উখিয়ায় ব্র‍্যাকের সহযোগিতায় সফল উদ্যোক্তা হয়ে স্বপ্ন বুনছেন ১২৩৮ পরিবার!

নিজস্ব প্রতিবেদক •

দীর্ঘমেয়াদে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা এবং সামাজিক ক্ষমতায়ন এই বিশ্বাস নিয়ে গত ৫০ বছর ধরে ব্র্যাক কাজ করে চলেছে।

ব্র্যাক ২০০২ সালে বাংলাদেশে দারিদ্র্য বিমোচনের একটি মডেল উদ্ভাবন করে, যা সারা বিশ্বে গ্র্যাজুয়েশন অ্যাপ্রোচ নামে পরিচিত। গ্র্যাজুয়েশন অ্যাপ্রোচ উদ্ভাবিত দারিদ্র্য বিমোচনের একটি কার্যকর এবং প্রমাণিত মডেল। এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠীকে সর্বাঙ্গীণ সহায়তা প্রদান করা হয়। ফলে অতিদরিদ্র পরিবারের সদস্যদের সম্পদ, কর্মদক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি পেয়ে তাদের দারিদ্র্যমুক্তি এবং দীর্ঘমেয়াদে মানসিক ও আর্থসামাজিক অবস্থার টেকসই উন্নয়ন ঘটে।

আর এ প্রকল্পের আওতায় গবাদি পশু পালন করে দারিদ্রতা বিমোচনে সফল হয়েছে ফাতেমা বেগম। স্বাবলম্বী হয়ে পুরো পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে । কক্সবাজারের উখিয়ায় এনজিও সংস্থা ব্র্যাকের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ ও সম্পদ হস্তান্তর মাধ্যমে এভাবে সবজি ক্ষেত, ধান চাষাবাদ, পানের বরজ, হাঁস মুরগী ও গবাদী পশু পালন এবং ক্ষুদ্র ব্যবসা করে ১২৩৮ টি পরিবার স্বাবলম্বী হয়েছে ।

উখিয়ার রত্নাপালংয়ের কামারিয়ার বিল গ্রামের মোকতার আহমেদ স্ত্রী ফাতেমা বেগম জানান , স্বামী বয়সের ভারে অসুস্থ হয়ে পড়লে সংসারে অভাব অনটন শুরু হয়।

এনজিও ব্র্যাকের সহযোগিতায় প্রশিক্ষণ ও উক্ত সংস্থার দেয়া গবাদি পশু পালন করে এখন স্বাবলম্বী হয়েছে । বর্তমানে তার রয়েছে ৭০ হাজার টাকা মূল্যের ১টি ষাড়, ৩ টি ছাগল, ২৫ টি দেশী মুরগী ও ১২ টি কবুতর। এছাড়াও সবজি ও ধান চাষ করে অভাব অনটন দূর হয়েছে।

আর্থিক স্বচ্ছলতা ফিরে আসায় বড় ছেলে কলেজে অর্নাসে অধ্যায়নরত , ২য় ছেলে ৯ম শ্রেণী ও মেয়ে ৮ম শ্রেণীতে পড়েন।

ফরিদ আলমের স্ত্রী শামশু নাহার, বশির আহমদের স্ত্রী রাজিয়া বেগম ও করিম উদ্দিনের ইয়াছমিন জানান, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা অর্জন করে গবাদিপশু পালন, চাষাবাদ ও ক্ষুদ্র ব্যবসা করে দারিদ্র বিমোচনে সফলতা পেয়েছি। আমাদের পরিবারে হাসি ফুটেছে । ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার সুযোগ হয়েছে।

তারা আরও জানান , দুধের গাভী, বলদ গরু ,ছাগল, দেশীয় মুরগী, কবুতর, সবজি চাষে বিভিন্ন প্রকার বীজ প্রদান করেছেন । এছাড়াও গরুর গোয়াল , ছাগল ও মুরগীর ঘর তৈরি করতে টিন কাঠ সহ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করেন। হাস মুরগীর বিভিন্ন রোগের টিকা প্রয়োগ ও শাক সবজির রোগ বালাই দমনে প্রশিক্ষণ দিয়েছে ব্রাক ।

মাল্টি-সেক্টরাল ইমার্জেন্সি এসিস্ট্যান্ট ফর রোহিংগা প্রোজেক্ট ইন কক্সবাজার, বাংলাদেশ” – এর প্রকল্প ব্যবস্থাপক, মোহাম্মাদ কায়সার পারভেজ জানান, জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের অর্থায়নে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত ক্ষতিগ্রস্ত অতি দরিদ্র পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে উখিয়া – টেকনাফে আলট্রা পুর গ্রেজুয়েশন প্রোগ্রাম শুরু করে। ২০২০ সালে ২ হাজার পরিবারকে উপকারভোগী হিসাবে নির্বাচিত করে এ প্রোগ্রামের আওতায় বসত বাড়িতে সবজি চাষ, হাঁস মুরগি গবাদি পশু পালন কুটির ও হস্ত শিল্প এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায় হাতে কলমে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। ২০২১ সালে গ্রোজুয়েশন অর্জন করায় উপকার ভোগীদের পছন্দ অনুযায়ী আর্থিক সহযোগিতার মাধ্যমে সম্পদ হস্তান্তর করে উদ্যোক্তা সৃষ্টি করা হয় ।

ব্রাকের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক আতাউর রহমান জানান , উখিয়া উপজেলার ৩ টি ইউনিয়ন যথাক্রমে রত্না পালং , জালিয়া পালং ও হলদিয়া পালং ইউনিয়নের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক এলাকার ১২৩৮ টি উপকারীভোগী পরিবার স্বাবলম্বী হওয়ায় এখন মার্কেটিং লিংকেইজের মাধ্যমে উদ্যোক্তা হচ্ছেন । তাদের উৎপাদিত খাদ্য শস্য, দুধ ডিম সহ অন্যান্য পণ্য গ্রুপ ভিত্তিক মার্কেটিং করছে। দক্ষতা অর্জনের জন্য গ্রপ তৈরি ও লিডাদেরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য যে, কক্সবাজার জেলায় ২০০৯ সালে আলট্রা-পুওর গ্র্যজয়েশন প্রোগ্রামের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত জেলাটির ২২৩১৬ টি অতিদরিদ্র পরিবার ব্র্যাকের আলট্রা-পুওর গ্র্যাজুয়েশন প্রোগ্রামের আওতায় এসেছে। ২০২২ সালে কক্সবাজার জেলায় এই কর্মসূচিতে ২টি উপজেলার ২০০০ টি অতিদরিদ্র পরিবার যুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে উখিয়া উপজেলায় রয়েছে ১২৩৮টি পরিবার।

আরও খবর