মাঈনুদ্দিন খালেদ •
আটক দু’মাদরাসা ছাত্র, জিজ্ঞাসাবাদ চলছে
নাইক্ষ্যংছড়িতে নিজ মাদরাসার শিক্ষার্থীদের প্রেমের একটি ঘটনা ভিডিও ধারণই কাল হলো হাফেজ দিদারের। আর সে কারণে শেষাবধি মঙ্গলবার রাতে এশার নামাজের পর সে খুন হয় লম্বা দায়ের এক কূপে।
ঘটনার বিষয় নিশ্চিত করেন নিহতের স্ত্রী খালেদা বেগম ও পিতা মোঃ ইসলাম। যে ভিডিও এখন পুলিশের হাতে। তবে পুলিশ বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করেনি। আটক হওয়া ২ ছাত্রকে জিজ্ঞাসাবাদের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।
পুলিশ, নিহতের পারিবারিক সদস্য ও স্থানীয়রা জানান, দপ্তরী হাফেজ দিদারুল আলম খুনের ঘটনায় তদন্তে নেমেছেন খোদ এএসপি সার্কেল আনোয়ার হোসেন। তিনি বুধবার সারা দিন মাঠে ছিলেন।
সন্ধ্যা নাগাদ খুনের ঘটনার বিষয়ে ২ জনকে আটক করা হয় জিজাসাদের জন্যে। তাদেরকে থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আটক হওয়া একজনের নাম হলো হাফেজ ছৈয়দুল আমিন (১৮)। সে পূর্বাআমতলী মাঠের মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে।
অপরজন হলো তানবিরুল ইসলাম আকাশ ( ১৫)। সে একই এলাকার আশরাফ আলীর ছেলে। তারা দুজনই সেই চাকঢালা মহিউচ্ছুন্নাহ দাখিল মাদরাসার ছাত্র। ছৈয়দুল আমিন ষষ্ঠ শ্রেণিতে আর আকাশ অষ্টম শ্রেণিতে। আর সে মাদরাসাতেই দপ্তরী দিদার চাকুরী করতো।
ঘটনার কথা স্বীকার করে মামলার আইও ধীমান বড়ুয়া এ প্রতিবেদককে বলেন,তাদের ২ জনকে থানায় আনা হয় জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে।খুন হওয়া দিদারের পরিবার আসামী করলে তাতের গ্রেপ্তার দেখানো হবে।
লামা সার্কেলের এএসপি সার্কেল আনোয়ার হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, তিনি নিজেই খুনের ক্লু বের করতে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। আর এ জন্য ২ জনকে থানায় আনা হয়। তবে তিনি আসামী না। বাদি তাতের দোষলে অথবা জিজ্ঞাসাবাদের পর কোন ক্লু পাওয়া গেলে তাদের নামীয় আসামী করা হবে।
অপরদিকে থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শাহ জাহান বলেন, তারা আপাতদৃষ্টিতে ৩ টি লক্ষ্যে অগ্রসর হচ্ছেন। প্রথমটি শিক্ষার্থীদের প্রেম ঘঠিত বিষয় দিদার জানতো। যাতে একটি মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয়টি দপ্তরীর পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়। আর তৃতীয়টি মাদরাসায় ছাত্রদের সাথে ছাত্রীদের বা শিক্ষিকার সাথে প্রেম ঘটিত কোন ফোনালাপ বিষয়ে দিদার কারো পথের কাটা হলো কি- না।
এছাড়া অন্যান্য আর কোন কারণ আছে কি-না তাও খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে আজকালের মধ্যে প্রকৃত অপরাধীর বিষয়ে হয়তো অনেক কিছু জানা যাবে।
এদিকে স্থানীয় খানেকা জামে মসজিদ সংলগ্ন সালামিয়া রহমানিয়া হেফজখানার হাফেজ আবদুচ্চারাম আমানুল্লাহ এ প্রতিবেদককে বলেন দপ্তরী হাফেজ দিদার খুন হওয়ার ১৫ মিনিট আগে তার মাদরাসা সংলগ্ন মসজিদে এশার নামাজ পড়ে। তিনি আধ ঘন্টা পর খবর পান দিদারের লাশ রাস্তায় পড়ে আছে।
এদিকে দু’একজন গ্রামবাসী নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, দিদার যখন এশার নামাজ পড়ছিলো তখন জিজ্ঞাসাবাদে আটক হওয়া ১ জন মসজিদের গেইটে পায়চারী করছিলো।
নাইক্ষংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবছার বলেন, এ যুবক নাইক্ষংছড়িস্থ চাকঢালা মহিুউচুন্নাহ দাখিল মাদরাসার খন্ডকালীন দপ্তরী হিসেরে চাকুরী করতো। সে খুব ভালো ছেলে। তার পারিবারিক কোন শক্র নেই।
এদিকে স্থানীয়দের কয়েকজন এ প্রতিবেদককে জানান,দপ্তরী দিদার একজন হাফেজ হলেও মাসে ২ হাজার টাকায় সে দপ্তরীর চাকরী নেয় ২ বছর আগে।এরই মধ্যে সরকারীভাবে দপ্তরী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হলে সেখানে সে আবেদন করে। তারা প্রতিদ্বন্ধী ৩ জন। তাদের মধ্যে দিদারও আছে।
সর্বশেষ হাফেজ দিদারুল আলম খুনের ঘটনায় পুরো নাইক্ষ্যংছড়িতে তোলপাড় চলছে। আর এ ঘটনায় বাদি পক্ষের লোকজন খুনে জড়িতদের চিহ্নিত করে থানায় মামলা জমা দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।
উল্লেখ্য, খুন হওয়া হাফেজ দিদার আলম(২৭) ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ফজুরছড়ার ইসলাম মিয়ার ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার ( ৮ নভেম্বর) রাত ৮ টায় আমতলী মাঠের পূর্বাংশে খানেকা মসজিদের পূর্বদিকে আবু তাহেরের বাড়ির পাশে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-