জামাই, শ্বশুর ও মেয়ের মধ্যে বিপুল অর্থের হাতবদল

‘দানে দানে’ সম্পদের পাহাড়

আহমেদ কুতুব, চট্টগ্রাম •

এ এক বিরল ‘দানের’ খেলা সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ দম্পতির। কখনও তিনি শ্বশুরকে অর্থ দান করেছেন। কখনও শ্বশুর তাঁর জামাই কিংবা মেয়েকে দিয়েছেন কোটি কোটি টাকা। উপহার দিয়েছেন দেড় কোটি টাকার ৬ তলা বাড়ি ও প্রাইভেটকার। ভাই দান করেছেন বোনকে লাখ লাখ টাকা! এতে প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারন গৃহিণী হয়েও বনে যান কোটিপতি।

দুদকের কাছে নিজেকে কমিশন ও মৎস্য ব্যবসায়ী দাবি করলেও কোনো দলিল দিতে না পারায় আদালতের চোখে বিপুল অবৈধ সম্পদের মালিক হওয়ায় ২১ বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন তিনি। সামান্য হার্ডওয়্যার ব্যবসায়ী হলেও তাঁর বাবা অজিত কুমার কারন এই মেয়েকে বাড়ি, গাড়ি দিয়ে ‘বিরল’ ভালোবাসা দেখালেও অন্য দুই সন্তানকে কিছু দান করার প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

প্রদীপ ও চুমকির বিরুদ্ধে দুদকের একটি মামলার রায় গতকাল বুধবার ঘোষণা করেন চট্টগ্রামের একটি আদালত। পর্যবেক্ষণে বলা হয়, প্রদীপ পুলিশে থাকার সময় তাঁর ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হন এবং সেই টাকা দিয়ে স্ত্রীর নামে জমি, ফ্ল্যাট, বাড়ি, গাড়ি ইত্যাদি স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তির পাহাড় গড়েন। এর বড় একটি অংশ প্রদীপ তাঁর স্ত্রী চুমকি ও শ্বশুর অজিতকে দানের মাধ্যমে বৈধ করার চেষ্টা করেছেন।

জানা গেছে, অজিত তাঁর মেয়ে চুমকিকে চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটায় ‘শান্তিকুঞ্জ’ নামে দেড় কোটি টাকার সাড়ে ছয়তলা বাড়ি দান করেন। এর আগে প্রদীপ তাঁর শ্বশুরকে ৯ লাখ টাকা দান করেন। পরে এই মেয়ের প্রতি অধিক ভালোবাসা থেকে বাবা অজিত তাঁকে একটি প্রাইভেটকার দান করেন।

একইভাবে স্বজনদের থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ১২০ ভরি স্বর্ণালংকার উপহার পান চুমকি। উপহার ও দানের পাশাপাশি চুমকি তাঁর ভাইয়ের থেকে ৪ লাখ ৯৮ হাজার টাকা ঋণও পান। এভাবে বাবা, ভাই ও স্বামী একে অপরকে শুধু দানই করে গেছেন বছরের পর বছর!

তবে অপর দুই ছেলে উজ্জ্বল কারন ও শিমুল কারনকে কোনো সম্পদ দান করার রেকর্ড আদালতে উত্থাপন করতে পারেননি অজিত। এসব দানের বিপরীতে অর্থের বৈধ উৎস দেখাতে না পারায় ফেঁসে গেছেন প্রদীপ ও চুমকি। অর্থ ও কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন, বাজেয়াপ্ত হয়েছে তাঁদের বিপুল সম্পদও।

পাঁচ পুকুরে দেড় কোটি টাকা আয়ের তথ্য ভুয়া :চট্টগ্রামের বোয়াখালীতে পাঁচটি পুকুর মাছ চাষের জন্য কথিত সাড়ে ১৬ লাখ টাকায় লিজ নেন চুমকি। এগুলো থেকে ১০ বছরে দেড় কোটি টাকা আয় হয় বলে আয়কর নথিতে উল্লেখ করেন তিনি। তবে এর পেছনে কোনো বৈধ প্রমাণ নেই বলে দুদককে জানিয়েছেন বোয়ালখালী উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা তাছলিমা আক্তার।

অস্তিত্ব নেই কমিশন ব্যবসার :গৃহিণী চুমকি নিজেকে কমিশন ব্যবসায়ী বললেও এর প্রমাণ আদালতে দিতে পারেননি। ২০১৩-১৪ সালে ১১ লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়ে কমিশন ব্যবসা শুরুর কথা জানিয়ে ওই বছরই দুই লাখ ৮০ হাজার টাকা লাভ করার দাবি করেন, কিন্তু তিনি কমিশন ব্যবসার ট্রেড লাইসেন্স, ব্যাংক লেনদেন- কিছুই আদালতে দাখিল করতে পারেননি। তিনি সরকারি কর্মকর্তার স্ত্রী হিসেবে ব্যবসার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতিপত্র, ব্যাংক স্টেটমেন্ট, বিল, ভাউচার, অফিস, গুদামের রেকর্ডপত্রও প্রদর্শন করতে পারেননি।

আরও খবর