রহমান মিজান •
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনায় গত এক বছরে প্রায় হারিয়েছে ৫০০ জনেরও বেশি মানুষ। পাশাপাশি অঙ্গহানি ও পঙ্গুত্বের সংখ্যা পেরিয়েছে হাজারেরও ওপরে। এই ১৫০ কিলোমিটারের এক লেনের সড়কটির ১৫টি স্পট মৃত্যুফাঁদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সর্বশেষ গত ৪ মার্চ কক্সবাজারের চকরিয়ায় একটি যাত্রীবাহী লেগুনার সঙ্গে বিজিবি বাসের সংঘর্ষে তিন যাত্রী নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন আরও ৬ জন।
হাইওয়ে পুলিশ, প্রশাসন ও সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপ্রশস্ত সড়ক ও শতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক দূর্ঘটনার অন্যতম কারণ। এছাড়া সড়ক লবণের পানি ও মাটির মিশ্রণে পিচ্ছিল হয়ে যাওয়া, দিকনিদের্শনাহীন বাঁক, অদক্ষ চালক, পেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো, ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন সড়কে নামানো, চলন্ত অবস্থায় বাসে যাত্রী ওঠানামা করা, যানবাহন ক্রস করার সময় গতি না কমানো, সংকেত না দিয়ে ওভারটেকের চেষ্টায় দুর্ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।
দেশের প্রধান পর্যটননগরী কক্সবাজার। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা সেখানে ঘুরতে যান। এছাড়া বিদেশি পর্যটকরাও ব্যবহার করে এই সড়ক। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক চারলেনে উন্নীত করার দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু কিছুতেই চার লেনের কাজ বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
হাইওয়ে পুলিশের মতে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটিতে ১৫টি দুর্ঘটনা কবলিত স্পট রয়েছে। এসব স্পটের মধ্যে রয়েছে চন্দনাইশের বাদামতল, বান্যাপুকুর পাড়, কলঘর, দেওয়ান হাট, পাটানানীপোল, নয়াখালের মুখ, আধারমার মাজার, সাতকানিয়ার কেরানী হাট, লোহাগাড়ার বার আউলিয়া কলেজ মোড়, রাজঘাটা, লোহার দীঘিরপাড়, হাজী রাস্তার মাথা, চিরিঙ্গা, ফাঁসিয়াখালীর মইগ্যারমারছড়া, জাহিল্যার উঠানসহ বেশ কিছু এলাকা।
পটিয়া থেকে লোহাগাড়া ও চকরিয়া থেকে নাপিতখালী পর্যন্ত মহাসড়কের অবস্থা খুবই বিপজ্জনক। এই এলাকায় সড়ক যেমন সরু, তেমন রয়েছে শতাধিক বিপজ্জনক বাঁক। যেখানে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। প্রতিবছর কমপক্ষে ৫০০ জনের বেশি মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। নিঃস্ব হচ্ছে শত শত পরিবার। চকরিয়া ও পেকুয়া থেকে লবণবাহী ট্রাকের পানি আর ধুলোয় জমাট বেঁধে সড়ক হয়ে ওঠে তেলতেলে। এতে প্রয়োজনীয় মুহূর্তে ব্রেক করলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটায়।
জানা গেছে, নিষিদ্ধ হলেও পুলিশের নাকের ডগায় এই সড়কে চলাচল করছে অটোরিকশা। এসব হালকা গাড়ির চালকরা অনেক সময় ভারী যানবাহনের সঙ্গে পাল্লা দেয়। মারাত্মক ঝুঁকি নিয়ে ওভারটেক করে, কখনও বড় যানবাহনকে সাইড না দিয়ে সড়কের মাঝখান দিয়ে চলাচল করে। ফলে ঘটে ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মো. এরফান বলেন, ‘চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে প্রয়োজনের তুলনায় গাড়ির সংখ্যা বেশি। আর হাট-বাজার, স্কুল-কলেজ থেকে শুরু করে সব বড় বড় প্রতিষ্ঠান রাস্তার পাশে। এর ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে।’
তিনি বলেন, ‘অনেক ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে সতর্কচিহ্ন নেই। ৪০-৫০ কিলোমিটারের বেশি গতি এই সড়কে অতি ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু চালকরা সেসব মানেন না। তাদের অসচেতনতাও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ। দেখা যাচ্ছে, প্রায় দুর্ঘটনা ঘটছে ভোরে। বিশেষ করে ৫টা থেকে ৭টায় বেশি দুর্ঘটনা ঘটছে। চালকরা নির্ঘুম গাড়ি চালান। এরপর ভোরে যখন তাদের চোখে আলো পড়ে তখন দেখতে সমস্যা হয়। আর এই সময়টাতেই তারা দুর্ঘটনা ঘটান।’
এদিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই মহাসড়কে প্রতিদিন বৈধ বাস-ট্রাক (এসি-নন এসি লোকাল বাস ৫ শতাধিক, ট্রাকসহ অন্যান্য পিকআপ মিলে আরো ৫০০) চলে প্রায় ১ হাজারের মতো। অবৈধ গাড়ি চলে ২ হাজারের (অনুমোদনবিহীন নছিমন-করিমন, চার চাকার ট্রলি, ইজিবাইক সিএনজি, চার চাকার খোলা পিকআপ) মতো। সবমিলে প্রতিদিন ৩ হাজার গাড়ি চলাচল করে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-