কক্সবাজারে ৬ রোহিঙ্গার ৭ বছর করে কারাদন্ড

মুহাম্মদ আবু সিদ্দিক ওসমানী :

৮০ হাজার পিচ ইয়াবা পাচারের মামলায় ৬ জন রোহিঙ্গার প্রত্যেককে ৭ বছর করে সশ্রম কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। রায়ে একইসাথে আসামীদের প্রত্যেককে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদন্ড, অর্থদন্ড অনাদায়ে আরো ৬ মাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করেছেন আদালত।

কক্সবাজারের সিনিয়র জেলা ও দায়রা মোহাম্মদ ইসমাইল বুধবার ৬ জুলাই আসামীদের উপস্থিতিতে এ রায় ঘোষণা করেন।

সাজাপ্রাপ্ত রোহিঙ্গা আসামিরা হচ্ছে-মায়ানমারের আকিয়াব জেলার ফতুর থানার অনারেং ক্যাম্পের মৃত বদিউর রহমানের পুত্র আবদুল মোনাফ (৬৫), মৃত ওছি উল্লাহ’র পুত্র মোঃ ইসমাইল (৪৭), মৃত শফিকের পুত্র মোঃ নুর হোসেন (৩২), মৃত আলী হোসেনের পুত্র মোঃ হোসেন (২৮), মৃত আবদুল মজিদের পুত্র মোঃ দুদু মিয়া (৪০) এবং মৃত বশত আলীর পুত্র মোঃ আমির (৩৮)।

রাষ্ট্র পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন-পিপি অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম। অপরদিকে, আসামীদের পক্ষে অ্যাডভোকেট আবু হেনা মোস্তফা কামাল ও অ্যাডভোকেট সেলিম উদ্দিন রাজু উক্ত মামলা পরিচালনা করেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণ :

২০১৭ সালের ১৫ এপ্রিল দুপুর দেড়টার দিকে টেকনাফের সেন্টমার্টিন দ্বীপের প্রায় ২ নটিকেল মাইল পূর্বে মায়ানমার সমুদ্র সীমা থেকে একটি কাঠের তৈরি ইঞ্জিন চালিত বোট বাংলাদেশের সমুদ্র সীমায় অনুপ্রবেশ করে। সেখানে দায়িত্ব পালনরত কোস্ট গার্ডের সদস্যরা বোটটি আটক করে। কোস্ট গার্ড সদস্যরা বোটের মধ্যে থাকা উল্লেখিত সাজাপ্রাপ্ত ৬ জন মায়ানমারের নাগরিককে আটক করে। পরে আটক মায়ানমারের নাগরিকদের হেফাজতে থাকা একটি প্লাস্টিকের বস্তা ভেতর থেকে কোস্ট গার্ডের সদস্যরা ৮০ হাজার পিচ ইয়াবা টেবলেট উদ্ধার করে।

এ ঘটনায় টেকনাফের সেন্টমার্টিন কোস্ট গার্ড স্টেশনের সিনিয়র চীফ পেটি অফিসার এম. সিরাজুল ইসলাম বাদী হয়ে ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ৯(খ) ধারায় টেকনাফ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। যার টেকনাফ থানা মামলা নম্বর : ৫৭/২০১৭ ইংরেজি, জিআর মামলা নম্বর : ৩২৫/২০১৭ ইংরেজি এবং এসটি মামলা নম্বর : ২৭৬/২০১৮ ইংরেজি। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) টেকনাফ থানার এসআই মোঃ আবুল খায়ের তদন্ত করে ২০১৭ সালের ২ অক্টোবর আদালতে মামলাটির চার্জশীট (অভিযোগপত্র) দাখিল করেন।

বিচার ও রায় :

মামলাটি জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত থেকে কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচারের জন্য বদলী হয়ে আসে। জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ২০১৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারী মামলাটির চার্জ (অভিযোগ) গঠন করা হয়।

মামলায় ৫ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ, আসামীপক্ষে সাক্ষীদের জেরা, আলামত প্রদর্শন, রাসায়নিক প্রতিবেদন যাচাই, আসামীদের আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ, যুক্তিতর্ক সহ বিচারের সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে কক্সবাজারের বিজ্ঞ সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল ১৯৯০ সালের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১) এর ৯(খ) ধারায় আসামীদের দোষী সাব্যস্থ করে বুধবার উপরোক্ত রায় ঘোষণা করেন।

আসামীরা মায়ানমার নাগরিক হওয়ায় তাদের সাজা ভোগ শেষ হলে মায়ানমারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের হস্তান্তরের ব্যবস্থা নিতে কক্সবাজার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট’কে রায়ে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও খবর