সাহাদাত হোসেন পরশ •
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘর্ষ ও হামলার পেছনে বড় কারণ আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)। ক্যাম্পে আধিপত্য, অপহরণ, মাদক কারবারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রায় খুনাখুনিতে জড়াচ্ছে তারা। টার্গেট করে হত্যা করছে রোহিঙ্গা নেতাদের (মাঝি)।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা আরসার সামরিক কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদকে দীর্ঘদিন ধরে খুঁজছিল। অন্তত ১৫ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত তিনি। তাঁর কাছে আর জে গ্রেনেড রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়। অবশেষে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কিছুদিন আগে আর জে গ্রেনেড পাওয়া গিয়েছিল। একাধিক সূত্র বলছে, ওই গ্রেনেডের উৎস হলেন আরসা নেতা নুর মোহাম্মদ। তাঁর হাত ধরেই গ্রেনেড ক্যাম্পে গিয়েছিল। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরসা সদস্যদের আর্থিক বিষয় দেখভাল করতেন তিনি। প্রত্যেক সদস্যের কাছে অর্থ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল।
সর্বশেষ রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সংঘটিত সিক্স মার্ডারের ঘটনায়ও তাঁর সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
গত জানুয়ারিতে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালীর ৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল আর জে গ্রেনেড। পরে সেটি নিষ্ক্রিয় করা হয়। এ ঘটনায় শরণার্থী শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন একটি মামলা করেছে। গ্রেনেডটি কোন দেশের তৈরি তা লেখা না থাকলেও এটি অত্যাধুনিক এবং বিদেশি বলে নিষ্ক্রিয়করণ ইউনিটের সদস্যরা জানান। সে সময় রোহিঙ্গাদের বসতঘরে শক্তিশালী গ্রেনেডের সন্ধান পায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ক্যাম্পজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে ৮ এপিবিএনের সদস্যরা বসতঘরটি ঘিরে রেখেছিল।
নুর মোহাম্মদের বাবার নাম দিল মোহাম্মদ। ৮ নম্বর ক্যাম্পের ব্লক বিতে তাদের নিয়ন্ত্রণ। নুর মোহাম্মদের কাছে বিভিন্ন ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র থাকার তথ্য ছিল আইনশৃঙ্খল বাহিনীর কাছে। সংঘবদ্ধ একটি গ্রুপকে নিয়ে ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ রাখতে দীর্ঘদিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন তিনি।
গত এক মাসে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একাধিক হত্যাকাণ্ডের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছে। আরসা নেতাদের অস্ত্রের উৎসের অনুসন্ধানও চলছে।
তারা হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে বিভিন্ন আস্তানায় খবর প্রচার করে। এতে ইয়াবা, মাদক-মানব পাচার, স্বর্ণ চোরাচালান, চাঁদাবাজি, অপহরণের পর মুক্তিপণ বাণিজ্য, রোহিঙ্গা কল্যাণ ফান্ডের নামে মাসিক চাঁদা আদায়, সালিশ বাণিজ্য, বিয়েশাদিসহ নানা অনুষ্ঠান থেকে নির্দিষ্ট হারে চাঁদা আদায় করছে আরসা বা আল ইয়াকিনের সশস্ত্র গ্রুপ। যে কোনো তুচ্ছ ঘটনা ঘটলেও সেটিকে পুঁজি করে তারা ত্রাস সৃষ্টি করে চাঁদাবাজি চালায়। এমনকি ঘটে খুনের মতো ঘটনাও। এ ঘটনাগুলোকে কেন্দ্র করে কিছু এনজিও নানা সুযোগ নেয়।
ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার থেকে শুরু করে তুচ্ছ ঘটনায়ও আরসা ব্যবহার করছে দেশি-বিদেশি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র। ফলে এসব অপরাধ কর্মকাণ্ডে আশ্রয় ক্যাম্পগুলোতে নেমে এসেছে অশান্তি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-