দ্রুত দেশে ফিরে যাওয়ার প্রার্থনা রোহিঙ্গাদের!

ইমরান আল মাহমুদ,উখিয়া:
রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয়ের পাঁচ বছর পূর্তি হয়েছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে বাস্তুচ্যুত হয়ে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফে প্রায় ৭লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছিলো। পাঁচ বছরে রোহিঙ্গাদের সংখ্যা প্রায় ১৩ লাখে দাঁড়িয়েছে।

রোহিঙ্গাদের গণহত্যা স্বরণে সমাবেশ:
রোহিঙ্গাদের গণহত্যার পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে দিনটিকে কালো দিন ঘোষণা দিয়ে পালন করে আসছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও উখিয়ার কুতুপালং শিবিরের লম্বাশিয়া ক্যাম্পে ‘হোপ ইজ হোম’ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সমাবেশ স্থলে সকাল থেকে জড়ো হতে থাকে রোহিঙ্গারা। যাদের মধ্যে নারী-পুরুষ,শিশু কিশোর সহ বৃদ্ধরাও রয়েছে। বৃহস্পতিবার(২৫ আগস্ট) সকাল থেকে ব্যানার, ফেস্টুন,প্লেকার্ড হাতে রোহিঙ্গারা তাদের নিজদেশে ফিরে যাওয়ার দাবি জানায়। টানা ১ঘন্টার সমাবেশে নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলো ১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।

মিয়ানমার ফিরতে সাত দফা দাবি:
রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের পাঁচ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে এবারের সমাবেশে সাত দফা দাবি ছিলো। দাবিগুলো হচ্ছে
মিয়ানমারে পার্লামেন্টে রোহিঙ্গা হিসেবে স্বীকৃতি,সীমিত সময় রাখা যাবে মিয়ানমার ট্রানজিট ক্যাম্পে, সকল রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসন করতে হবে, সেফজোন, নিজস্ব সহায়-সম্বল ফেরত, প্রত্যাবাসনের সময় বেঁধে দেওয়া, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন, একবারে গ্রামের সব মানুষকে প্রত্যাবাসন করা, রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসী হিসেবে উত্থাপন না করা।

বিভিন্ন ক্যাম্পে সমাবেশ:
নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আশা নিয়ে উখিয়ার প্রায় সবকটি ক্যাম্পে সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। সবচেয়ে বড় সমাবেশ কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পে হয়েছে বলে সাধারণ রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন। তবে বালুখালী,থাইংখালী, জামতলি ক্যাম্পেও রোহিঙ্গারা সমাবেশ করেছেন। সমাবেশে বক্তারা বলেন,”আমরা আর আশ্রিত রোহিঙ্গা হিসেবে থাকতে চাইনা। আমাদের নিজ দেশে ফিরে যেতে চায়। আমাদের জাতি হিসেবে রোহিঙ্গা স্বীকৃতি সহ সাত দফা দাবি মেনে নিলে ফিরতে চাই।”

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যানিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জোবায়ের বলেন, “আজকে ‘গণহত্যা’ দিবসে পালন করেছি। এইদিনে মিয়ানমার জান্তা সরকার আমাদের ‘গণহত্যা’ করেছে। আমরা রিফুজি হয়ে থাকত চায় না। জান্তা সরকার আমাদের নিধন করতে ৫ বার বিতাড়িত করেছে মিয়ানমার থেকে। প্রতিবারই মানবিক বাংলাদেশ আামদের আশ্রয় দিয়েছে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণকে ধন্যবাদ জানায়।”
রোহিঙ্গা অন্যান্য বক্তারাও নির্যাতনের বর্ণনা তুলে ধরে নিজেদের অধিকার নিশ্চিত করে ফিরে যাওয়ার কথা বলেন। এসময় তারা ২৫ আগস্ট কে রোহিঙ্গা ভাষায় ‘হালা দিন’ অর্থাৎ কালো অধ্যায় হিসেবে আখ্যা দিচ্ছেন।

মিয়ানমার ফিরতে বিশেষ মোনাজাত:
রোহিঙ্গাদের সমাবেশ শেষে প্রত্যেক ক্যাম্পে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাতে রোহিঙ্গারা তাদের গণহত্যার বিচার সহ শরণার্থী জীবন থেকে মুক্তি পেতে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করে। এসময় তারা ২৫হাজার নারী পুরুষ শিশু হত্যার বিচার দাবি করে গণহত্যায় নিহতদের আত্নার মাগফেরাত কামনা করে। মোনাজাতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন তারা।

প্রত্যাবাসনে প্রক্রিয়া:
রোহিঙ্গা ঢলের পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও প্রত্যবাসন প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি এখনো পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাও মিয়ানমার ফেরত যায়নি। প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা হলেও তা থমকেই আছে। রোহিঙ্গাদের নতুন প্রজন্ম নিয়ে শঙ্কা রয়েছে স্থানীয়দের। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন জায়গায় রোহিঙ্গাদের অবাধ বিচরণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমে স্থানীয়রা রয়েছে হুমকির মুখে।

সমাবেশ নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(মিডিয়া) মো. কামরান হোসেন জানান,”রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসার ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তাদের উপর ঘটে যাওয়া গণহত্যার বিচার এবং নিজ দেশে ফিরে যাবার দাবি বিশ্ববাসীকে জানাতে প্রতিটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের নির্দিষ্ট স্থানে রোহিঙ্গারা সমাবেশ করে। তারা নিজ ভূমি মিয়ানমারের আরাকানে ফিরে যেতে চায় এবং বিশ্ববাসীর কাছে গণহত্যার বিচার দাবি করে। ৮এপিবিএন’র আওতাধীন ১১টি ক্যাম্পে রোহিঙ্গারা শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করেছে। অপ্রীতিকর ঘটনা রোধে ৮এপিবিএন’র পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।”

আরও খবর