টেকনাফ অফিস •
টেকনাফের গহীন পাহাড়ে কতিপয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারী মিলে গড়ে তুলেছে সংঘবদ্ধ অপহরণকারী চক্র। ওই চক্রটি স্থানীয় লোকজনকে অস্ত্রের মুখে জিন্মি করে পাহাড়ি এলাকায় নিয়ে যায়। সেখানে নির্মম নির্যাতনের পর হত্যার হুমকি দিয়ে পরিবারের কাছে মোটা অংকের মুক্তপণ দাবী করে। ওই চক্রের হাতে অপহরণের শিকার দুই কিশোরসহ ৪ জনকে উদ্ধার করেছে র্যাব ও পুলিশের যৌথ টিম। ধরা পড়ছে অপহরণকারী চক্রের এক সদস্যও।
উদ্ধারকৃতরা হলেন, আমিনুর রহমান (১৪), মোঃ নুর (১৩), মোঃ ইলিয়াস (৩৮) ও সৈয়দ আহাম্মদ (৬৫)। তারা টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের নোয়াখালীয়াপাড়ার ৯ নং ওয়ার্ড বাসিন্দা।
আটক ব্যক্তির নাাম ফরিদ আহমদ।
জানা গেছে, টেকনাফের শামলাপুর ইউনিয়নের নোয়াখালীয়া পাড়া এলাকা থেকে গত শুক্রবার ও রোববার স্থানীয় ৪ বাসিন্দাকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয় গহীন পাহাড়ে। সেখানে তাদের হাত-পা বেঁধে নির্মম নির্যাতন চালানো হয়। পরে পরিবারের কাছে ফোন করে অপহৃতদে আর্তনাদ শুনিয়ে চাওয়া হয় মুক্তিপণ। বিষয়টি জানাজানি হলে অপহৃতদের খোঁজে সোমবার রাতে র্যাব ও পুলিশের যৌথ টিম গহীন ‘গুরা পাহাড়ে’ সাঁড়াশি অভিযান শুরু করে। একপর্যায়ে অপহৃতদের ফেলে পালিয়ে যায় অপহরণকারীরা। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা চার জনের গায়ে এখনও স্পষ্ট নির্মম নির্যাতনের চিহ্ন। সেই ঘটনারই লোমহর্ষক বর্ণনা দেন অপহৃতরা।
উদ্ধার হওয়া আমিনুর রহমান জানায়, অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর পাহাড়ে তাদের প্রচুর মারধর করা হয়েছে। হাত-পা বেঁধে রাখা হতো সবসময়। অপহরণকারীরা ১১ জন ছিল। মারধরের যন্ত্রণা সইতে না পেরে আর্তনাদ করলে সেগুলো ফোন করে শোনানো হতো পরিবারের সদস্যদের। সোমবার রাতে র্যাব সদস্যরা ঘটনাাস্থলে পৌঁছানোর বিষয়টি টের পেয়ে হঠাৎ করে তারা উধাও হয়ে যায়।
ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে মঙ্গলবার দুপুরে কক্সবাজারে র্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এসময় র্যাব-১৫ এর উপ-অধিনায়ক মেজর আরেফিন সিদ্দিকী জানান, অপহরণকারীরা নিজেদের ‘আল ইয়াকিন’ নামে একটি সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে পরিবারের কাছে মুক্তিপণ দাবী করেছিল। ওই চক্রে আছে কতিপয় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী ও স্থানীয় কিছু দুষ্কৃতিকারী। অভিযানে চক্রের একজন ধরা পড়েছে র্যাবের হাতে।
তিনি জানান, অপহরণ চক্রের মূল হোতাকে সনাক্ত করা সম্ভব হলেও তার অবস্থান সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হওয়া সম্ভব হয়নি। তবে পুরো চক্রটিকে ধরতে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে র্যাব।
টেকনাফের গহীন পাহাড়ি এলাকা ঘিরে বহুদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে রোহিঙ্গাদের কয়েকটি সন্ত্রাসী চক্র। তারা অপহরণ, খুন, ডাকাতি, মাদক কারবারসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত। ইতোপূর্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে অপরাধ কিছুটা কমলেও পুরোপুরি নির্মূল করা যায়নি।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-