সায়ীদ আলমগীর, কক্সবাজার •
তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ২৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে। এ কয়দিনে আড়াই লাখের বেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করেন। এতে খুশি চার শতাধিক হোটেল-মোটেল, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন বিপণিবিতান মালিকরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২৩ ডিসেম্বর থেকে টানা তিনদিনের ছুটিতে পর্যটকে মুখর হয়ে ওঠে কক্সবাজার। আগের রাত বৃহস্পতিবার থেকে শহরের হোটেল-মোটেল পর্যটকরা আসতে শুরু করেন। শুক্রবার সকাল থেকে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে পর্যটকের উপচেপড়া ভিড় চোখে পড়ে।
করোনা দুর্যোগ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও মিয়ানমারের আভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে পর্যটন সংকট দেখা দেয়। এদিকে নাব্য সংকটের দোহাই দিয়ে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌরুটে জাহাজ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ রুটে দুটি জাহাজ চলাচল করলেও এর ব্যয়ভার সাধারণের নাগালের বাইরে। ফলে কক্সবাজার বেড়াতে এসে যারা সেন্টমার্টিন ভ্রমণ তালিকায় রাখেন তাদের অনেকে কক্সবাজার বেড়ানো স্থগিত রাখেন। সে ধাক্কা কাটিয়ে এবার কক্সবাজারে পর্যাপ্ত পর্যটক এসেছেন।
ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) আনোয়ার মোস্তফা বলেন, হতাশায় আলো দেখিয়েছে বড়দিনের ছুটি। সাপ্তাহিক ছুটির সঙ্গে বড়দিনের ছুটির সুযোগকে কাজে লাগাতে ভ্রমণপ্রেমীরা কক্সবাজার এসেছেন। এ তিনদিনের জন্য অনেকে আগাম বুকিং দিয়ে উঠেন হোটেল-মোটেল ও কটেজে। ব্যয়বহুল জেনেও অনেকে আগাম টিকেট কেটেছে কক্সবাজার-সেন্টমার্টিন নৌরুটে চলা কর্ণফুলী ও বার আউলিয়া জাহাজে। ফলে সেন্টমার্টিনেও এবারে আগাম কিছু বুকিং পেয়েছে সেখানকার হোটেল ব্যবসায়ীরা।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, টানা বন্ধে আমাদের আশা ছিল কক্সবাজারে ৪-৫ লাখ পর্যটক আসবেন। কিন্তু তা হয়নি। এসেছেন আড়াই লাখের মতো পর্যটক। এরপরও আমরা আনন্দিত।
তারকা হোটেল হোয়াইট অর্কিডের জিএম রিয়াদ ইফতেখার বলেন, অতীতে পুরো ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে প্রতিদিন কমবেশি পর্যটক কক্সবাজারে অবস্থান করতো। এ বছর তার ব্যতিক্রম। এরপরও বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলে টানা তিনদিনে ছুটিতে কক্সবাজারে গড়ে এক লাখ পর্যটক উপস্থিতি ছিল। কিন্তু রোববার সেটি কমে এসেছে।
কক্সবাজার রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ডালিম বলেন, সমিতির তালিকাভুক্ত শতাধিকসহ কক্সবাজার পর্যটন জোনে চার শতাধিক রেস্তোরাঁ রয়েছে। পর্যটক শূন্যতায় সবাই দুর্বিষহ দিন কাটিয়েছি। গত তিনদিন সবার কমবেশি ব্যবসা হয়েছে।
কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, পর্যটনে আয়ের হিসেব হয় জনপ্রতি খরচের ওপর। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকরা সবধরনের সেবা গ্রহণে গড়ে ১০ হাজার টাকা খরচ করেন। সেই হিসেবে তিনদিনে ২৫০ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।
তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইস লিমিটেডের পরিচালক আবদুল কাদের মিশু বলেন, কক্সবাজারে পর্যটক থাকলে ব্যবসায়ীরা উৎফুল্ল থাকে। ব্যবসা ভালো থাকলে ব্যাংক ঋণের কিস্তিসহ নানা দেনা শোধ করতে পারি।
ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার জোনের এসপি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ছাড়া তিনদিনের টানা ছুটি শেষ করতে পেরেছি। এ তিনদিন পর্যটকদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তৎপর ছিলেন।
জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, পর্যটন নগরী হিসেবে কক্সবাজারে আগত সবাইকে নিরাপদ রাখা আমাদের দায়িত্ব। আমরা সেভাবেই পর্যটক নিরাপত্তায় সতর্ক রয়েছি।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ান বলেন, আগতদের সুবিধার্থে কলাতলির ডলফিন মোড়ে তথ্য সেবাকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। হয়রানি বন্ধে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে একাধিক টিম মাঠে ছিল।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-