কক্সবাজারে এলপি গ্যাসের দামে নৈরাজ্য

তাজুল ইসলাম পলাশ •

গ্যাস সিলিন্ডার (ফাইল ছবি)

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের বেঁধে দেওয়া নির্ধারিত মূল্যেও মিলছেনা এলপি গ্যাস। ১২ কেজি প্রতিটি সিলিন্ডারের দাম নেওয়া হচ্ছে ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত। যা নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। এই চিত্র এখন শহরের সব জায়গায়। তবে বাহারছড়া এলাকায় কিছুটা কম দামে মিলছে গ্যাস।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিলার ও খুচরা বিক্রেতারা দাম আদায় করছেন নিজের খেয়াল-খুশি মতো। প্রতিটি এলপিজি বিক্রি করা দোকানে নির্ধারিত মূল্যতালিকা প্রদর্শনেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু খুচরা বিক্রেতা পর্যায়ে নির্ধারিত দাম ও মূল্য প্রদর্শনের নির্দেশনা দুটোই মানা হচ্ছে না।

গ্রাহকরা বলছেন, ১৭০০-১৮০০ টাকার নিচে কোন এলপি গ‍্যাস সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছনা। তবে সদরের বাহারছড়া এলাকায় সর্বোচ্ছ ১৬২০ টাকার মধ্যে এলপিজি পাওয়া যাচ্ছে। যা অন্য এলাকার চাইতে কম। তবে এক্ষেত্রে ১০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি নেওয়া হচ্ছে বলে জানালেন খুচরা ব্যবসায়ীরা।

বাহারছড়া বাজারের কাজল এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী কাজল  বলেন, বাহারছড়া এলাকায় ১৬’শ টাকার মধ্যে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে। তার সাথে ৫০ টাকা পরিবহন যোগ করতে হয়। বিশেষ করে চার-পাঁচ তলা ভবন হলে এই খরচটা নিতে হয়।

জেলা এলপিজি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি সরওয়ার আলম বলেন, কিছু কিছু জায়গায় বাড়তি দাম নেওয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। অতিরিক্ত দাম যাঁরা নিচ্ছে তাদের দোকানে অভিযান চালানো প্রয়োজন। কারণ কয়েকজনের কারণে সকল ব্যবসায়ীর বদনাম হচ্ছে। তিনি বলেন, কোম্পানি থেকে বের হওয়ার পর গ্রাহকদের কাছে যাওয়া পর্যন্ত পরিবহন খরচ, মজুরি, দোকান ভাড়া ইত্যাদি খরচ পড়ে।

এদিকে শহরের কলাতলী এলাকায়, মেরিন ড্রাইভ সড়ক, চন্দ্রীমা আবাসিক, টেকপাড়া, ঘোনার পাড়া, বৈদ্যঘোনা, নুনিয়া ছড়া, লারপাড়া, বাস টার্মিনাল, জেল গেইট, বাংলা বাজার, লিংক রোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ১৭০০ থেকে ১৮০০ টাকায় ১২ কেজি সিলিন্ডার গ্যাস বিক্রি হচ্ছে বলে জানা যায়।

কয়েকজন গ্রাহক ও খুচরা বিক্রেতার সাথে কথা বলে জানা যায়, সিলিন্ডারগুলোতে সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর সিল লাগানো হলেও তা কাজে লাগছে না। সরকারিভাবে বাজারজাতকৃত বোতলগুলোর গায়ের সিলমোহর ও স্টিকার দ্রুত মুছে ফেলা হয়। ফলে বোঝা যায় না কোনটা সরকারি কোনটা বেসরকারি। কারণ একই দোকানে দুই ধরনের বোতলই বিক্রি হয়। এর সুযোগে দোকানিরা সরকারি ও বেসরকারি উভয় বোতল একই দামে বিক্রি করে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সরকারিভাবে বোতলজাত সিলিন্ডার বাজারে খুব কমই সরবরাহ করা হয়। বেশিরভাগ এলপিজি সরকারি বিভিন্ন সংস্থার কাছে সরাসরি বিক্রি করা হয়। ফলে এলপিজির দাম নির্ধারণে সরকারি ভর্তুকি কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না।

