ইমরান আল মাহমুদ:
নানা জল্পনা কল্পনা শেষে দীর্ঘ ৯ বছর পর নাটকীয়তার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সম্মেলন। তবে কমিটি ঘোষণা করা হবে কেন্দ্র থেকে।
রবিবার(১২ মার্চ) সকাল ১০টা থেকে উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সম্মেলন আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় দুপুর ১২টায়। কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মো. মাইনুল হাসান খান নিখিল প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এদিকে,সম্মেলন চলাকালীন মঞ্চে উঠা নিয়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। প্রায় পাঁচ মিনিট পর্যন্ত উত্তেজনা বিরাজমান থাকলে জেলা সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর ও সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সোহেল এসে নেতাকর্মীদের শান্ত থাকতে বললে উত্তেজনা কমে আসে।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ ফজলে হাসান নাঈম,কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাইফুর রহমান সোহাগ,ঢাকা মহানগর উত্তরের সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন,কেন্দ্রীয় সদস্য গিয়াস উদ্দিন আজম ও ইশতিয়াক আহমেদ জয়।
বক্তব্যের পূর্বে জাতীয় সংগীতের সুরে জাতীয় পতাকা ও সাংগঠনিক পতাকা উত্তোলন করা হয়। সংগীত শেষে পায়রা উড়িয়ে উখিয়া উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক সূচনা করা হয়।
উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মুজিবুল হক আজাদের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সম্মেলনে উদ্বোধক হিসেবে বক্তব্য রাখেন জেলা যুবলীগ সভাপতি সোহেল আহমদ বাহাদুর ও প্রধান বক্তার বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সোহেল। অতিথি হিসেবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নুরুল হুদা সহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ এদিকে,সম্মেলনস্থলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উখিয়া থানা পুলিশের একটি টিম উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নিখিল বলেন,”সারা বাংলাদেশে যুবলীগের নেতৃত্বে যুব সমাজ জেগে উঠেছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আসা সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য। কক্সবাজার, উখিয়া, রামু,মহেশখালী সহ বিভিন্ন উপজেলা তে সম্মেলন হচ্ছে। বিএনপি জামায়াতের আস্তানা খ্যাত এসব অঞ্চলের মানুষ সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে।”
তিনি বলেন,”কক্সবাজারের চারটি সংসদীয় আসন বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ চারটি সংসদীয় আসন যদি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার পক্ষে তথা উন্নয়নের পক্ষে আসে তাহলে বাংলাদেশের সব আসনই পায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তথা উন্নয়নের সরকার। এ অঞ্চলে একটা সমস্যা সেটা হচ্ছে মাদক।
যারা বঙ্গবন্ধুর সৈনিক দাবি করেন স্থানীয় সংসদ,উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আপনাদের একটাই পবিত্র দায়িত্ব টেকনাফ থেকে ইয়াবা সেবনকারী ও ব্যবসায়ীদের বিতাড়িত করুন।”
উখিয়া উপজেলা যুবলীগের বর্তমান কমিটির প্রশংসা করে তিনি আরও বলেন,”আমি দেশের বিভিন্ন জায়গায় সম্মেলনে গিয়েছি। কিন্তু আজকে দেখে মনে হচ্ছে, এটা একটা উপজেলার সম্মেলন নয়,জেলার সম্মেলন। এরকম সুশৃঙ্খল সংগঠিত যুবলীগ খুব কমই দেখেছি।”
দুপুরে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পরপরই পদপ্রত্যাশীরা তাদের নিজেদের জনবল কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সামনে দেখাতে একে একে মিছিল নিয়ে উপস্থিত হন। দ্বিতীয় অধিবেশনে কাউন্সিল করে নেতৃত্ব নির্বাচিত করার কথা থাকলেও তা পরে স্থগিত করা হয়। উখিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় হলরুমে প্রস্তুতি নেওয়া হলেও কিছুক্ষণের মধ্যে হলরুম ত্যাগ করেন কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। ততক্ষণে খবর আসে কেন্দ্র থেকেই উপজেলা যুবলীগের কমিটি ঘোষণা করা হবে। তবে মাদক ব্যবসায়ী,চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যুতায় জড়িত এমন কেউ যুবলীগের কমিটিতে আসতে পারবেনা। যার স্বচ্ছ, সৎ,ত্যাগী তাদের যাচাই-বাছাই করে নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হবে বলে জানা যায়।
পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন। তিনি সভাপতি পদপ্রার্থী। উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ সহ তৃণমূল পর্যায়ে নেতাকর্মীদের মাঝে ইমাম হোসেনের নামটি ঘুরপাক খাচ্ছে। অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দলে ইমাম হোসেনের নামই বরাবরের মতো প্রথমে আসে। তাকে-ই সভাপতি হিসেবে দেখতে চাই তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা এমনটাই প্রত্যাশা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাকর্মীদের। বর্তমান কমিটির সহ সভাপতি গাজী মো. শাহজাহান সভাপতি পদপ্রার্থী হয়েছেন। তৃণমূল থেকে উঠে আসা শাহজাহান গাজী সততা ও ন্যায় নিষ্ঠাবানের দিক দিয়ে সকলের প্রিয়মুখ হয়ে উঠেছেন।
অন্যদিকে উপজেলা যুবলীগের সম্মেলনে সর্বোচ্চ নেতাকর্মী নিয়ে মিছিল সহকারে অংশ নেয় সভাপতি পদপ্রার্থী ইমরুল কায়েস চৌধুরী। তিনি হলদিয়া পালং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে গত ইউপি নির্বাচনে নির্বাচিত হন। উপজেলাজুড়ে তার নামটি সকলের কাছে আলোচনার বিষয়ে রূপ নিয়েছে।
সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ত্যাগী নেতা আনিসুল ইসলাম। হাঁটি হাঁটি পা পা করে তৃণমূল থেকে বেড়ে উঠা আনিসুল ইসলামও সভাপতি পদপ্রার্থী হিসেবে নিজের অবস্থান জানান দিয়েছেন।
অন্যদিকে, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীদের মধ্যে যারা আলোচনায় আছেন তাঁরা হলেন উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মকবুল হোসাইন মিথুন, বশির আহমদ আজাদ, উখিয়া উপজেলা যুবলীগের বর্তমান মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ আমিন শাকিল, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সরওয়ার কামাল পাশা, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি কায়সারুল হক চৌধুরী রুবেল, মকসুদ চৌধুরী, মিজানুর রহমান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-