চট্টগ্রাম •
চুরির অভিযোগ পেয়ে ছেলে মো. হাছানকে (১৪) শাসন করতে গিয়েছিলেন মা। এ সময় মা-ছেলের মধ্যে হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে ছেলেকে ধাক্কা দেন মা কুলসুম বেগম (৩৮)। এতে হাছান ছিটকে পড়ে খাটের লোহার অ্যাঙ্গেলের সঙ্গে লেগে মাথায় গুরুতর আঘাত পায়। কিছুক্ষণ পর রক্তক্ষরণে মৃত্যু হয় হাছানের।
নিহত হাছান চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী থানার ওয়ার্লেস কলোনি এলাকার বেলাল হোসেনের ছেলে। তাদের বাড়ি মাগুরা জেলায় বলে জানা গেছে।
সোমবার (৮ আগস্ট) রাতে আকবরশাহ থানার বিশ্বকলোনিতে এই ঘটনা ঘটে।
পুলিশ জানায়, হাছানের বাবা বেলালের দুই স্ত্রী। প্রথম স্ত্রী কুলসুম বেগম নগরীর আকবরশাহ থানার বিশ্বকলোনি আল হেরা মসজিদ গলিতে আলাদা বাসায় বসবাস করেন। কুলসুমার ভাই ফারুকও পাশাপাশি আরেক বাসায় থাকেন।
আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, বিশ্ব কলোনির এক বাড়ির মালিক ৯৯৯-এ কল করলে আমরা গিয়ে লাশ উদ্ধার করি। ঘটনাস্থলে গিয়ে আমরা তথ্য পায়, হাছান বাসার চালের ভেন্টিলেটরে লোহার রডের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে। কিন্তু আলামত দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। তখন আমরা কুলসুমকে জিজ্ঞাসাবাদ করি। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে কুলসুম হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনায় ভীত হয়ে কুলসুম বেগম তার ভাই ফারুক ইসলামকে খবর দেন। দু’জন মিলে সেই ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিতে ছেলের লাশ ঝুলিয়ে রাখে বাসার চালের লোহার রডের সঙ্গে। পুলিশ লাশ উদ্ধার করতে গিয়ে হত্যাকাণ্ড নিশ্চিত হয়ে মা ও মামাকে গ্রেপ্তার করে। এরপরই ঘটনার নেপথ্যের রহস্য উদঘাটন হয়। এ ঘটনায় পুলিশ হাসানের মা কুলসুম বেগম (৩৮) ও তার ভাই ফারুক ইসলামকে (২৪) গ্রেপ্তার করে।’
ওসি ওয়ালী উদ্দিন বলেন, ‘রাত পৌনে ২টার দিকে হঠাৎ তারা বাসার বাইরে এসে চিৎকার করে কান্না শুরু করে। প্রতিবেশি আসমা আক্তার এলে তাকে বাসার বাইরে রেখে দরজার ফাঁক দিয়ে ওড়না কেটে লাশ নিচে নামায়। একজন চিকিৎসককেও ডেকে আনা হয়। তিনি এসে হাছানকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।’
‘এ ঘটনায় বেলাল হোসেন বাদী হয়ে কুলসুম ও ফারুককে আসামি করে আকবর শাহ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ কুলসুম ও ফারুককে তাদের বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে।’
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার কুলসুম ও ফারুককে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট কাজী শরীফুল ইসলামের আদালতে হাজির করা হয়। কুলসুম হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। আদালত দু’জনকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।’
ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে আমরা এটা নিশ্চিত হয়েছি যে, এটা কোনো পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড নয়। শাসন করতে গিয়ে প্রচণ্ড ক্রোধে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে মারধর করতে গিয়ে মা ছেলেকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে এ ঘটনা ঘটেছে। তবে মায়ের আঘাতেই ছেলের মৃত্যু হয়েছে এবং পরবর্তীতে সেটাকে আত্মহত্যা বলে আড়াল করার চেষ্টা করে আরও একটি অপরাধ সংঘটিত করেছেন তারা। একজন মায়ের হাতে ছেলের মৃত্যুর ঘটনা খুবই মর্মান্তিক।’
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-