শিপন পাল •
শহরের বর্জ্য দিয়ে ভরাট করার ফলে বাকঁখালী নদী একদিকে মারাত্মক ভাবে দুষিত হচ্ছে অন্যদিকে অবৈধভাবে দখল করা হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামীতে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে জেলার প্রধান এই নদী। তাই বাকঁখালীর দুষণ ও দখল রোধে সকলকে দলমত নির্বিশেষে এগিয়ে আসতে হবে।
গতকাল সন্ধ্যায় কক্সবাজার শহরে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায়ও এ আহবান জানানো হয়েছে।
উল্লেখ্য, বাঁকখালীর দক্ষিণের তীর ঘেঁষে ৬নং জেটিঘাট, কস্তুরাঘাট, নুর পাড়া, নুনিয়ারছড়া, টেকপাড়া ও মাঝির ঘাট এলাকায় প্রায় শ’ একর বাঁকখালীর তীর অবৈধ দখলে রয়েছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়। এসব অবৈধ বাঁকখালীর তীর দখলকারীদের বিরুদ্ধে কোন ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ না করে উপরন্তু নতুন করে বাঁকখালী দখলে মেতে উঠায় স্থানীয়দের ক্ষোভ রয়েছে দীর্ঘদিনের।
এদিকে অর্থের অভাবে বাঁকখালী নদী দখল করা অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা যাচ্ছে না বলে ২০১৬ সনের ৮ জুন জানিয়েছিলেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত ‘বাঁকখালী নদী সুরক্ষা ও পরিবেশ সংরক্ষণ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে জেলা প্রশাসক প্রয়োজনীয় তহবিল না থাকায় বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অপরাগতার বিষয়টি তুলে ধরেন। ওইসময় জেলা প্রশাসক বাঁকখালী নদী দখল হওয়ার কথা স্বীকার করে জরীপ চালিয়ে ৭৯ জন অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরির কথা উল্লেখ করেন। এসব বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য ৪০ লাখ টাকা প্রয়োজন হবে বলে ঐদিনের গোলটেবিল বৈঠকে জানিয়েছিলেন।
৪০ লক্ষ টাকার পরিমানের অর্থ সরকারিভাবে বরাদ্দ না থাকায় উচ্ছেদ কার্যক্রম থামকে আছে জানানো হয়েছিল ওইদিনের গোলটেবিল বৈঠকে। প্রয়োজনীয় অর্থের অভাবে বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করতে না পারার বিষয়টি জেলার স্থানীয় ও সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলে। তাহলে কী বাঁকখালী নদীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করা হবে না এমন প্রশ্নের উদ্রেক হয় সচেতন মহলের মাঝে। সচেতন মহলের অভিযোগ, ওইসময় যদি প্রশাসন বাঁকখালীকে দখলমুক্ত করতো পারতো তাহলে বাঁকখালী নদী আজ অন্যরকম হতো।
স্থানীয়দের অভিমত ছিল, বাঁকখালী নদীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ৪০ লক্ষ টাকা কক্সবাজার জেলার জন্য কোন ব্যাপার না। আর টাকা এখানে মূখ্য বিষয় নয়। স্থাপনা উচ্ছেদ জেলা প্রশাসনকে করতে হবে কেন? দখলকারদেরকে তাদের নিজেদের অর্থে নিজেদের স্থাপনা সরিয়ে নিতে হবে। এরজন্য জেলা প্রশাসনকে দখলদারদের বরাবরে নোটিশ প্রেরণ করলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে স্থাপনা নিজেদের খরচে সরিয়ে নিতে বাধ্য হতো।
অন্যথায় অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে জরিমানা নির্ধারণ করে জেলা প্রশাসন উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারতো। এরজন্য আলাদা তহবিল গঠন করার প্রয়োজন নাই। প্রয়োজন শুধু আন্তরিকতা। আর বাঁকখালী দখলে সহায়তা স্বরূপ মুখ্য ভূমিকা পালন করছে জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দফতর। বাঁকখালী নদীর তীর কিংবা চর দখলে দীর্ঘমেয়াদী লীজ কিংবা খতিয়ান সৃজন করিতে না পারে তার জন্যও সংশ্লিষ্ট দফতরের গুরুত্ব ভূমিকা পালন করতে হবে। ভবিষ্যতে যাতে বাঁকখালী নদীর তীর কিংবা চর দখল করে স্থাপনা তৈরি করতে না পারে।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের আমদানি-রপ্তানী বাণিজ্য সহজ করতে কস্তুরা ঘাট এলাকায় নৌ-বন্দর স্থাপনে গেজেট প্রকাশিত হয়েছিল ২০১০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি। ২০১১ সালের নৌ-বন্দর স্থাপনের সম্ভাব্য জমি হস্তান্তরের জন্য জেলা প্রশাসককে চিঠি দেয় বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কারণে ওই সময় ৬০ দিনের মধ্যে জমি হস্তান্তর করতে সম্ভব না হওয়ায় উক্ত জমি ফিরিয়ে দিতে গত ২০১৬ সালের ৬ মার্চ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কথা ছিল ওই জমি বিআইডব্লিউটিএ-কে হস্তান্তর করা হলে কস্তুরাঘাট নৌ-বন্দরের কাজ শুরু হবে। যেখান থেকে সরকারের আয় হবে কোটি কোটি টাকা।
বাঁকখালীকে দখল প্রক্রিয়া থেকে মুক্ত করতে গত ২০১৪ সনের ১৬ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করে। বাঁকখালী দখলকারীদের তালিকা তৈরি করে উচ্ছেদ এবং দুষণের উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধের নির্দেশ দেন হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ। ওইসময় ১০ সরকারি কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছিল যেন কোন কারণে বাঁকখালী নদী ভরাট না হয় তার যথাযথ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার।
সচেতন মহলের দাবি, শীঘ্রই যদি বাঁকখালীকে বর্জ্য দিয়ে ভরাট এবং অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হয় তবে দ্রুত বাঁকখালী তার নাব্যতা হারাবে এবং জেলার ঐতিহ্য থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-