কক্সবাজার নিয়ে নতুন মহাপরিকল্পনা কতদূর?

  • মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে বড় চ্যালেঞ্জ হবে অপরিকল্পিত স্থাপনা

মনোতোষ বেদজ্ঞ •

কক্সবাজারের পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে নতুন করে ‘মহাপরিকল্পনা’ বা ‘মাস্টারপ্ল্যান’ তৈরি করছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)। প্রায় ৬৯০ দশমিক ৬৭ বর্গকিলোমিটার এলাকা ঘিরে হবে এই মাস্টারপ্ল্যান। মাস্টারপ্ল্যানটি তৈরিতে ব্যয় হবে ১৭৪ কোটি টাকা।

কউক জানিয়েছে, ইতোমধ্যে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প প্রস্তাবটি অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এরপর গণপুর্ত মন্ত্রণালয় থেকে অফিস আদেশ পাওয়া গেলেই মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের নানা কাজ শুরু হবে। তবে যা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে অপরিকল্পিত স্থাপনা।

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ও নগরবিদদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পর্যটন নগরী কক্সবাজারের পরিকল্পিত উন্নয়নের লক্ষ্যে গত ২০১৩ সালে প্রণীত হয় একটি মাস্টারপ্ল্যান। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে বাস্তবতার নিরিখে সেটি ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় এবং এতে অঞ্চলভিত্তিক বিশদ পরিকল্পনা না থাকায় তা পরে কার্যকর হয়নি। পরিকল্পিত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন দেখা দেয় নতুন মাস্টারপ্ল্যানের। এমন প্রেক্ষাপটে জেলার ৬৯০ দশমিক ৬৭ বর্গকিলোমিটার অধিক্ষেত্র ঘিরে নতুন ‘মাস্টারপ্ল্যান’ প্রণয়নের উদ্যোগ নিয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)।

ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউশনের কক্সবাজার উপকেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এম বদিউল আলম বলেন, ‘মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগোষ্ঠির সাথে আলোচনা করে তাদের আশা-আকাঙ্খাকে যেন প্রাধান্য দেওয়া হয়। জনপ্রতিনিধি, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, রাাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং যারা দেশকে নিয়ে ভাবেন তাদের সাথে বসতে হবে। এরপরেই মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করা উচিত।’

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান কমোডর মোহাম্মদ নুরুল আবছার বলেন, ‘নতুন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের লক্ষ্যে ১৭৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব ইতোপূর্বে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। যেটি অনুমোদন দিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। এখন গণপূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে অফিস-আদেশ এলেই নতুন মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের নানা কাজ শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে কউক। যেখানে যুক্ত থাকবে দেশী-বিদেশী দক্ষ জনবল।

স্থানীয় লোকজন, জেলার সকল প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় সভার পরে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবতার নিরিখে চুড়ান্ত করা হবে মাস্টারপ্ল্যান। এ প্রকল্পের মেয়াদকাল নির্ধারণ করা হয়েছে দুই বছর। মাস্টারপ্ল্যানটি চূড়ান্ত হওয়ার পর সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তর থেকে অনুমোদনের পর গেজেট আকারে প্রকাশ হতে সময় লাগবে আগামী ২০২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত। ’

তিনি বলেন, ‘মাস্টারপ্ল্যানটি চূড়ান্তভাবে প্রণয়ন হলে বদলে যাবে কক্সবাজারের উন্নয়নের চিত্র। এতে কোথায় কি ধরণের স্থাপনা নির্মিত হবে তার সবকিছুরই সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকবে।’

কক্সবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায় ইতোমধ্যে অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠেছে বহু স্থাপনা। যা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তবে এ ক্ষেত্রে কঠোরতা না দেখিয়ে ‘মধ্যপন্থা’ অবলম্বন করা হবে বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান।

তিনি বলেন, আগে যখন কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ছিল না তখন জেলা পরিষদ বা পৌরসভা থেকে অনুমোদন নিয়ে লোকজন বাড়িঘর করে ফেলেছে। তখন জলবায়ু পরিবর্তন বা ভূমিকম্প- এসব বিষয় নিয়ে তেমন কোন সচেতনতাও তৈরি হয়নি। বিকল্প কোন জায়গাায় স্থানান্তরের সুযোগ যদি না থাকে তাহলে এতগুলো মানুষের সম্পদ ধ্বংস করা চ্যালেঞ্জিং। এ ক্ষেত্রে কিছুটা সমন্বয় করে, তারাও যেন আইনের ভেতরে চলে আসে, আর যেখানে যেখানে বেশি ব্যত্যয় ঘটেছে ওটাকে যেন সমন্বয় করে এবং তাদের স্বার্থটাও যেন দেখা হয়।’

কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মাস্টারপ্ল্যান তৈরী কাজের অন্তবর্তীকালীন উন্নয়নকাজ থেমে থাকবে না। মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের বিষয়টি মাথায় রেখেই বর্তমান ভবনের নকশার অস্থায়ী অনুমোদন দিচ্ছে কউক। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে মাস্টারপ্ল্যানটি গেজেট আকারে প্রকাশের পর।

আরও খবর