আরফাতুল মজিদ •
নির্বিচারে পাহাড় কাটা, গাছ কাটা, বালি উত্তোলন, বনভূমি দখল, বিক্রি, পাহাড় কেটে অবৈধ বসতি নির্মাণ, বনের গাছ পাচারসহ বিভিন্ন অপরাধ আশংকাজনক হারে বেড়ে গেছে। গত একবছরে আনুমানিক ১০০ একর বনভূমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। কেটে শেষ করা হয়েছে অন্তত ৪০টি পাহাড়।
কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের পিএমখালী রেঞ্জের আওতাধীন ৪টি বন বিটের বনজ সম্পদের উপর এমন অপরাধ চলছে। খোদ পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল জব্বারের সাথে অপরাধীদের যোগসাজশে এমন পরিস্থিতি হয়েছে বলে অভিযোগ। এমনকি আবদুল জব্বারের বিরুদ্ধে একাধিক লিখিত ও মৌখিক অভিযোগ জমা পড়লেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না।
অভিযোগ রয়েছে, আবদুল জব্বার টাকা দিয়ে সব জায়গায় ম্যানেজ করে রাখেন। কক্সবাজার সচেতন নাগরিক আন্দোলনের সদস্য সচিব মোরশেদ আলম অভিযোগ করে জানিয়েছেন, পিএমখালী রেঞ্জে পাহাড় কাটা, বনভূমি বিক্রি, দখল, গাছ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগ মৌখিকভাবে রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল জব্বারকে একাধিকবার অবহিত করা হয়।
কিন্তু অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার পরিবর্তে তিনি তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলেন। এক পর্যায়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা ও অপরাধী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়। অভিযোগের দুই মাসেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অভিযোগে জানা যায়, কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা হিসেবে আবদুল জব্বার যোগদানের এক মাস পর থেকেই শুরু হয় বেপরোয়া গতিতে পাহাড় কাটা। একই সাথে বন উজাড়, বনভূমি বিক্রি, দখল, অবৈধ বসতি তৈরি, সামাজিক বনায়নের প্লট দেয়ার নামে টাকা আদায়, অবৈধ করাতকল স্থাপনসহ বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির মাত্রা ছাড়িয়ে যায়। যোগদানের এক মাসের মধ্যেই তাঁর সাথে বিশেষ সখ্যতা গড়ে উঠে শীর্ষ পাহাড়খেকো ১৩ মামলার আসামি ওবায়দুল করিমের। নতুন করে আর কোন মামলা না হওয়ার বিশেষ গোপন চুক্তিতে পাহাড় কাটার ‘লাইন’ দেন ওবায়দুল করিম সিন্ডিকেটকে।
এরপর থেকে প্রায় এক বছরে পিএমখালী ইউনিয়নে ওবায়দুল করিমের হাতে কাটা পড়ে অন্তত ১০ পাহাড়। পরিবেশ অধিদপ্তরের তদন্ত চলাকালে আবদুল জব্বার নিজেই পাহাড়খেকো ওবায়দুল করিমকে রক্ষায় ভূমিকা রাখেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এমনকি আব্দুল জব্বারের বিরুদ্ধে অভিযোগ হওয়ার পর থেকে তিনি পাহাড় কাটার স্থানে গাছ রোপণ, নতুন বসতিকে পুরাতন বানানোর কৌশল তৈরিসহ বিভিন্নভাবে অপরাধের আলামত নষ্টের চেষ্টা করেন। শীর্ষ পাহাড়খেকো ১৩ মামলার আসামি ওবায়দুল করিমের সাথে আব্দুল জব্বারের নিয়মিত বিলাসবহুল হোটেলে আড্ডা দেয়াসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে সিরাজুল ইসলাম নামের এক পরিবেশকর্মী লিখিতভাবে অভিযোগ করেছিলেন। সিরাজুল ইসলাম জানান, তার দেয়া অভিযোগের তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। রেঞ্জ কর্মকর্তা টাকা দিয়ে সব ধামাচাপা দেন বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘এনভায়রনমেন্ট পিপল’র প্রধান নির্বাহী রাশেদুল মজিদ বলেন, ‘বন বিভাগের সা¤প্রতিক কর্মকাণ্ডে মনে হচ্ছে বনজ সম্পদ রক্ষার চেয়ে বনজ সম্পদ লুটপাটকারীদের রক্ষায় তারা বেশি ব্যস্ত। বন বিভাগের স্বার্থ রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ জরুরি।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পিএমখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল জব্বার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘সব অপরাধের বিরুদ্ধে মামলা ও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’ কক্সবাজার উত্তর বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. আনোয়ার হোসেন সরকার অভিযোগগুলোর বিষয়ে তদন্ত চলছে বলে জানান।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-