বিশেষ প্রতিনিধি •
কক্সবাজারের টেকনাফে অপহরণপূর্বক মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা এখন উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। সশস্ত্র সংঘবদ্ধ গ্রুপ একের পর এক স্থানীয় বাসিন্দাদের অপহরণ করে নিচ্ছে অস্ত্রের মুখে।
অপরদিকে জেলাব্যাপী গরু চুরির ঘটনাও বৃদ্ধি পেয়েছে মাত্রাতিরিক্ত। গরু চুরির নেপথ্যে খোদ জড়িত রয়েছেন জনপ্রতিনিধি। সেই সঙ্গে গরু চুরিতে লিপ্ত জনপ্রতিনিধিদের পৃষ্ঠপোষকতায় জড়িত রয়েছেন প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ। যা কক্সবাজার জেলাবাসীর জন্য অত্যন্ত ভয়ংকর তথ্য বলে মনে করেন সভায় উপস্থিত কয়েকজন সদস্য।
ভুক্তভোগী জনগণের বেদনার এসব কথা তুলে ধরেছেন সরকারি কর্মকর্তারাই। গতকাল সোমবার কক্সবাজার জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায় মানুষের সীমাহীন কষ্টের এমন সুনির্দিষ্ট তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদ। উপস্থিত ছিলেন জেলার বিভাগীয় সরকারি কর্মকর্তাসহ কমিটির সদস্যরা।
টেকনাফবাসী কি কষ্টে জীবন কাটাচ্ছেন তা তুলে ধরেছেন টেকনাফের ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) এরফানুল হক চৌধুরী।
তিনি বলেছেন, সংঘবদ্ধ সশস্ত্র গ্রুপ অস্ত্রের মুখে এলাকার লোকজনকে অপরহণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে। এসব কারণে টেকনাফের সর্বত্র এখন বিরাজ করছে অপহরণ আতংক।
অপরদিকে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. রফিকুল ইসলাম গরু চুরির এক ভয়াংকর তথ্য তুলে ধরেছেন জেলা আইন-শৃংখলা কমিটির সভায়।
তিনি বলেন- ‘পুলিশ সর্বতোভাবে গরু চুরি ঠেকাতে তৎপর রয়েছে। ইতিমধ্যে চুরি যাওয়া বেশ কিছু গরুও উদ্ধার হয়েছে। সেই সঙ্গে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বেশ কয়েকজন গরু চোরও।’ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সভায় বলেন, গরু চোরদের জিজ্ঞাসাবাদে যেসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে তা অত্যন্ত ভয়ংকর। এমনকি গ্রেপ্তার হওয়া গরু চোরের দেওয়া জবানবন্দি রীতিমতো পিলে চমকানোর মতো ঘটনা।
পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে গরু চোররা অকপটে স্বীকার করে বলেন- খোদ জনপ্রতিনিধিরা জড়িত গরু চুরির কাজে। যে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন জনপ্রতিনিধি সেই জনপ্রতিনিধিরাই জনগণের গোয়াল ঘরের গরু চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সভায় আরো ভয়ংকর তথ্য দিয়ে জানান- যে জনপ্রতিনিধিরা গরু চুরিতে লিপ্ত সেই গরু চোর জনপ্রতিনিধির পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন আরো প্রভাবশালীরা। তবে এসব প্রভাবশালীদের নাম তিনি প্রকাশ করেননি।
সভায় উপস্থিত কমিটির কয়েকজন সদস্য এসব তথ্য দিয়ে বলেন- ‘অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে গরু চুরির এমন সব অবাক করা কথা শুনে আমরা থ বনে গিয়েছিলাম।’
সভায় অন্যান্যের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাউদ্দিন আহমদ সিআইপি, কক্সবাজার প্রেস ক্লাবের সভাপতি মো আবু তাহের ও জাসদ সভাপতি নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল বক্তৃতা করেন। প্রেস ক্লাব সভাপতি আবু তাহের কক্সবাজার শহরে লক্ষাধিক অবৈধ রোহিঙ্গার বসবাসের কারণে চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
তিনি সেন্ট মার্টিনস দ্বীপের অবৈধ ঘরবাড়ি নির্মাণ বিষয়ে সুস্পষ্ট সরকারি নীতিমালা দাবি করে বলেন, পরিবেশ অধিদপ্তরের মৌসুমি একজন কর্মকর্তা দ্বীপে থাকেন। অফসিজনে ওই কর্মকর্তা দ্বীপে না থাকার কারণে লোকজন ওই সময় অবৈধ অবকাঠামো নির্মাণ করেন বলে জানান। সেই সঙ্গে দ্বীপবাসীর ঘরবাড়ি নির্মাণে বাধা দেওয়ার বিষয়টিও এক প্রকার মৌলিক অধিকার খর্ব করার শামিল বলেও তিনি মত ব্যক্ত করেন।
সভাপতির বক্তব্যে জেলা প্রশাসক গুরুতর বিষয়গুলোর ব্যাপারে অবিলম্বে আইনত ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সেই সঙ্গে জেলা জজশীপে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর মামলার নিষ্পত্তিসহ দ্রুত মামলা নিষ্পত্তিতে বিজ্ঞ আদালত সমূহকে সহযোগিতা দেওয়ায় পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-