এলপিজি’র সাথে সংশ্লিষ্ট ও ডিলারদের দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় ছোট-বড় মিলে প্রায় ৬৫০- ৭০০ টির মতো গ্যাস সিলিন্ডারের দোকান আছে। যার মধ্যে সদরে ও খুরুশকুলে আছে ২৪২ টি। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের নিজস্ব নাম ব্যবহার করে গ্যাস সিলিন্ডার বাজারজাত করে আসছে। তারমধ্যে ১৮-২১ টি মোড়কে’র এলপিজি বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। সরকারিভাবে টোটাল ছাড়া অন্যসব এলপি দেশের বিভিন্ন কোম্পানির নামে।

যার মধ্যে, বেক্সিমকো, টোটাল (সরকারি), বিএম এনার্জি, যমুনা, ওমেরা, জেএমআই, পেট্রোম্যাক্স, পদ্মা, ফ্রেশ, ডেলটা, আই গ্যাস, ই উ নি গ্যাস, ইউনিভার্সেল, ইউরো, বিন হাবিবসহ মোট ২১টির মতো এলপি গ্যাস রয়েছে।

শহরের, বাহারছড়া, রুমালিয়াছড়া, নতুন বাহারছড়া, আলির জাহান, কলাতলী এলাকায় খুচরা পর্যায়ের একাধিক দোকান ঘুরে এলপিজি সিলিন্ডারের কোন সংকট দেখা যায়নি। প্রতিটি দোকানে থরে থরে সাজানো আছে গ্যাসভর্তি সিলিন্ডার। খুচরা ব্যবসায়ীরা জানালেন, একটি গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার বিক্রি করলে ২০-৫০ টাকার ব্যবসা হয়।
রাস্তার মাথা জননী এন্টারপ্রাইজ’র (ডিলার) মোঃ বাপ্পি বলেন, ১২ কেজি এলপিজি ১৬০০ টাকার ওপরে বিক্রি করবে কেন? হয়তো ৫০ টাকা পরিবহন খরচ নিতে পারে।

খুরুশকুল এন্টারপ্রাইজ’র মোহাম্মদ ওয়াহিদ বলেন, বিইআরসির নির্ধারিত দামের বাইরে বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই।

চলতি মাসের ২ ফেব্রুয়ারী ১২ কেজির সিলিন্ডার ১ হাজার ৪৯৮ টাকায় বিক্রি জন্য মূল্য নির্ধারণ করেছে বিইআরসি। এতে দেখা যাচ্ছে ভোক্তা পর্যায়ে এলপিজির দাম একলাফে ২৬৬ টাকা বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)।

সংস্থাটি প্রতি মাসেই এলপিজির দাম নির্ধারণ করে। তবে তা সব জায়গায় কার্যকর হতে দেখা যায় না। জানুয়ারি মাসে যেখানে ১২ কেজি সিলিন্ডারের দাম ছিল ১ হাজার ২৩২ টাকা, এখন তা বেড়ে হলো ১ হাজার ৪৯৮ টাকা। একইভাবে বেড়েছে অটোগ্যাসের দামও।

এদিকে দীর্ঘদিন থেকে ভোক্তা অধিকার কার্যালয়ে নেই দায়িত্ব পালন করার মতো কেউ। চট্টগ্রাম থেকে মাঝেমধ্যে কক্সবাজার অফিস ঘুরে যান চট্টগ্রামে দায়িত্বরতরা। গত জানুয়ারি মাসে কক্সবাজার অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয় চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আনিসুল ইসলামকে। কথা হলে তিনি বলেন, চট্টগ্রামে কাজের পরিধি অনেক বেশি। এছাড়া লোকবল নেই। এজন্য কক্সবাজার যাওয়া সম্ভব হচ্ছেনা।

আরও খবর