বিশেষ প্রতিবেদক •
দীর্ঘ ৭ বছর পর আজ ১৩ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সৈকততীরের এ সম্মেলনকে কেন্দ্র করে নেতাকর্মীদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।
গত ৭ ডিসেম্বর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের যে মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাষণ দিয়েছিলেন, সেই মঞ্চেই জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
আজ মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে সম্মেলনের উদ্বোধনী পর্ব এবং বিকেলে কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কাউন্সিল অধিবেশনে নেতা নির্বাচন করা হবে।
সূত্র বলছে,কক্সবাজার জেলার শীর্ষ দুটি পদে প্রধানমন্ত্রীর মনোনীতদেরই ঠাঁই হবে। কারন প্রায় ১৭ বছর পর ১২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের মধ্য দিয়ে আবারও নেতৃত্বে এসেছেন মোসলেম উদ্দিন আহমেদ এমপি ও মফিজুর রহমান। দুইজনকে ফের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত সম্মেলেনে নেতাকর্মীদের আশা ছিল, নতুন নেতৃত্ব পাবেন। কিন্তু সেখানে নতুন নেতৃত্বের দেখা পাননি নেতাকর্মীরা।
তবে কক্সবাজার জেলায় এবার কাউন্সিলরদের ভোটের মাধ্যমে সভাপতি–সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন করা হতে পারে বলে আলোচনা আছে।
এবারের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে শোনা যাচ্ছে একডজন পদপ্রত্যাশীর নাম। জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থান ও সড়ক ছাড়াও জেলার বিভিন্ন থানা এলাকার মহাসড়কগুলোতেও তাদের নাম ও ছবি সম্বলিত বড় বড় বিলবোর্ড, ফেস্টুন ও তোড়ণ স্থাপন করে জানান দেয়া হচ্ছে। নতুন নতুন বেনার শহরের আনাচে কানাচে-দেয়ালে। অনেকে পছন্দের নেতাদের নামে এসব লাগিয়ে নিজেদের প্রচারও করছেন। জেলার রাজনৈতিক অঙ্গন ছাড়িয়ে চায়ের আড্ডা কিংবা চলতি পথের আলাপেও উঠে আসছে এ প্রসঙ্গ।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের মোট সাংগঠনিক উপজেলা রয়েছে ১১টি। এগুলো হচ্ছে কক্সবাজার সদর উপজেলা, কক্সবাজার পৌরসভা, ঈদগাঁও, রামু, উখিয়া, টেকনাফ, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, চকরিয়া, পেকুয়া ও মাতামুহুরী। ইতিমধ্যে সব কটি কমিটির সম্মেলন শেষ হয়েছে। নেতা নির্বাচনের জন্য কাউন্সিলর করা হয়েছে ৩৫০ জনকে। ইতিমধ্যে দুই পদের (সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) ১০ নেতার নাম শোনা যাচ্ছে।
জানা গেছে, ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি জেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়। ওই দিন কেন্দ্র থেকে সিরাজুল মোস্তফাকে সভাপতি ও মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর কমিটির সভাপতি সিরাজুল মোস্তফাকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক করা হয়। পরে সভাপতির দায়িত্ব পান সহসভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। এখন পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে।
সম্মেলনের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন সম্পন্ন করার জন্য কেন্দ্র থেকে ৫ ডিসেম্বর নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছিল। এ জন্য জেলার সব ইউনিয়ন ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন শেষ করা হয়। কিন্তু ৭ ডিসেম্বর দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কক্সবাজার সফর এবং জনসভার কারণে সম্মেলনের তারিখ ৫ ডিসেম্বর থেকে পিছিয়ে ১৩ ডিসেম্বর করা হয়।
দীর্ঘ সাত বছর পর সম্মেলনের আয়োজনে খুশি তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা। তাঁরা বলছেন, এর আগে বহুবার সম্মেলনের তারিখ ঘোষিত হয়েছিল। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে সম্মেলন হয়ে ওঠেনি। ৭ ডিসেম্বর শেখ কামাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শেখ হাসিনার জনসভায় কয়েক লাখ মানুষের সমাগমে নেতা–কর্মীরা উচ্ছ্বসিত। শেখ হাসিনার জনসভাকে ঘিরে দলের সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি ও তৃণমূলের নেতা–কর্মীদের মনে চাঙাভাব ফিরে এসেছে।
দলের নেতা–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সম্মেলনে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে অন্তত ১০ নেতার নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে সভাপতি পদপ্রত্যাশী পাঁচজন ও সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী পাঁচজন। সভাপতি পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন বর্তমান কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সংসদ সদস্য জাফর আলম।
সাধারণ সম্পাদক পদে বর্তমান কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দাশ, সহসভাপতি রেজাউল করিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মাশেদুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীর নাম শোনা যাচ্ছে।
গত শনিবার বিকেলে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থিতার ঘোষণা দেন রণজিৎ দাশ। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের আইনজীবী। রণজিৎ দাশ বলেন, ছাত্রজীবন থেকেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হিসেবে মাঠে আছেন। কাউন্সিলরদের ভোটে তিনি সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হলে তৃণমূলের ত্যাগী নেতা–কর্মীরা মূল্যায়িত হবেন। দলে ফিরে আসবে চাঙাভাব।
আরেক সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী রেজাউল করিম বলেন, সম্মেলনে অনেকেই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হচ্ছেন। এ ক্ষেত্রে দলের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শনা মেনে চলতে হবে সবাইকে।
গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে কাউন্সিল অধিবেশন সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান। তিনি বলেন, সম্মেলনে প্রধান অতিথি থাকবেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। সম্মেলনের উদ্বোধক ও বিশেষ অতিথি থাকছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোশাররফ হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তফা, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়াসহ অনেকে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-