টানা ছুটি, পর্যটকদের চাপ সামলাতে প্রস্তুতি কতটুকু!

চৌধুরী আকবর হোসেন •


টানা ছুটি, পর্যটকদের চাপ সামলাতে প্রস্তুতি কতটুকু!
বছর শেষে স্কুল ছুটি, আর নতুন বর্ষবরণের আমেজ তো আছেই। সেইসঙ্গে বড়দিনকে কেন্দ্র করে টানা তিন দিনের ছুটি। এই সময়ে দেশের পর্যটন স্থানগুলোতে বেড়াতে যাবেন মানুষজন। এরইমধ্যে হোটেলগুলোর রুম বুকিং শেষ, যানবাহনেরও রয়েছে বাড়তি চাপ। লম্বা ছুটির এ সময়ে পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে রেস্তোরাঁ, যানবাহনসহ সব ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত অর্থ আদায় ছাড়াও নানা হয়রানির অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা। পর্যটন খাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত পর্যটকের চাপ সামলাতে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতি প্রয়োজন।

২৫ ডিসেম্বর রবিবার বড়দিন, সরকারি ছুটি। তার আগের দুদিন শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক। ফলে একসঙ্গে টানা তিন দিন ছুটি হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে অনেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বেড়াতে যাচ্ছেন। অপরদিকে বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হওয়ায় স্কুলে চলছে ছুটি। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে সন্তানদের নিয়ে অনেক পরিবারই বেড়াতে যাচ্ছেন। আবার বর্ষবরণের এই সময়ে অনেকেই ঘুরতে যান। ফলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন স্থানে চলছে নানা আয়োজন। হোটেলগুলোতে বিরাজ করছে এখন উৎসবের আমেজ।

টানা ছুটি, পর্যটকদের চাপ সামলাতে প্রস্তুতি কতটুকু!
তবে বাড়তি চাপে বিভিন্ন সময়ে বিপত্তিতে পড়তে হয়েছে পর্যটকদের। পর্যটনের এই মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত দাম রাখার অভিযোগ রয়েছে। শুধু রেস্তোরাঁ নয়, রিকশা, নৌকা, অটোরিকশা ভাড়া, পর্যটন স্থানের বিভিন্ন দোকানের পণ্যের দামও হাঁকা হয় বাড়তি। এমনকি পর্যটনকেন্দ্রের আশপাশে ভিক্ষুকের উৎপাত বাড়ে। অপরদিকে অনেক পর্যটক হোটেল রুম বুক না করেই বিভিন্ন গন্তব্যে চলে যান। এরপর হোটেলে রুম না পেয়ে তাদের বিপত্তিতে পড়তে হয়।

সবচেয়ে বেশি পর্যটক বেড়াতে যান কক্সবাজারে। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের বেশিরভাগ হোটেলের রুম বুক হয়ে গেছে। বাসের পাশাপাশি এই গন্তব্যে অনেকে বিমানে যান। বর্তমানে কক্সবাজার বিমানবন্দরে দিনে ৪০টি ফ্লাইট চলাচল করে। পুরনো এই বিমানবন্দরটির টার্মিনালের অবকাঠামো ছোট হওয়ায় যাত্রীচাপ বাড়লে বাড়ে বিড়ম্বনাও।

কক্সবাজার বিমানবন্দরের ম্যানেজার মো. গোলাম মোর্তজা হোসেন বলেন, ‘বিমানবন্দরের টার্মিনাল ছোট হওয়ায় যাত্রীচাপ বাড়লে স্থান সংকুলান নিয়ে চাপ সৃষ্টি হয়। লম্বা ছুটির এই সময়ে যাত্রীরা যেন কোনও ভোগান্তিতে না পড়েন, এ বিষয়ে আমরা বাড়তি নজর রাখবো। নতুন টার্মিনাল ভবনের নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এটি শেষ হলে আর কোনও জটিলতা থাকবে না।’

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, ‘ইতোমধ্যে সিলেটের বিভিন্ন পর্যটন স্থানে পর্যটকরা আসতে শুরু করেছেন। নিরাপত্তার বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। যেকোনও স্থানে পর্যটকরা যেন নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে সবার সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। যেসব উপজেলায় পর্যটনকেন্দ্র আছে, সেসব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সর্তক থাকতেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ট্যুরিস্ট পুলিশও নিরাপত্তার জন্য কাজ করবে।’

মোহাম্মদ মোবারক হোসেন বলেন, ‘গোয়াইনঘাটসহ কয়েকটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ চেঞ্জিং রুম করা হয়েছে। সার্বিকভাবে আমাদের মনিটরিং থাকবে, যাতে পর্যটকদের অসুবিধা না হয়।’

টানা ছুটি, পর্যটকদের চাপ সামলাতে প্রস্তুতি কতটুকু!
পদ্মা সেতুর সুবাদে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে পর্যটনে গতি বেড়েছে। আগের চেয়ে বেশি মানুষ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ভ্রমণ করতে যান। বিশেষ করে কুয়াকাটায় অনেকেই বেড়াতে যান।

পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক অমিতাভ সরকার বলেন, ‘সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য জেলার সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে আমরা বৈঠক করবো। সেখানে পর্যটনের বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।’

ট্যুরিস্ট পুলিশের ডিআইজি মো. ইলিয়াস শরিফ বলেন, ‘নভেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পর্যটন মৌসুম। এ সিজনে দেশের সব পর্যটন স্থানে মানুষের চাপ বাড়ে। এ সময়ে মানুষজন যখন ছুটিতে থাকে, আমাদের সদস্যদের কোনও ছুটি থাকে না। পর্যটকদের নিরাপত্তায় সবসময় আমাদের সর্বোচ্চ নজরদারি থাকে।’

আরও খবর