কক্সবাজার জার্নাল ডেস্ক:
২১ আগস্টের হামলার ঘটনায় তখনকার ক্ষমতাসীনরা সরাসরি জড়িত ছিল। বিএনপি-জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় এই হামলা হয়েছিল বলেই সেদিন তারা হামলার আলামত নষ্ট করেছিল। সংসদে ওই ঘটনা নিয়ে আওয়ামী লীগকে কথা বলতেও বাধা দেওয়া হয়েছিল।’ ২০২০ সালের এদিন বক্তৃতাকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্পষ্টভাবে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারসহ তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের সম্পৃক্ততা তুলে ধরেন।
এই ঘটনায় হওয়া মামলার রায় ঘোষণাকালেও আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলে, রাষ্ট্রযন্ত্রের সহায়তায় প্রকাশ্য দিবালোকে নৃশংস এ হামলা হয়েছিল। কিন্তু রাজনীতি মানেই কি বিরোধী দলের ওপর পৈশাচিক আক্রমণ? রাজনীতিতে অবশ্যম্ভাবীভাবে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মধ্যে মতবিরোধ থাকবে। তাই বলে বিরোধী দলকে নেতৃত্বশূন্য করার প্রয়াস চালানো হবে? এটা কাম্য নয়।
২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর দুপুরে পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডের পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে স্থাপিত ঢাকার এক নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালত ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায় ঘোষণা করেন।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী এবং মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আইভি রহমানসহ দলটির ২৪ নেতা-কর্মী নিহত হন।
গ্রেনেডের স্প্লিন্টারের আঘাতে আহত হন পাঁচ শতাধিক মানুষ। অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়েছেন। অল্পের জন্য বেঁচে যান শেখ হাসিনা। তবে গ্রেনেডের বিকট শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়।
বিএনপি ও তার সহযোগীরা বারবার নানাভাবে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে। একের পর এক হামলা চালানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার ওপর। এমনকি তার সন্তানও ষড়যন্ত্র থেকে মুক্তি পাননি।
প্রধানমন্ত্রী বিএনপির ষড়যন্ত্র উল্লেখ করতে গিয়ে ২০২০ সালে তার বক্তৃতায় বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মদদে যুক্তরাষ্ট্রে বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র ও প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। এফবিআইর তদন্তে এই হত্যাচেষ্টার ঘটনা বের হয়ে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এক বিএনপি নেতা তারেক জিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করেই জয়কে হত্যার চেষ্টা করেছিল। এ জন্য সেখানে তার সাজাও হয়েছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সফর করেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। তার সঙ্গে নানা প্রসঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।
একই সঙ্গে বিএনপির প্রতিনিধিদলও সাক্ষাত করেছে তার সঙ্গে। ২০০৪ সালে দেশনেত্রী শেখ হাসিনা ছিলেন প্রধান টার্গেট, এবং হামলার মধ্য দিয়ে দল হিসেবে আওয়ামী লীগ ও এর নেতাকর্মীদের নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল উল্লেখ করে সেলিম মাহমুদ বলেন, হামলায় সরাসরি মদতদাতা দলটি এখনও মানবাধিকারের কথা বলে। এটা আমাদের দুর্ভাগ্য। ‘সো কল্ড’ বিরোধী দল বিএনপি জাতিসংঘের হাইকমিশনারের কাছে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে হাজির হয়। কিন্তু এদের নেতারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরে একাধিকবার উদ্যোগ নিয়েছে তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও আওয়ামী লীগকে নির্মূল করার। ২১ আগস্ট কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল না। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট, নভেম্বরের জেলহত্যা, শেখ হাসিনার ওপর বারবার হামলা করতে করতে সবচেয়ে বড় হামলা হিসেবে সামনে আছে ২১ আগস্ট ২০০৪। তারা বার বার চেষ্টা করেছে স্বাধীন বাংলাদেশের আদর্শ চেতনা ধারণ করে যে দল, সেই আওয়ামী লীগকে নির্মূল করতে।
উল্লেখ্য, জার্মানিতে অবস্থান করার কারণে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক ঘটনা থেকে বেঁচে শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি। ১৫ আগস্ট বেঁচে গেলেও ঘাতকের বুলেট তাঁর পিছু ছাড়েনি।
দেশে ফেরার পর পিতার মতো তাঁকেও হত্যার চেষ্টা হয়েছে বারবার। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রপতি থাকাকালে দুবার, ১৯৯১ থেকে ’৯৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে চারবার, ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে চারবার, ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে চারবারসহ আরও বেশ কয়েকবার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
বাংলা ট্রিবিউন
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-