কক্সবাজারে ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে ইভটিজিং

ওমর ফারুক হিরো •

শহরের গোলদিঘীর পাড় দিয়ে যাচ্ছিল স্কুল ব্যাগ কাঁধে থাকা দুই কিশোরী। তারা যখনই ঘোনার পাড়ায় প্রবেশ করছিল ঠিক তখনই আগে থেকে দাঁড়িয়ে থাকা ৪-৫ জন যুবক তাদের গতিরোধ করে। ওই যুবকরা খুবই উশৃংখল এবং মারমুখী ছিল।

তাদের মধ্যে একজন কিশোরীদের খুব অশ্লীল ভাষায় গালি দিচ্ছিল এবং মারমুখি ছিল। এক পর্যায়ে কিশোরীর ব্যাগ টান দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। দুই কিশোরী খুবই আতংকিত এবং কান্না করছিল। এরই মধ্যে বুঝা যায় ওই যুবকদের মধ্যে রবিন নামে একজন কিশোরীকে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। প্রস্তাবে রাজী না হওয়ায় এই অবস্থা। রবিন হুমকি দেয় যদি প্রেমে রাজী না হয় তাহলে স্কুল-প্রাইভেট সব বন্ধ করে দেবে। ঘর থেকে বের হলে তুলে নিয়ে খারাপি করবে। এই ঘটনায় অনেক মানুষ জড়ো হলেও কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছিল না। পরে স্থানীয় কিছু মুরব্বী প্রতিবাদ করলে যুবকরা সরে যায়। পরে জানা যায়, দুই বান্ধবী প্রাইভেট শেষে বাড়ি ফিরছিল। এরই মধ্যে এই ঘটনা।

শনিবার সন্ধ্যা ৬ টার দিকে এই ঘটনা ঘটে। এই তথ্যগুলো জানান প্রত্যক্ষদর্শী ইমরান হাসান ও মোবারক নামে দুই কলেজ ছাত্র। যারা গোলদিঘীর পাড়ে বসে গল্প করছিল।

এছাড়া শহরের বিমান বন্দর সড়কস্থ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্রী সুইটি (ছদ্মনাম) স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে স্থানীয় কিছু যুবক নানা অশ্লিল কথা ও অঙ্গি-ভঙ্গি করে বিরক্ত করত। এই নিয়ে ওই ছাত্রীর ভাই প্রতিবাদ করলে তাকে ব্যাপক মারধর করা হয়। এ অবস্থায় মেয়েটির পরিবার খুবই আতংকিত।

শুধু এই দুই ঘটনা নয়। শহরে দিন দিন ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে ইভটিজিং। কখনো গতিরোধ, কখনো অশ্লিল ভাষা-অঙ্গিভঙ্গি আবার কখনো ওড়না বা কাপড় ধরে টান দেওয়া হচ্ছে। আবার ইভটিজারদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে পড়তে হয় বিপদে। তারা সঙ্গবদ্ধ এবং ভয়ংকর প্রকৃতির হওয়ায় অনেকে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার সাহস পায়না। প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেক সহপাঠী, শিক্ষক, ভাই-বাবা, বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয়-স্বজনকে লাঞ্চিত হতে হয়েছে। মারধরের শিকার হয়েছে। এমনকি ইভটিজারদের হাতে খুন পর্যন্ত হয়েছে।

প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, শহরের প্রায় ৫-৬ টি পয়েন্টে ইভটিজারদের অবস্থান বেশি দেখা যায়। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন গোলদিঘীর পাড়া, বাইতুশ শরফ সংলগ্ন বইল্লা পাড়া, সৈকত বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন বিমান বন্দর সড়ক সহ আরো ৫-৬ টি পয়েন্ট।

সম্প্রতি বেড়ে যাওয়া ইভটিজিং এর প্রসঙ্গে কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মুজিবুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) একটি স্ট্যাটাস দেন। যেখানে লিখা হয়, ‘মেয়েদের গায়ে হাত, কাপড় ধরে টান, পথ আগলে ধরা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে কিশোর গ্যাং এর ভয়ানক উৎপাত দৃশ্যমান। রুখে দাড়াতে হবে এদের। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

এই স্ট্যাটাসের শত কমেন্টের (মন্তব্য) মধ্যে কক্সবাজারের বিকশিত নারী নেটওয়ার্ক এর সভাপতি শামীমা আকতার লিখেন, ‘ইভটিজিং একটি গর্হিত অপরাধ। এটির বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন সহ প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়া জরুরী। অন্যথায় কন্যাশিশুরা পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়বে। নারীর অগ্রযাত্রা চরমভাবে ব্যাহত হবে।’

মোহাম্মদ রিয়াদ নামে একজন লিখেন ‘সমাজে এই ধরণের কর্মকান্ড দিন দিন বেড়েই চলছে, সমাজের প্রত্যেক জনসাধারণের এই সব কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তীব্র অবস্থান নিতে হবে তা ছাড়া এইগুলো রুখে দেওয়া সম্ভব হবেনা।’

সাকিব আল ছিদ্দিন নামে আরেকজন লিখেন, ‘সম্প্রতি খুব বাজে অবস্থা এই পর্যটন শহরের। কিশোর গ্যাং শব্দটা একটা আতংকের নাম। আইনের পাশাপাশি এদেরকে স্থানীয়ভাবে প্রতিরোধ করতে হবে।’ এই অব্যবস্থাপনার জন্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন।

এ ব্যাপারে কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর উল গীয়াস জানান, প্রশাসন সমসময় কঠোর অবস্থানে রয়েছে ইভটিজিং এর বিরুদ্ধে। স্কুল-কলেজ সহ যেসব পয়েন্টে ইভটিজিং এর আশংকা রয়েছে ওখানেই প্রশাসনের লোকজন দায়িত্ব পালন করে। এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে তা গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। এ বিষয়ে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয়দের এগিয়ে আসা দরকার। এছাড়া কিশোর গ্যাং দের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

আরও খবর