কী হতে যাচ্ছে ১০ ডিসেম্বর?

মোহাম্মদ আলী •


একটি তারিখকে ঘিরে উত্তাপ ছড়াচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। আগামী ১০ ডিসেম্বর ঘিরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ পাল্টাপাল্টি ঘোষণা দিচ্ছে। তাই এখন থেকেই রাজনৈতিক বোদ্ধাদের কাছে প্রশ্ন জাগছে কী হতে যাচ্ছে ১০ ডিসেম্বর? বিএনপি ওইদিন আন্দোলনের নতুন ঘোষণা দিতে পারে, অপরদিকে আওয়ামী লীগ কঠোর ও সতর্ক অবস্থানে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে।

নগরীর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশে বিএনপি নেতাদের কারো কারো বক্তব্যের পর এ প্রশ্নের উদ্রেক হয়েছে। ওইদিন কয়েকজন বিএনপি নেতা বলেন, আগামী ১০ ডিসেম্বরের পর থেকে দেশে খালেদা জিয়ার সরকার চলবে। যারা খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছেন, ১০ ডিসেম্বরের পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হলো।

বিএনপি সূত্র জানায়, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতি, পুলিশের গুলিতে ৫ নেতাকে হত্যা ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে ১২ অক্টোবর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ১০টি গণসমাবেশ করবে দলটি। এরমধ্যে গত ১২ অক্টোবর প্রথম চট্টগ্রাম বিভাগীয় সমাবেশটি অনুষ্ঠিত হয়। গত ১৫ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ হয় ময়মনসিংহ বিভাগে। এরপর ধারাবাহিকভাবে ২২ অক্টোবর খুলনায়, ২৯ অক্টোবর রংপুরে, ৫ নভেম্বর বরিশালে, ১২ নভেম্বর ফরিদপুরে, ১৯ নভেম্বর সিলেটে, ২৬ নভেম্বর কুমিল্লায়, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী এবং সর্বশেষ ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ করবে বিএনপি।

গত ১২ অক্টোবর নগরীর পলোগ্রাউন্ড ময়দানে চট্টগ্রাম বিভাগীয় গণসমাবেশে বিএনপির প্রায় অর্ধশত কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের নেতা বক্তব্য দেন। এরমধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা সরকারকে হুমকি দিয়ে বলেন, বিএনপি নয়, দেশের জনগণ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। এ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত রাজপথ ছাড়বে না। ১০ ডিসেম্বরের পর আওয়ামী লীগের কাউকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিএনপি নেতাদের এ বক্তব্যের পর আওয়ামী লীগ নেতাদের পাল্টা প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে। গত ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এবং বিভিন্ন আসনের সংসদ সদস্যদের সাথে মতবিনিময় সভা করে আওয়ামী লীগ।

ওই সভায় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বিএনপি চট্টগ্রামে যে সমাবেশ করেছে, সেই সমাবেশের প্রস্তুতি তারা দীর্ঘ তিনমাস ধরে নিয়েছে। প্রস্তুতি নিয়ে তারা বলেছিল, পনের লাখ মানুষের সমাগম হবে। এখান থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ১৮০ কিলোমিটার, টেকনাফের দূরত্ব ২৫০ কিলোমিটার, সেখান থেকেও মানুষ এনেছে। তারা পলোগ্রাউন্ড মাঠের ৪০ শতাংশ পেছনে রেখে মঞ্চ করেছে। আর সামনের যে অংশ তার অর্ধেকও পূর্ণ হয়নি।

অর্থাৎ পলোগ্রাউন্ড মাঠের এক তৃতীয়াংশও ঠিকমত পূর্ণ হয়নি। চট্টগ্রামে জব্বারের বলি খেলায় যত মানুষ হয়, তার চেয়েও অনেক কম মানুষ হয়েছে। বাস্তবতা হচ্ছে, জব্বারের বলিখেলায় অনেক বেশি মানুষ হয়। বিএনপি হাঁকডাক করেও মহাসমাবেশ নাম দিয়ে একটি ফ্লপ সমাবেশ করেছে। সেই সমাবেশ থেকে বিএনপি নেতারা নানা ধরনের আপত্তিকর বক্তব্য দিয়েছে।’

জানতে চাইলে উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ সালাম বলেন, ‘১২ অক্টোবর সমাবেশে বিএনপি নেতারা যে ধরনের বক্তব্য দিয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর বিগত ১৪ বছর ধরে দিচ্ছে।

ওইদিন তাদের কেউ কেউ বলেছেন, ‘১০ ডিসেম্বরের পর খালেদা জিয়ার সরকার চলবে।’ এখন আমার প্রশ্ন -১০ ডিসেম্বরের পর আমরা দেশ ছেড়ে যাবো নাকি? এ ধরনের বক্তব্য সম্পূর্ণ অন্তঃসারশূন্য।’

এম এ সালাম বলেন, ‘সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরতে এবং বিএনপির নৈরাজ্য সৃষ্টির অপচেষ্টা রুখে দিতে উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগ চট্টগ্রামের উপজেলায় এবং মহানগরের থানায় থানায় ১ থেকে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করবে। এরপর ডিসেম্বরে তিন সাংগঠনিক কমিটি যৌথভাবে বড় ধরনের সমাবেশ করবে।’

অপরদিকে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আগামী ১০ ডিসেম্বরের ঢাকায় বিএনপির সমাবেশের পর থেকে দেশে খালেদা জিয়ার সরকার চলবে। যারা খালেদা জিয়াকে আবার কারাগারে পাঠানোর হুমকি দিচ্ছেন, ১০ ডিসেম্বরের পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। চট্টগ্রাম থেকে সরকার পতনের আন্দোলন শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ বলছে বিএনপির সভা-সমাবেশে মানুষ নেই। তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- বিএনপির সমাবেশে মানুষ আছে কি-নেই, তা গত ১২ অক্টোবর পলোগ্রাউন্ডে সমাবেশ করে দেখিয়ে দিয়েছে বিএনপি।’

আরও খবর