টেকনাফে রোহিঙ্গাদের সাক্ষাৎ নিলেন মিয়ানমার প্রতিনিধি দল

গিয়াস উদ্দিন ভুলু, কক্সবাজার জার্নাল •


বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে দীর্ঘদিনের সেই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় থাকা রোহিঙ্গাদের সাথে সাক্ষাৎ করতে টেকনাফ এসেছে মিয়ানমারের ১৭ জনের প্রতিনিাধি দল।

১৫ মার্চ (বুধবার) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল সীমান্ত প্রহরী বিজিবি সদস্যদের সার্বিক নিরাপত্তায় টেকনাফ ট্রানজিটিটে পৌছতে সক্ষম।

এরপর সকাল ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত দিকে টেকনাফ স্থলবন্দরের অভ্যন্তরে রেষ্ট হাউসে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় থাকা উখিয়া-টেকনাফে বসবাসরত ২৮ পরিবারের ৯০ জনেরও বেশি নারী-পুরুষ রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে তারা। উক্ত যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া এখনো চলমান রয়েছে। সত্যতা নিশ্চিত করে এ কার্যক্রমটি ৪/৫ দিন চলবে বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।

মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সাথো অতিরিক্তি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনা সামছু দৌজ্জা এবং সরকারি কর্মকর্তসহ ভিবিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, নিরাপত্তা মাধ্যমে বাসে করে লেদা-নয়াপাড়া ক্যাম্পের বসবাসকারী ২৮ পরিবারের ৯০ জন রোহিঙ্গাকে ধাপে ধাপে টেকনাফ স্থলবন্দরের ভেতরে রেস্ট হাউজের পাশে পেন্ডেলে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাদের সেখানে একে একে সবাইকে জিজ্ঞেসাবাদ করা হয়। তালিকার বিষয়টির বাইরেও পুরো প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটির রুট ম্যাপ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে এই বৈঠক মানে প্রত্যাবাসন শুরু নয়।

মিয়ানমার প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠক অংশ নিতে আসা টেকনাফের লেদা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নেতা মো. জাফর জানান, ‘মিয়ানমার থেকে আাসা প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আামদের ডাকা হয়েছে। আমার মতো আরও অনেকে এসেছেন। মূলত মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার বিষয়ে তাদের সঙ্গে আমাদের সাথে আলোচনা হবে।

তিন ঘন্টা মিয়ানমারের প্রতিনিধি দলের সাথে বৈঠকে বসেন টেকনাফের মৌচনি ক্যাম্পের খালেদ হোসেন তার স্ত্রী ইমতিয়াজ। ক্যাম্পে ফিরে এসে খালেদ হোসেন বলেন, ‘মিয়ানমার প্রতিনিধি দল তিন ঘন্টা আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। আমাদের কাছে প্রতিনিধি দল জানতে চান আমরা মিয়ানমারের বাসিন্দা কিনা, সে হিসেবে কি দলিল পত্র আছে? জবাবে, আমরা তাদের কাছে সেদেশে থাকা অবস্থায় আমাদের যেসব দলিলপত্র-পরিবারের পুরনো ছবি রয়েছে সেগুলা তাদের কাছে হস্তান্তর করি।’

তিনি আরো বলেন, ‘মিয়ানমারের গ্রাম কুলার বিলের আশপাশে কিকি গ্রাম রয়েছে সেগুলো বনর্ণা তুলে ধরেছি। তাঁরা (মিয়ানমার প্রতিনিধি দল) সেগুলো ফরমে নোট করে। এছাড়া আমাদের গ্রামের চেয়ারম্যান, মেম্বারের নামের পাশাপাশি শহরের সড়কের নামসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের নাম-দামও বলেছি। মনে হচ্ছে প্রত্যাবাসনের প্রক্রিয়া হিসেবে প্রথমে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

আমরা নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই এতে কোন সন্দেহ নেই, কিন্তু আমাদের রোহিঙ্গা স্বৃকিতি, ভিটে, মাটিসহ নিরাপত্তা নিশ্চিত করলে কেবল নিজ দেশে যেতে প্রস্তুত।

বৈঠকে এক পর্যায়ে বিকেলে অতিরিরিক্ত শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দৌজা জানান, ‘এখনো কাজ চলমান আছে, আগে কাজ শেষ হোক, পরে আমরা বিস্তারিত জানাবো। মিয়ানমার প্রতিনিধি দল এখানে কয়েকদিন থাকবে। কত পরিবারের সাক্ষাৎ নেবে সেটা পরে জানা যাবে। তারা আমাদের কিছু রোহিঙ্গা পরিবারের তালিকা দিয়েছে, আমরাও তালিকা দিয়েছি।

তালিকায় থাকা পরিবারের এক্সটেন্ড সদস্যদের ভেরিফিকেশন করা হচ্ছে মূলত।’প্রতিবার প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হলে ক্যাম্পে প্রত্যাবাসন বিরুধী কার্যক্রম চোখে পড়ে এ ব্যাপারে ক্যাম্প প্রশাসন কোন উদ্যোগ নিয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি আমরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করা আছে, তারা সেটি দেখবে।’

আরআরআরসি কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ আট লাখের বেশি রোহিঙ্গার তালিকা মিয়ানমারের কাছে পাঠিয়েছে। ওই তালিকা থেকে প্রত্যাবাসনের জন্য প্রাথমিকভাবে ১ হাজার ১৪০ জনকে বাছাই করা হয়। এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মিয়ানমারের সম্মতি মিললেও বাকি ৪২৯ জনের ব্যাপারে মিয়ানমারের আপত্তি ছিল।

মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলটি ওই ৪২৯ জন রোহিঙ্গার তথ্য যাচাইয়ের জন্য টেকনাফে এসেছেন। এরই অংশ হিসেবে টেকনাফ স্থলবন্দরের রেস্ট হাউজে রোহিঙ্গাদের তথ্য যাচাই করা হয়।

প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় বিষয় নিয়ে টেকনাফের সু-শীল সমাজের ব্যাক্তিরা অভিমত প্রকাশ করে বলেন, দীর্ঘ ৫ বছর আগে থেকে শুনে আসছি খুব শীঘ্রই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হবে।

অথচ এই প্রক্রিয়াটির বাস্তবায়ন হিসাবে মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকে তাদের নিজ দেশে ফেরত নেয়নি। এবারও এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়ন হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।###

আরও খবর