কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রচারণা তুঙ্গে : সর্বত্র টাকার ছড়াছড়ি

সৈয়দুল কাদের •

কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রচারণা তুঙ্গে। চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে ৪৭ জন প্রার্থী নির্ঘুম প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগের কারণে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে প্রতিটি উপজেলায়। সর্বত্র টাকার ছড়াছড়িতে অনেক প্রার্থীই হতাশ হয়ে পড়েছেন।

কক্সবাজার জেলা পরিষদ নির্বাচনে শেষ মুহুর্তে এসে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। জেলাব্যাপী প্রার্থীদের ব্যাপক প্রচারণা চললেও অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ ও টাকার ছড়াছড়িতে অনেক প্রার্থীই হতাশা ব্যক্ত করেছেন। আগামী ১৭ অক্টোবর এই নির্বাচন অনুষ্টিত হবে।

এতে নির্বাচিত হবেন ১ জন চেয়ারম্যান ৯ জন সাধারণ সদস্য ও ৩ জন সংরক্ষিত মহিলা সদস্য। গত ১১ অক্টোবর রিটার্নিং অফিসার কক্সবাজার জেলা প্রশাসক এর সভাকক্ষে প্রার্থীদের সাথে মত বিনিময় সভায় প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন।

সংরক্ষিত মহিলা আসন-২ এর সদস্য প্রার্থী মাশরফা জান্নাত জানিয়েছেন নির্বাচনে টাকার ব্যবহার নির্বাচনী পরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমি নির্বাচন কমিশনের নির্ধারণ করা টাকার মধ্যেই নির্বাচনী ব্যয় সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা করছি। তবে আমার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা যেভাবে টাকা দিচ্ছেন তা গনতন্ত্রের জন্য ভাল লক্ষণ নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। যারা যোগ্য তারাই ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হবেন এটিই গনতন্ত্র।

সাধারণ আসন-৯ থেকে সদস্য প্রার্থী আবু জাফর ছিদ্দিকী জানিয়েছেন, যেভাবে টাকা ছড়ানো হচ্ছে এতে আগামীতে কোন ভদ্রলোক নির্বাচন করার সাহস করবে না। এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে যেন টাকা ছাড়া ভোট পাওয়া যাবে না। এতে অনেক সম্মানিত ভোটারই বিব্রত হচ্ছেন। আমরা নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত টাকার মধ্যেই নির্বাচন সম্পন্ন করতে চাই। নির্বাচনের সুষ্ট পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে টাকার ছড়াছড়ি বন্ধ করতে হবে।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা শেষে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মোস্তাক আহমদ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, আনারস প্রতীকের প্রার্থী শাহিনুল হক মার্শাল অবৈধভাবে ভোটারদের মাঝে টাকা বিতরণ করছেন। তাই তার পরিবারের সদস্যদের টাকার হিসাব দেখা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব। অন্যতায় তিনি প্রার্থীতা প্রত্যাহার করবেন বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
অপরদিকে শহীনুল হক মার্শাল পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, আমি প্রতি বছর ৩০ লাখ টাকা টেক্স দিই। যেভাবে আচরণবিধি ভঙ্গ করা হচ্ছে এতে বরং আমি এবং ভোটাররা শঙ্কার মধ্যে আছি। নির্বাচন কমিশন থেকে যে বাজেট নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে এর বাইরে টাকা খরচ করার কোন সুযোগ নেই। আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ করা হচ্ছে এতে কোন সত্যতা পাওয়া যাবে না।
রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন অভিযোগ পেলেই আচরণবিধির বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অবাধ ও সুষ্ট নির্বাচন করতে প্রয়োজনীয় সবকিছুই করা হবে। আমরা সুষ্ট নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রস্তুত আছি।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন জানান ৪৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। তৎমধ্যে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ চৌধুরী পেয়েছেন মোটর সাইকেল, সাবেক পৌর চেয়ারম্যান নুরুল আবছার পেয়েছেন তালগাছ, শাহীনুল হক মার্শাল পেয়েছেন আনারস এবং মঙ্গল পার্টি নেতা জগদিশ বড়ুয়া প্রজাপতি প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।
সংরক্ষিত সদস্য পদে ১ নং ওর্য়াড থেকে জেলা পরিষদ সদস্য উখিয়ার হলদিয়া পালং আওয়ামী লীগের সভাপতি আশরাফ জাহান কাজল (দোয়াত কলম), তছলিমা আক্তার রুমানা (টেবিলঘড়ি), তাছলিমা আক্তার (ফুটবল)। ২নং ওর্য়াড থেকে মশরফা জান্নাত-বই, চম্পা উদ্দিন-টেবিল ঘড়ি, সালেহা আক্তার আখি-ফুটবল, হুমাইরা বেগম-হরিণ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। ৩নং ওয়ার্ড থেকে আসমা উল হুসনা- টেবিল ঘড়ি, তানিয়া আফরিন-দোয়াত কলম ,রেহেনা খানম-ফুটবল এবং হুমাইরা বেগম- বই প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

সাধারণ সদস্য পদে ১ নং ওয়ার্ড থেকে জাফর আলম-তালা, মোঃ শফিক মিয়া-টিউবওয়েল। ২নং ওর্য়াড থেকে আবুল মনসুর চৌধুরী-টিউবওয়েল, হুমায়ুন কবির চৌধুরী-তালা। ৩নং ওয়ার্ড থেকে মাহমুদুল করিম মাদু-হাতি, তাহমিনা নুসরাত জাহান লুনা-তালা, মোঃ রুহুল আমিন-অটোরিক্সা। ৪নং ওয়ার্ড থেকে ফরিদুল আলম- হাতি, শামসুল আলম মন্ডল-তালা, মোস্তাক আহমদ-অটোরিক্সা, নুরুল আবছার-ঘুড়ি, মোঃ মনজুরুল মুর্শেদ কাদের বৈদ্যুতিক পাখা, মোঃ আবদুল মজিদ-টিউবওয়েল। ৫নং ওয়ার্ডে আরিফুল ইসলাম বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৬ নং ওয়ার্ড থেকে সোলতান আহমেদ-ঘুড়ি, মুহাম্মদ ফয়সাল- হাতি,মোঃ আবু তৈয়ব-টিউবওয়েল, মোঃ জাহাঙ্গির আলম-তালা, এটিএম জিয়া উদ্দিন চৌধুরী জিয়া-বৈদ্যুতিক পাখা। ৭নং ওয়ার্ডে মোঃ আবদুল হামিদ-ক্রিকেট ব্যাট, মোঃ জয়নাল আবেদীন-হাতি,মোলতান মোহাম্মদ রিপন-ঢোল,নুরুল আবছার-বৈদ্যুতিক পাখা, সেলিনা আক্তার-উটপাখি, মোহাম্মদ আজমগীর-টিউবওয়েল। ৮ নং ওয়ার্ডে এম. আজিজুর রহমান-তালা, শহীদুল ইসলাম মুন্না-হাতি, মোঃ সাইফুল কাদির-টিউবওয়েল। ৯নং ওয়ার্ডে কফিল উদ্দিন-তালা,আবু জাফর ছিদ্দিকী-হাতি, ছরওয়ার আলম সিকদার-ঘুড়ি এবং নুরুল ইসলাম-টিউবওয়েল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন।

উল্লেখ্য, ৯টি উপজেলার ৭১ ইউনিয়ন ও ৪টি পৌরসভায় মোট ভোটার সংখ্যা ৯৯৪ জন। তৎমধ্যে মহিলা ভোটার ২৩৫ জন।

আরও খবর