তাজুল ইসলাম পলাশ •
দেশে ভোক্তা পর্যায়ে তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) দাম কমেছে। গত বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) বিইআরসি সচিব ব্যারিস্টার মো. খলিলুর রহমান খান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভোক্তা পর্যায়ে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ৭৬ টাকা কমিয়ে এক হাজার ৪২২ টাকা নির্ধারণ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। যা গত এক মাস আগে এক হাজার ৪৯৮ টাকা ছিল।
কিন্তু কক্সবাজারে বিইআরসির বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত মূল্যেও মিলছেনা এলপি গ্যাস। ১২ কেজি প্রতিটি সিলিন্ডারের দাম নেওয়া হচ্ছে আগের নিয়মে। ১৬০০ থেকে ১৬৫০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে ১২ কেজি এলপির দাম। যা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি।
লাগামহীন নৈরাজ্যর কথা অকপটে স্বীকারও করলেন সংশ্লিষ্টরা। বলছেন, সরকারি এলপি গ্যাসের দাম কমেছে। বেসরকারি গ্যাসের দাম আগের নিয়মে। এজন্য আমরা সরকারি এলপি দোকানে রাখিনা।
কক্সবাজার জেলা এলপিজি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরওয়ার আলম দৈনিক কক্সবাজার বলেন, “কিছু কিছু এলাকায় দাম বেশি নিচ্ছে শুনেছি। এজন্য আজ (৫ মার্চ) মিটিং ডেকেছি। সেখানে আমরা একটি তালিকা করে দেবো। তালিকার বাইরে গ্যাস বিক্রি আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেবো।”
মিটিং’র কোনো কথা জানেনা বলে জানান একই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক গোলাম আরিফ লিটন। বলেন,”১৬০০ টাকা করে এলপিজি বিক্রি হচ্ছে। বিইআরসি তো দাম নির্ধারণ করেছেন ১৪২২ টাকা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “এটা সরকারি এলপি’র দাম। আমরা সরকারি গ্যাস বিক্রি করিনা। বেসরকারি গ্যাসের দাম আগের থেকে কিছু-টা কম দামে বিক্রি করছি। বসুন্ধরা, ওমেরা, টোটাল, বেক্সিমকোর দাম সবসময় বেশি। কারণ ভোক্তা পর্যায়ে এসব ব্রান্ডের চাহিদা বেশি। অন্য গ্যাসের চেয়ে এগুলোর ৫০ টাকা বাড়তি থাকে। খুচরা ব্যাবসায়ীরা এসব গ্যাস বিক্রি করছে ১৬০০ টাকা এবং অন্য ব্রান্ডের গ্যাস বিক্রি করছে ১৫৫০ টাকা বলে জানান তিনি।”
কক্সবাজারে জেলায় ১২ কেজি এলপিজি’র দৈনিক চাহিদা আছে ৮০ হাজারের মত। সদরে দৈনিক এলপিজি সিলিন্ডারের চাহিদা আছে ৫০ হাজার। তবে এই চাহিদা নির্ভর পর্যটকের ওপর। ছুটির দিনে অনেক সময় ৬০ হাজার ছাড়িয়ে যায়।
শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ১৬০০ থেকে ১৬৫০ টাকা এমনকি এই দামের চেয়েও বেশি মূল্য বিক্রি হচ্ছে ১২ কেজি হচ্ছে এলপিজি।
শহরের কলাতলী এলাকায়, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, চন্দ্রীমা আবাসিক, টেকপাড়া, ঘোনার পাড়া, বৈদ্যঘোনা, নুনিয়া ছড়া, লারপাড়া, বাস টার্মিনাল, জেল গেইট, বাংলা বাজার, লিংক রোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ১৬০০ থেকে ১৬৮০ টাকায় ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে। তবে শহরের বাহারছড়াসহ কয়েকটি এলাকায় খুচরা ব্যাবসায়ীরা ১৫৫০ থেকে ১৫৭০ টাকায় ১২ কেজি এলপি বিক্রি করতে দেখা যায়।
বাহারছড়া বাজারের কাজল এন্টারপ্রাইজের প্রোপ্রাইটর কাজল জানান, “প্রতিটি ১২ কেজি এলপি ১৪৬০ টাকা করে কিনতে হয়। ১৫৫০ টাকা করে বিক্রি করছি। ১২৮ টাকা বেশি কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গাড়ি ভাড়া ও মজুরি খরচ যোগ করতে হয়।”
গ্রাহকরা বলছেন, “১৬০০ টাকার নিচে কোন এলপি পাওয়া যাচ্ছনা। ৫’শো গজের ভেতরে হলে ৫০ টাকা বাড়তি দিতে হয় এবং ভবনের ৫ম তলায় হলে বাড়তি ১০০ টাকা গুণতে হচ্ছে।”
কয়েকজন গ্রাহক ও খুচরা বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, “সিলিন্ডারগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সিল লাগানো হলেও তা কাজে লাগছে না। সরকারিভাবে বাজারজাতকৃত বোতলগুলোর গায়ের সিলমোহর ও স্টিকার দ্রুত মুছে ফেলা হয়। ফলে বোঝা যায় না কোনটা সরকারি কোনটা বেসরকারি। কারণ একই দোকানে দুই ধরনের বোতলই বিক্রি হয়। এর সুযোগে দোকানিরা সরকারি ও বেসরকারি উভয় বোতল একই দামে বিক্রি করে।”
এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সরকারিভাবে বোতলজাত সিলিন্ডার বাজারে খুব কমই সরবরাহ করা হয়। বেশিরভাগ এলপিজি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছে সরাসরি বিক্রি করা হয়। ফলে এলপিজির দাম নির্ধারণে সরকারি ভর্তুকি কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না।
এলপিজি’র সাথে সংশ্লিষ্ট ও ডিলারদের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৬৫০- ৭০০ টির মতো গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান আছে। যারমধ্যে সদরে ও খুরুশকুলে আছে ২৪২ টি। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের নিজস্ব নাম ব্যবহার করে গ্যাস সিলিন্ডার বাজারজাত করে আসছে। তারমধ্যে ১৮-২১ টি মোড়কে’র এলপিজি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সরকারিভাবে টোটাল ছাড়া অন্যসব এলপি দেশের বিভিন্ন কোম্পানির নামে।
যার মধ্যে, বেক্সিমকো, টোটাল (সরকারি), বিএম এনার্জি, যমুনা, ওমেরা, জেএমআই, পেট্রোম্যাক্স, পদ্মা, ফ্রেশ, ডেলটা, আই গ্যাস, ই উ নি গ্যাস, ইউনিভার্সেল, ইউরো, বিন হাবিবসহ মোট ২১টির মতো এলপি গ্যাস রয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন থেকে ভোক্তা অধিকার কার্যালয়ে নেই দায়িত্ব পালন করার মতো কেউ। চট্টগ্রাম থেকে মাঝেমধ্যে কক্সবাজার অফিস ঘুরে যান চট্টগ্রামে দায়িত্বরতরা।
গত জানুয়ারি মাসে কক্সবাজার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সপরিচালক আনিসুল ইসলামকে। তাঁর দায়িত্বের গত ১৪ মাস পার হয়ে গলেও তিনি দুই কক্সবাজারে আসেন। এরমধ্যে তিনি শুধু একবার একটি রেস্তোরাঁয় অভিযান চালিয়েছেন। কথা হলে তিনি বলেন, “চট্টগ্রাম শহর অনেক বড়। এছাড়া লোকবলও কম। দায়িত্ব পেলেও ডিডি স্যারের অনুমতি ছাড়াতো আর যাওয়া যায়-না।”
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-