সমকাল :
বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামের দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথের পাত নিয়ে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকায় প্রায় সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নবনির্মিত এ ডুয়েলগেজ রেললাইনের একটি অংশ ফাঁকা দেখা গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, রেলপথের পাত চুরি হয়ে গেছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পাতের ঝালাইয়ের কারণে এই ফাঁকা সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয়দের দাবি, বন্যার পানি আসার আগেও রেললাইন অক্ষত দেখেছেন। বন্যার মধ্যে কে বা কারা ক্লিপ উপড়ে রেলের পাত খুলে নিয়ে গেছে। গারেংগিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানায়, এ রেলপথ ধরে সে নিয়মিত যাতায়াত করে। হঠাৎ দেখে রেলের পাত নেই। মাঝে ২০ থেকে ৩০ ফুট ফাঁকা।
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মফিজুর রহমান বলেন, রেলপাত স্থাপনের সময় খানিকটা দূরত্ব রাখা হয়। পরে তা ওয়েল্ডিং করে যুক্ত করা হয়। রেলপাতগুলো টেনে একটি আরেকটির সঙ্গে ওয়েল্ডিং করার কারণে ফাঁকা স্থান তৈরি হয়েছে। যখন এ ফাঁকা ৪২ ফুটের মতো হয়, তখন সেখানে একটি পাত বসানো হয়।
দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেলপথে যে পাত স্থাপন করা হয়েছে, তার একেকটির দৈর্ঘ্য ৪২ ফুট বা ১২ দশমিক ৮ মিটার। এক মিটার রেলপাতের ওজন ৬০ কেজি। পুরো পাতের ওজন ৭৬৮ কেজি। প্রকল্প পরিচালক বলেন, এত ওজনের রেলপাত কারও পক্ষে খুলে নেওয়া সম্ভব নয়। ট্রাকেও নেওয়া যাবে না; ক্রেন লাগবে।
মফিজুর রহমান জানান, কক্সবাজার রেলপথে দুটি পাত জোড়া লাগতে ফিশ প্লেট নেই। তবে স্লিপারের সঙ্গে যুক্ত করতে ক্লিপ রয়েছে। এসব ক্লিপ ভাঙারির দোকানে বিক্রি করতে চুরি হয়। চুরি ঠেকাতে প্রচেষ্টা রয়েছে। কিন্তু পুরো একটি পাত খুলে নেওয়া অসম্ভব।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে পানিপ্রবাহ পূর্ব দিকের পাহাড় থেকে পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরের দিকে। কিন্তু রেললাইনটি নির্মাণ করা হয়েছে উত্তর-দক্ষিণমুখী। পানি বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইন বন্যায় ডুবে যাওয়া প্রকৌশল ব্যর্থতা।
পানিবিজ্ঞানে অজ্ঞতার কারণে ব্যর্থ হতে যাচ্ছে এ প্রকল্প। যারা নকশা করেছেন, তারা দায়ী। এ রেললাইনের কারণে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। বন্যার কারণে রেললাইনের বিভিন্ন অংশের এমব্যাংকমেন্টে (বাঁধ) মাটি ও ব্যালাস্ট (পাথর) সরে গেছে। এ কারণে বিভিন্ন স্থানে রেললাইন উঁচু-নিচু হয়ে গেছে। প্রকল্প পরিচালক বলেছেন, মাটি ও পাথর ভরাট করলে রেললাইন আবার সোজা হয়ে যাবে। ১০০ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে শুধু সাতকানিয়ার এক থেকে দুই কিলোমিটার অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-