তাসনিম মহসিন •
বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। এ জন্য ঢাকাকে একটি তালিকাও দিয়েছে দেশটি। এ বিষয়ে বৈঠক করতে বাংলাদেশ আসছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের জনসংখ্যা, শরণার্থী ও অভিবাসন বিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জুলিয়েটা ভ্যালস নয়েস। কূটনৈতিক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
আগামী ৪ ডিসেম্বর তিন দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন জুলিয়েটা। বাংলাদেশ সফরকালে তিনি রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনসহ পুনর্বাসন নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করবেন। এ ছাড়া পুনর্বাসনের জন্য ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের সঙ্গেও তার আলোচনার কথা রয়েছে। আর আইনি পন্থাগুলো মেনে রোহিঙ্গা পুনর্বাসন কীভাবে সহজ করা যায়, তা নিয়েও বৈঠক করবেন তিনি।
মার্কিন কর্মকর্তার বাংলাদেশ সফরের বিষয়টি নিশ্চিত করে নাম না প্রকাশের শর্তে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র পরিবারভিত্তিক অর্ধশত রোহিঙ্গার একটি তালিকা দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের যুক্তরাষ্ট্র পাঠাতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের অনুমোদনসহ বিভিন্ন নথি প্রস্তুতের বিষয় রয়েছে। তা নিয়ে বর্তমানে কাজ চলছে।
তিনি বলেন, শুরুতে পাইলট ভিত্তিতে কিছু রোহিঙ্গা নিয়ে যাবে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত এর উদ্দেশ্য প্রক্রিয়াটি সহজ করা। একবার প্রক্রিয়াটি শুরু হয়ে গেলে পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরও চাহিদা আসবে।
সম্প্রতি ঢাকা সফরকালে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি আফরিন আক্তার সমকালকে বলেছিলেন, ‘রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করছি। আমরা বেশ কিছু রোহিঙ্গাকে যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের জন্য চিহ্নিত করেছি, যারা সেখানে যেতে আগ্রহী। এ নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমরা মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশ থেকে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গাকে পুনর্বাসন করেছি। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশ থেকেও রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন করতে চাচ্ছি। রোহিঙ্গা সহযোগিতায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যুক্তরাষ্ট্র।’
রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো মিয়ানমারের গণহত্যার পঞ্চম বছর পূর্তি উপলক্ষে এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের ঘোষণা দেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকেন। তিনি বলেন, মানবিক সাড়াদান কার্যক্রমের জরুরি অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং অঞ্চলের অন্যান্য স্থানে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের পুনর্বাসন উল্লেখজনক সংখ্যায় বাড়াতে কাজ করছে। এর উদ্দেশ্য, তারা যেন যুক্তরাষ্ট্রে তাদের জীবন পুনর্গঠন করতে পারে।
এ ঘোষণা দেওয়ার আগেই বাংলাদেশের কাছে প্রস্তাব পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। বিভিন্ন দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ শুরুতে রাজি না থাকলেও পরে রাজি হয়। আর যুক্তরাষ্ট্রকে অধিক সংখ্যক রোহিঙ্গা নিতে অনুরোধ করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রাথমিকভাবে পাইলট-ভিত্তিক একটি তালিকা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ নিয়ে সংশ্নিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দপ্তরগুলো কাজ করছে।
২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত পারিবারিক পুনর্মিলনের আওতায় ৫০০ থেকে ৬০০ রোহিঙ্গা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে কানাডাও প্রস্তাব দিয়েছে।
প্রতি বছর রোহিঙ্গা অর্থায়নের জন্য বাংলাদেশের নেতৃত্বে জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যান (জেআরপি) তৈরি করা হয়। বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠকে একাধিক বছরের জন্য জেআরপি পরিকল্পনা করতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হবে। এরই মধ্যে বাংলাদেশকে এ প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ইউক্রেনসহ বৈশ্বিক বিভিন্ন সংকটের কারণে প্রতি বছর রোহিঙ্গাদের জন্য পৃথকভাবে অর্থ বরাদ্দ করে রাখা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। তারা রোহিঙ্গা সংকটে বাংলাদেশের পাশে থাকতে চায়। আর এ জন্য এক বছরের জেআরপির পরিবর্তে একাধিক বছরের জন্য জেআরপি করার প্রস্তাব দিয়েছে, যাতে করে তারা আগে থেকেই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকতে পারে।
এখন পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকটে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বছরের জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ১৭ কোটি ডলার অতিরিক্ত মানবিক সহায়তার ঘোষণা দিয়েছেন। ২০১৭ থেকে এ পর্যন্ত রোহিঙ্গা সংকটে ১৯০ কোটি ডলারের বেশি সহযোগিতা করেছে দেশটি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-