বাংলানিউজ •
কক্সবাজারের টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশন ছিল ২৩ জুলাই (শনিবার)। বিতর্কিত নানা সিদ্ধান্তের কারণে সংগঠনটির স্বয়ং সভাপতিসহ দলের বড় একটি অংশ কাউন্সিল অধিবেশন বয়কট করেন।
এরমধ্যেই টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সভাপতি করা হয় সাবেক বিতর্কিত সংসদ সদস্য (এমপি) আবদুর রহমান বদিকে।
দলীয় নেতাকর্মীরা জানান, রোববার (২৪ জুলাই) সকাল ১১টায় ত্রিবার্ষিক সম্মেলনের প্রথম পর্বের উদ্বোধন অধিবেশন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এক পক্ষের’ বয়কটের কারণে তা বিকেল ৩টায় শুরু হয়।
এমনকি অধিবেশনে পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো. ইউছুফ মনু সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সভাপতিত্ব করেন সহ সভাপতি আব্দুল জলিল।
অনুষ্ঠানে দলের বড় একটি অংশ অনুপস্থিত থাকায় এবং উপস্থিত কাউন্সিলদের মধ্যে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আব্দুর রহমান বদিকে সভাপতি ও মোহাম্মদ আলম বাহাদুরকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়।
সম্মেলনের কাউন্সিলর অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশর, টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী ও তাদের সমর্থকরা।
জাবেদ ইকবাল চৌধুরী বলেন, কেন্দ্রীয়, জেলা, উপজেলা নেতাদের সমন্বয়ের পর ১২ জুলাই আমার সভাপতিত্বে পৌর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সিদ্ধান্ত হয়, গঠনতন্ত্রের আলোকে ওয়ার্ড কমিটি গঠন ও কাউন্সিরর তালিকা প্রণয়নসহ পৌর আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতারাসহ সম্মেলন ও কাউন্সিল অধিবেশন আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কিন্তু তা না করে এমনকি পৌর আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সভা না ডেকে, কোনো কিছু অনুমোদন ছাড়াই একজনকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বানিয়ে ২৩ জুলাই সম্মেলন আয়োজন করে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিম। যে বিষয়টি আমি নিজেও অবগত নই।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান ভাইকে লিখিতভাবে অভিযোগ করি। তিনি আমাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছেন, সম্মেলন সাত দিন পেছানো হবে। এ সময় শুধু তিনি নন, জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, যুগ্ম সম্পাদক অ্যাডভোকেট রনজিত দাস, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাপস রক্ষিতসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
কিন্তু কী কারণে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক টিমের কয়েকজন ও জেলা সাধারণ সম্পাদক মহোদয় অনিয়মের সম্মেলনে উপস্থিত হলেন তা আমার বোধগম্য নই। যে কারণে আমার নৈতিক অবস্থান থেকে আমি কাউন্সিল বয়কট করেছি। কারণ এটি বৈধ কাউন্সিল নয়। একইভাবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল বশরও এ অনুষ্ঠান বয়কট করেন।
তিনি বলেন, টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রথম অধিবেশনের পর পৌর কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। যেখানে বর্তমান সভাপতি জাবেদ ইকবাল চৌধুরী অনুপস্থিত ছিলেন। কাউন্সিলর তালিকার অনুমোদন নেই, এটিও অবৈধ। যে কারণে আমিসহ অনেকই বর্জন করেছে। এছাড়া তিনি কাউন্সিলর তালিকায় মাদক মামলার বিচারাধীন আসামি, দুর্নীতি মামলার সাজাপ্রাপ্ত ও বিচারাধীন আসামিসহ অনেক বিতর্কিত লোকজন রয়েছেন বলে জানান।
আবদুর রহমান বদি দশম সংসদে কক্সবাজার-৪ আসনের (উখিয়া-টেকনাফ) এমপি ছিলেন। মাদক ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগে ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে নির্বাচনে এ আসনে তার বদলে তার স্ত্রীকে মনোনয়ন দেয় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।
সবশেষ তিনি আলোচনায় আসেন চলতি বছরের ২২ এপ্রিল টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের হলরুমে পৌর আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা ও ইফতারপার্টিতে মারধরের ঘটে। সেদিন তিনি টেকনাফ পৌর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ইউছুপ মনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইউছুপ ভুট্টোকে মারধর করেন বলে অভিযোগ উঠে। যদিও এ সময় আওয়ামী লীগ নেতা বদি দাবি করেন, মারধর নয়, তিনি তার ‘আত্মীয়দের শাসন করেছেন’ মাত্র।
এ বিষয়ে আব্দুর রহমান বদি বলেন, পৌর আওয়ালী লীগের সভাপতি হওয়ার আমার মোটেও ইচ্ছে ছিল না। নেতাকর্মীরা জোর করেছেন, তাই ইচ্ছাপোষণ করেছি।
উল্লেখ্য, আব্দুর রহমান বদি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদক তালিকায় পৃষ্ঠপোষক হিসেবে আবদুর রহমান বদির নাম আছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলাতেও তিনি অভিযুক্ত।
বিভিন্নজনকে মারধরসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে আলোচিত-সমালোচিত সাবেক এই সংসদ সদস্যের পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার বিষয়টিকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন দলীয় নেতাকর্মীরা। নিজ দলেই এটা নিয়ে চলছে তুমুল সমালোচনা।
এর আগে ২০১৩ সালের ১১ জানুয়ারি পৌর আওয়ামী লীগের গত কমিটির সম্মেলন হয়েছিল। তখন ৬৫ সদস্যের কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন জাবেদ ইকবাল চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলম বাহাদুর।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-