ইমরান আল মাহমুদ:
আবারও অস্থির হয়ে উঠছে বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত। মায়ানমার থেকে ছোঁড়া হচ্ছে মর্টার শেল,ওপারে পুঁতে রেখেছে মাইন। যার ফলে আতংকে দিন কাটছে সীমান্তে বসবাসকারী স্থানীয়দের। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে রয়েছে।
সীমান্তের পরিস্থিতি ও আতংকিত হওয়ার কারণ জানতে চাইলে ঘুমধুম ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন,”শুক্রবার রাতে পরপর তিনবার মর্টার শেল ছোঁড়া হয়। জিরো পয়েন্টে অবস্থিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশপাশে মুহুর্তে তিনটি যুদ্ধ বিমান এসে অনবরত গুলি ছোঁড়া হয়। তখনই পুরো এলাকা জুড়ে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এতে বিস্ফোরণে এক রোহিঙ্গা মারা যায়। এরপর জনগণকে সরানোর জন্য আনুষ্ঠানিক কোনো ব্যবস্থা হয়নি। তবে ঝুঁকিতে থাকা সবাই নিরাপদে তাদের আত্নীয় স্বজনদের বাড়িতে অবস্থান নেয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। সীমান্তে বিজিবি সদস্যদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে।”
পরীক্ষা কেন্দ্র স্থানান্তর:
বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্তে উত্তেজনার পর এসএসসি,দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্র সরিয়ে করে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছে। স্থানান্তরিত কেন্দ্রেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার রাতে হঠাৎ মর্টার শেল ও গুলির শব্দে কেঁপে উঠে তুমব্রু ও পালংখালী সীমান্ত। এরপরই শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয় বিবেচনা করে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড।
শনিবার(১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শনে আসেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক(শিক্ষা ও আইসিটি) বিভীষণ কান্তি দাশ। এসময় জেলা শিক্ষা অফিসার মো. নাছির উদ্দিন,উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোসাইন সজীব,ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী, একাডেমিক সুপারভাইজার মো. বদরুল আলম,রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম, ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এডিসি বলেন,”সরকারি নির্দেশনা পাওয়ার পর কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র উপযোগী করে তোলার জন্য উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্তে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে যানবাহনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ধারা বহাল থাকবে।”
কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসার মো. নাছির উদ্দিন বলেন,”পরীক্ষা কেন্দ্রে শতভাগ উপস্থিতি রয়েছে। ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ৪১৯ জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে প্রথমদিনেই তিনজন অনুপস্থিত ছিলো। ৪১৬জন পরীক্ষা সবাই উপস্থিত হয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। পরীক্ষার্থীদের মানসিক প্রশান্তির জন্য আরও উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।”
পরীক্ষা শেষে ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র তোহান সিকদার বলেন,”মর্টার শেল ও গুলাগুলির শব্দে পড়তে একটু অসুবিধা হয়েছে। তবে পরীক্ষা দিতে কোনো সমস্যা হয়নি। কেন্দ্রে নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পেরেছি।”
কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী তসলিমা আক্তার ও তিশা মনি বড়ুয়া বলেন,”ঘুমধুম থেকে কুতুপালং স্কুলে কেন্দ্র পরিবর্তন করে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার পরিবেশ শান্ত ছিলো। পরীক্ষাও ভালো হয়েছে। প্রতিদিন যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা করলে আরও উপকার হবে। ঘুমধুমের আতংকের চেয়ে কুতুপালংয়ে পরীক্ষা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জানাই।”
কুতুপালংয়ের ইউপি সদস্য হেলাল উদ্দিন বলেন,”আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করতেছি পরীক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করে মানসিকভাবে প্রশান্তিতে রাখতে। স্থানীয় ইউপি সদস্য হিসেবে পরীক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।”
এদিকে,পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতের সুবিধার্তে বাসের ব্যবস্থা ও সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সকল নেতাকর্মীদের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। নির্দেশনা বাস্তবায়নকালে উখিয়া কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা সভাপতি পদপ্রার্থী মো. মামুনুর রশীদ বলেন,”আমরা উখিয়া উপজেলা ছাত্রলীগ জেলা ছাত্রলীগ ও জেলা সভাপতি এসএম সাদ্দাম হোসাইনের নির্দেশে পরীক্ষার্থীদের রুটিন,পানির বোতল বিতরণ করেছি। তাছাড়া যাতায়াতের জন্য বাসের ব্যবস্থা করে নিরাপদে তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।”
পরীক্ষা কেন্দ্রে ১৪৪ধারা বাস্তবায়নে সার্বিক নিরাপত্তায় উখিয়া থানা পুলিশ নিয়োজিত ছিলো।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-