বিশেষ প্রতিবেদক •
বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৬৩ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য আর ১ হাজার ৩৬৪ মিটার গড় প্রস্থের নদী নাফ। কক্সবাজারের টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়ন থেকে শুরু করে সাবরাং ইউনিয়নের শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত এ নদীর পাড়ের প্রায় ৭ হাজার মানুষের জীবন-জীবিকা ও আয়ের উৎস ছিল নদী থেকে মাছ ধরা। কিন্তু টানা ৫ বছর ধরে বন্ধ আছে সেই নদীর মাছ ধরা।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এ নদী দিয়ে বানের পানির মতো অনুপ্রবেশ শুরু করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা। ঠিক তার পাঁচ দিন পর ৩০ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত দুই মাস নাফনদীতে মাছ ধরা বন্ধ ঘোষণা করে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও মাদক পাচার রোধে এমন সিদ্ধান্ত। কিন্তু এ ঘোষণার ৫ বছর পরও নাফনদীতে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা রয়ে গেছে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির টেকনাফ উপজেলা সভাপতি আব্দুল সালাম জানিয়েছেন, এ ৫ বছরে নাফনদীর উপর নির্ভরশীল জেলেদের পরিবারে নেমে এসেছে নরক যন্ত্রণা। অনেকেই পেশা ছেড়ে জীবনযাপনের ভিন্ন পন্থাও খুঁজছেন। অনেকেই ঋণের কারণে স্বপরিবারে আত্মগোপনে গেছেন।
তিনি জানান, মাদক পাচার ও রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের কারণ দেখিয়ে মাছ ধরা বন্ধ রাখলেও নাফনদী দিয়ে প্রতিদিন ইয়াবা, আইস নামের মাদকও উদ্ধার হচ্ছে। বাংলাদেশের জেলেরা মাছ ধরতে না পারলেও মিয়ানমারের জেলে নদীতে মাছ ধরছেন। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের কাছে অসংখ্যবার আবেদন করেও কোন ফল পাওয়া যায়নি।
মাছ ধরা বন্ধ থাকলেও নাফনদী দিয়ে মাদক পাচারের ভয়াবহতা দেখা যায় জেলা পুলিশের এক পরিসংখ্যানে। যেখানে ২০২২ সালে এক বছরে নাফনদী দিয়ে পাচার হয়ে আসা ৯০০ কোটি টাকার বেশি ইয়াবা ও আইস উদ্ধার করেছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। যেখানে মোট ৩ কোটির কাছা-কাছি ও ৫০ কেজি আইস রয়েছে। এসব অভিযানে ২৩১০ টি মামলায় আটক হয়েছে ৩০৯৩ জনকে। এর আগে ২০২১ সালে টেকনাফে ২৮৫ কোটি টাকার মাদক, স্বর্ণ ও বিভিন্ন চোরাই পণ্য জব্দ হয়েছে।
প্রতিনিয়ত মাদক পাচার অব্যাহত থাকার পরও মাছ ধরা বন্ধ রাখার বিষয়টি বিস্ময়কর মন্তব্য করেছেন টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাশেদ মাহমুদ আলী। তিনি জানান, মাছ ধরে সংসার চালানো জেলেদের কথা বিবেচনা করে নাফনদীতে মাছ ধরা খুলে দেয়া জরুরী। সীমান্তে কঠোর নজরধারী, জেলেদের সচেতনতায় মাদক পাচার রোধ করা সম্ভব।
টেকনাফ উপজেলা জেষ্ঠ্য মৎস্য কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন জানিয়েছেন, টেকনাফ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলে আড়াই হাজারের বেশি। এর বেশি সংখ্যক জেলে রয়েছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও মাদক পাচার বন্ধে নাফনদীতে মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু সেই দুই মাসের আদেশ পরে আর বাড়ানো হয়েছে কি না, কেউ জানে না। কিন্তু এখনও মাছ ধরা বন্ধ রেখেছে।
টেকনাফের ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার জানিয়েছেন, নাফনদীতে মাছ ধরা বন্ধ রয়েছে। মৎস্যজীবীদের পুনর্বাসনের বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. কামরুজ্জামান জানান, তিনি টেকনাফে আসার আগে থেকেই নাফনদীতে মাছ ধরা বন্ধ আছে। ওটা কয় দিনের নিষেধাজ্ঞা ছিল দেখতে হবে। দুই মাসের হলে কেন এখনো চালু হয়নি তা খতিয়ে দেখে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-