বিশেষ প্রতিবেদক •
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলা বিএনপির নেতা সিদ্দিক আহম্মদের (৫৫) দুই হাতের কবজি কেটে নেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব।
গত ২৬ নভেম্বর (শনিবার) বিকাল তিনটার দিকে টেকনাফের সদর ইউনিয়নে নাজিরপাড়া মাদরাসা এলাকায় স্থানীয় এনাম মেম্বার ও তার সহযোগীরা বিএনপি নেতার হাতের কবজি কেটে নিয়েছে এ অভিযোগে মামলা করা হয়।
সেই মামলার অভিযুক্ত ৫ জনকে শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) রাত ১টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার র্যাবের সিনিয়র সহকারী পরিচালক আবু সালাম চৌধুরী।
গ্রেফতারকৃতরা হলো, টেকনাফের ৮ নম্বর ওয়ার্ড নাজিরপাড়ার মৃত মোজাহের মিয়ার ছেলে নুরুল হক (৩৮), দিল মোহাম্মদ কালুর ছেলে জাহাঙ্গীর আলম (৩৫), মৃত ফজল আহমদের ছেলে দিল মোহাম্মদ (৫৮) মৃত মো. রফিকের ছেলে ছৈয়দ উল্লাহ (৩৮) এবং শীলবনিয়া পাড়ার মীর কাশেমের ছেলে আবুল কালাম (৩৮)। মামলার পর থেকে তারা পলাতক ছিলো। শুক্রবার রাতে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় হোয়াইক্যং এলাকা হতে তাদের আটক করা হয়।
র্যাব সূত্র জানায়, টেকনাফে হাতের কবজি কেটে উল্লাস করার চাঞ্চল্যকর ঘটনায় আহত ছিদ্দিক আহমদের ছেলে রাশেদুল আলম (২০) বাদী হয়ে আত্মস্বীকৃত ইয়াবা কারবারি এনামুল হক মেম্বার (৩০) তার ভাই শাহাব উদ্দিন প্রকাশ সাবু (৩৪), নুরুল হক (৩৮) ও চান মিয়া (৪৮)সহ ১১জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ৬৭ জনকে আসামি করে টেকনাফ থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, বাদীর পরিবারের সঙ্গে আসামিদের জমি-জমা নিয়ে পূর্বশত্রুতা আছে। এ নিয়ে আসামিরা ভিকটিমসহ পরিবারের অপরাপর সদস্যদের বিভিন্ন সময় হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিলো। গত ২৬ নভেম্বর বেলা ৩টার দিকে ভিকটিম বাড়ি থেকে মোটরসাইকেল যোগে সাবরাং উত্তর নয়াপাড়া মেয়ের বাড়ি যাচ্ছিলেন। নাজিরপাড়া রাস্তার মাথায় আসামিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে ভিকটিম ছিদ্দিক আহমদকে হত্যার জন্য চাইনিজ কুড়ান, লোহার রড, রামদাসহ মারাত্মক অস্ত্র নিয়ে অপেক্ষা করছিলো। ভিকটিম রাস্তার মাথায় পৌঁছালে ল্যান্ডক্রজার জিপগাড়ি দিয়ে মোটরসাইকেলের গতিরোধ করা হয়।
প্রধান আসামির নেতৃত্বে ছিদ্দিক আহমদকে হত্যার উদ্দেশ্যে টেনে হিছড়ে সাবরাং রোড থেকে নাজিরপাড়া যাওয়ার রাস্তা দিয়ে পূর্ব দিকে প্রায় ১০০ গজ দূরে খেলার মাঠে নিয়ে যায়। ডান হাত ইটের রাস্তার উপর চেপে ধরে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে ডান ও বাম হাতের কব্জি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। এবং দৃষ্টিশক্তি চিরতরে নষ্ট করতে দুই চোখে আঙ্গুল ঢুকিয়ে উপড়ে ফেলার চেষ্টা করে। এবং ভেঙে দেওয়া হয় দুই পা-ও। তাদের পৈশাচিক নির্যাতনে ভিকিটিম নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তখন সিদ্দিকের পকেটে থাকা নগদ ২৫ হাজার টাকা ও মুঠোফোন এবং মোটরসাইকেলটি নিয়ে নেয়।
স্থানীয়রা এগিয়ে এসে ভিকটিমকে উদ্ধারের চেষ্টা করলে আসামিরা ভয়-ভীতি দেখিয়ে কেটে ফেলা দুইটি হাতের বিচ্ছিন্ন অংশ বিশেষ নিয়ে উল্লাস করতে করতে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরে পুলিশের সহায়তায় ভিকটিম ছিদ্দিক আহম্মেদকে উদ্ধার করে টেকনাফ হাসপাতালে নেওয়া হয়। কর্তব্যরত চিকিৎসক ভিকটিমকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠান। কক্সবাজার সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসার পর চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়। বর্তমানে তিনি চমেকে চিকিৎসাধীন।
ঘটনার পর মামলা হলে আসামিরা গা-ঢাকা দেয়। কিন্তু বিষয়টি মর্মস্পর্শী হওয়ায় ছায়া তদন্তে নামে কক্সবাজার র্যাব। প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামিদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। সেই সূত্র ধরে, উল্লেখিত ৫ জনকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য গ্রেফতারকৃদের আদালতে সোপর্দ করা হবে বলে উল্লেখ করেন র্যাব-১৫ সিনিয়র সহকারী পরিচালক (ল’ এন্ড মিডিয়া) মো. আবু সালাম চৌধুরী।
ভিকটিম ছিদ্দিক আহম্মেদ টেকনাফ উপজেলা বিএনপির ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পবিষয়ক সম্পাদক ও সদর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতির দায়িত্বে আছেন
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-