাধিক ছাগল এবং অর্ধ কোটি নগদ টাকা তুলে দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মার মাগফেরাতের জন্য আয়োজিত ১৪ আগষ্ট থেকে শুরু হওয়া এই কাঙ্গালি ভোজ ২২ আগষ্ট পর্যন্ত চলবে। উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা আয়োজিত এবারের কাঙ্গালি ভোজ পুরো জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইতিপূর্বে এতো বিশাল পরিসরে কখনো উখিয়া-টেকনাফে কাঙ্গালি ভোজ আয়োজন হয়নি। এতো কিছুর পরও তার বিরুদ্ধে প্রায় সময় মোবাইল রিসিভ না করার অপবাদ মানুষের মুখে মুখে।

আগামী সংসদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একাধিক মনোনয়ন প্রত্যাশীদের আবদুর রহমান বদি জনপ্রিয়তায় শীর্ষে রয়েছেন। ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসাবে আবদুর রহমান বদি চমক দেখালেও সচেতন মহলের মতে চলতি মেয়াদের তার স্ত্রী শাহিন আকতার সংসদ সদস্য হিসাবে বর্থ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। তিনি বেশি ভাগ সময় এলাকায় অনুপস্থিত ছিলেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কারণে বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফ উপজেলা বিশ্বের দরবারে খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠেছে। কিন্তু এই সময়ে স্থানীয় সংসদ সদস্যের প্রায় সময় অনুপস্থিতির কারনে স্থানীয় জনগোষ্ঠী তাদের বেশিরভাগ ন্যার্য পাওনা থেকে বন্ঞ্চিত হয়েছে। তাই এবার উখিয়া-টেকনাফের জনগণ শাহিন আকতারকে আগামী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী হিসাবে মেনে নিবে না বলে সুশীল সমাজ মনে করেন।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা আগামী সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য হিসাবে আবদুর রহমান বদিকে কামনা করতেছে। যদি আইনি জটিলতা কারনে তিনি প্রার্থী হতে ব্যর্থ হন সেক্ষেত্রে উখিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও রাজা পালং ইউনিয়ন পরিষদের তিন তিন বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী হিসাবে আশা করেন। কারণ জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী নিজেকে আবদুর রহমান বদির বিকল্প এবং নিজেকে দলীয় নেতা কর্মীদের নিকট গ্রহণ যোগ্য করে তুলছেন। আগামী সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগের প্রার্থী যাকে দেওয়া হোক না কেন সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদির প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া বিজয় হয়ে আসা কঠিন হবে।

সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি একান্ত সাক্ষাতকারে বলেন, দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বধীন আ. লীগ সরকার দেশ পরিচালনায় ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমি সংসদ সদস্য হয়ে এলাকার উন্নয়ন মুলক কাজ করে গেছি। প্রতিটি ওয়ার্ডের রাস্তায় ইটের সলিং, প্রাথমিক বিদ্যালয় নতুন ভবন বাউন্ডারি বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক, বিশুদ্ধ পানির স্থাপন, নতুন নতুন রাস্তা নির্মান রাস্তা পাকা করণ, ড্রেন নির্মাণ, ই সেবা কেন্দ্রে আধুনিক সরঞ্জাম, ব্রিজ নির্মাণ, আর্সেনিক মুক্ত টিউবয়েল স্থাপনসহ বিভিন্ন উন্নয়ন মুলক কাজ তার উদ্যোগে হয়েছে।

এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি ইউনিয়নের বিভিন্ন মসজিদ, মন্দির, মাদরাসা, ঈদগাহ ও কবর স্থানে ব্যাপক অনুদান প্রদানের মাধ্যমে তিনি দুই উপজেলাবাসীর কাছে ইউনিয়নে রুপকার হিসাবে নিজের অবস্থান করে নিয়েছেন।

তিনি বলেন, উখিয়া-টেকনাফের মাদকের বদনাম থাকলেও মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত করার প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছি এবং প্রতিটি ইউনিয়ন আধুনিক রূপান্তরিত করার জন্য ভবিষ্যতে এই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত থাকবে। এই উন্নয়নের ধারা অব্যহত রাখতে হলে প্রধানমন্ত্রীর হাতকে শক্তিশালী করতে হবে।

সাবেক এমপি বদি বলেন, আমি আমার দুই উপজেলায় মাদকমুক্ত আধুনিক পরিকল্পিত শিক্ষাবান্ধব মডেল উপজেলা গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি এজন্য অসহায় মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তাদের কষ্ট এবং বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে খুব কাছ থেকে সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানে করে যাচ্ছি।

বিশেষ করে সমাজের অসচ্ছল অসহায় গরিব, বিধবা, বয়স্ক এবং প্রতিবন্ধী মানুষের সহায়তা করে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন যাবত রাজনীতি করে এলাকায় সাধারণ মানুষের স্বার্থে উন্নয়ন মূলক কাজের সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছি। একিভাবে করোনা কালীন সময়ে সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী গরিব দুঃখী মানুষের পাশে সাহায্য সহযোগিতা করেছি।

তিনি বলেন, আমি অতীতেও এলাকাবাসীর পাশে ছিলাম, এখনো আছি এবং ভবিষ্যতেও পাশে থেকে আধুনিক ডিজিটাল উপজেলা গড়ে তুলবো।

আরও খবর