নিজের কেনা কাফনের কাপড়ে দাফন হলো হিশামের

চট্টগ্রাম •

হিশামের বৃদ্ধ নানা অসুখবিসুখে ভুগছেন। মুসাব আহমেদ হিশাম ধরেই নিয়েছিলেন তার নানা বোধহয় আর বেশিদিন বাঁচবেন না। পরিবারের সদস্যদের না জানিয়ে বাজার থেকে নানার জন্য একটি কাফনের কাপড় কিনে এনে নিজের ঘরে লুকিয়ে রেখেছিলেন। জানতে পেরে তার মেঝ চাচা বকাঝকাও করেছিলেন। কিন্তু নিয়তির কি নিষ্ঠুর পরিহাস; নিজের কেনা কাফনের কাপড় দিয়ে দাফন করতে হয়েছে ১৬ বছর বয়সী এ কিশোরকে!

সেই নানা বেঁচে আছেন, তার চোখের সামনে চলে গেলেন নাতি হিশাম। নানার জন্য কেনা সেই কাফন জড়িয়ে দাফন করা হয় হিশামকে। গল্পকে হার মানানো এমন হৃদয়বিদারক ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে হাটহাজারী উপজেলার চিকনদন্ডি ইউনিয়নের ইউনূস নগর খন্দকিয়া গ্রামের অবস্থাপন্ন গৃহস্থ প্রয়াত মোজাফফর আহমেদের পরিবারের সদস্যদের।

হিশামের মৃত্যুতে পরিবারের সদস্যরা শোকে মূহ্যমান, প্রতিবেশীদের ঘরেও শোকের ছায়া। হিশামকে হারানোর শোকের মধ্যে তার কাফনের কাপড় কেনার এই ঘটনা সবার মুখে মুখে ফিরছে।

দুই ভাই দুই বোনের সবার ছোট মোসাব আহমেদ হিশাম। দুই বছর বয়সে বাবা হারা হিশাম ছোট থেকে বড় হয়েছেন চাচাদের আদরে। বড় ভাই স্পেন এবং এক বোন কানাডা প্রবাসী। অপর বোন ঢাকার একটি স্কুলে শিক্ষকতা করেন। আড়াই বছর আগে তার মা গিয়েছেন বড় বোনের কাছে কানাডায়। ভিসা জটিলতায় নিজের সাথে হিশামকে নিতে পারেননি মা। এসএসসি পরীক্ষা শেষ হলে তারও কানাডায় চলে যাওয়ার কথা ছিল মা-বোনের কাছে। কিন্তু নিয়তি তাকে নিয়ে গেল পরপারে।

কান্নায় ভেঙে পড়ে চাচা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, হিশামের নানার বয়স ৮০ বছরের বেশি হয়েছে। সবসময় অসুস্থ থাকেন। যে কোনো সময় মারা যেতে পারেন। সেজন্য হিশাম আমাদের কাউকে কিছু না বলে বাজার থেকে কাফনের কাপড় কিনে এনে ঘরে রেখে দিয়েছিল। আমার মেঝভাই (আকবর) জানতে পেরে তাকে ধমক দিয়েছিল। মেঝভাই তাকে বেশি দেখাশোনাও করত। আজ সেই কাফনের কাপড় পরিয়ে তাকে আমরা কবরে শুইয়ে এসেছি।

চাচা মোহাম্মদ হোসেন বলেন, হিশাম কোচিং সেন্টার থেকে পিকনিকে যাওয়ার বায়না ধরলেও আমার মেঝভাই তাকে যেতে দিতে চাননি। কিন্তু কোচিং সেন্টারের শিক্ষক এবং গৃহশিক্ষক রাকিবের অনুরোধে পিকনিকের আগের দিন বৃহস্পতিবার আমার মেঝভাই তাকে যেতে দিতে রাজি হয়েছিলেন। হিশামের সাথে তার শিক্ষক রাকিবও পাড়ি জমিয়েছেন পরপারে।

তিনি বলেন, পিকনিকের আগে মায়ের সাথে ভিডিও কলে কথা বলে বিদায় নেয় হিশাম। সকাল ১০টায় সেখানে পৌঁছানোর পর আমাকে জানিয়েছে নিরাপদে পৌঁছেছে তারা। কিন্তু দুপুরে জুমার নামায শেষে বের হওয়ার পর শুনতে পেলাম খৈয়াছড়ায় ট্রেন মাইক্রোবাসের সংঘর্ষের খবর। এ সময় হিশামের মোবাইলে ফোন করলে সেটি বন্ধ পেয়ে বাড়িতে এসেই সবার সাথে কথা বলে ছুটে যাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে আহত অবস্থায় আনা সাতজনের মধ্যে তাকে না পেয়ে আমাদের আর বুঝতে বাকি রইলো না কিছুই।

মোহাম্মদ হোসেন যখন আজাদীর সাথে কথা বলছিলেন তখন পাশে দাঁড়িয়ে কান্না করছিলেন হিশামের বন্ধুরা। অন্যদিকে তার চাচা আকবরকে শান্ত্বনা দিচ্ছিলেন প্রতিবেশীরা।

আরও খবর