কফিল উদ্দিন, রামু •
কক্সবাজারের রামুতে আঁধারমানিক বা কানা রাজার সুড়ঙ্গটি আলোর মুখ দেখলেই গড়ে উঠতে পারে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। সাড়ে ৩০০ বছরের পুরনো এ সুড়ঙ্গ সংস্কার হলেই ওই স্থানটি গড়ে উঠবে দেশের অন্যতম দর্শনীয় স্থান।
রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের উখিয়ারঘোনা নামক দুর্গম এলাকায় রয়েছে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এই আঁধার মানিক। যা স্থানীয়ভাবে কানা রাজার সুড়ঙ্গ (গুহা) হিসেবে পরিচিত।
কক্সবাজারের ইতিহাস গ্রন্থ ছাড়াও পাকিস্তান আমলে প্রকাশিত পাকিস্তান পর্যটন ডিপার্টমেন্ট ট্যুরিস্ট গাইডে রামুর এই আঁধারমানিক বা কানা রাজার সুড়ঙ্গের কথা লিপিবদ্ধ ছিল। দীর্ঘদিন অযত্ন-অবহেলায় পড়ে থাকা এই ঐতিহাসিক সুড়ঙ্গটি ফের উন্মোচন করেছেন রামুর একঝাঁক ছাত্র-যুবক।
স্থানীয় বাসিন্দা আঁধারমানিক গুহার পাশশত এলাকার বাসিন্দা আব্দুল্লাহ জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই কানা রাজার সুড়ঙ্গের বিষয়ে জেনে আসছি। আগে ভয়ে ওখানে কেউ যেত না। সবাই এই গুহাকে আঁধারমানিক নামে চেনে। রামু থেকে একদল লোক নিয়মিত আসা যাওয়ার ফলে এখন স্থানীয়রাও যাওয়া আসা করছে।
সবার কাছে এখন রহস্য কানা রাজার সুড়ঙ্গ বা আঁধারমানিকের ভেতরে কী থাকতে পারে? রামুর অনেক অনুসন্ধানী মানুষ এরই মধ্যে এই গুহার ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেছেন। প্রথম দিকে কক্সবাজার আর্ট ক্লাবের সভাপতি তানভির সরওয়ার এই গুহাটিতে প্রবেশ করেন বলে জানা যায় এবং নানান তথ্য নিয়ে আসেন।
তানভির সরওয়ার জানান, আঁধারমানিকের প্রবেশ মুখ ত্রিভুজাকৃতির মাটি থেকে ২৫ ফুট উঁচু। আনুমানিক ৭০ ফুট গভীর পর্যন্ত অনেক কষ্টে হামাগুড়ি দিয়ে গুহাটিতে প্রবেশ করেছিলেন তিনি। এরপরে ঘরের রুমের মতো বড় খালি জায়গা আছে ভেতরে। সেখান থেকে আরও পথ বের হয়েছে। ভেতরে একটি বাড়ির মতো বিশালাকৃতির জায়গা আছে। এ ছাড়া গুহার ভেতরে মূল্যবান নানান পুরনো ফলক থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আর্ট ক্লাবের সভাপতি আরও জানান, এরই মধ্যে সরকারি প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগে আঁধারমানিক তালিকাভুক্ত হয়েছে। খুব শিগগিরই গুহাটি খনন ও গবেষণা কাজ পরিচালনা করা হবে। তাদের সঙ্গে এই কাজে যোগ দেবেন ডেনমার্কের একদল গবেষক। এই কাজে উন্নত প্রযুক্তির স্ক্যানার ব্যবহার করা হবে।
ইতিহাসবিদ শিরুপন বড়ুয়া বলেন, বর্তমানে যে কানা রাজার গুহা বা আঁধারমানিকের সন্ধান পাওয়া গেছে, সে কানা রাজা হলো চিন পিয়ান। মূলত ১৭৯৮ সালে চিন পিয়ান বর্মি রাজ কর্তৃক পরাজিত হয়ে কয়েক হাজার অনুসারীসহ নাফ নদী পার হয়ে চট্টগ্রামের কক্সবাজার অঞ্চলে উদ্বাস্তু হিসেবে পালিয়ে আসেন। সে থেকে তিনি এখানে বসবাস করেন। জি. ই হারভের লেখা ‘হিস্ট্রি অব বার্মা’ বইয়ে দেখা যায়, আরাকানের দেশপ্রেমিক রাজা চিন পিয়ান ১৮১৫ সালে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় অসুস্থতায় মারা যান। বলা হয়, তিনি এই আঁধারমানিক বা গুহাতে আত্মগোপন করেছিলেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক প্রকাশিত মফিদুল হক সম্পাদিত ‘রোহিঙ্গা জেনোসাইড’ বই থেকে জানা যায়, এই চিন পিয়ানই হলেন কানা রাজা। তার মৃত্যুর পর রামুর স্থানীয় বৌদ্ধ ভিক্ষুরা বর্তমান আঁধারমানিক বা কানা রাজার গুহার কাছেই তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করেন। সে থেকে এটি কানা রাজার সুড়ঙ্গ বা আঁধারমানিক নামে পরিচিত।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-