প্রতিনিয়ত নিধন হচ্ছে পাহাড়

উখিয়ায় ইজারার শর্ত মানছেনা বালি ও পাহাড় খেকোরা!

রতন কান্তি দে •

কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীর থাইংখালীতে বালুমহাল শর্ত সাপেক্ষে ইজারা দিয়েছে জেলা প্রশাসন। সেসব শর্ত না মেনে বালুমহালের বাইরে থেকে শর্ত ভেঙে ড্রেজার মেশিন বসিয়ে বালু উত্তোলন ও পাহাড়ের মাটি কেটে পাচার করা হচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মেসার্স শাহ আমানত ট্রেডার্স লাইসেন্সে বালুমহাল ইজারা নিয়েছেন শাহীনুল হক মার্শাল নামের এক ব্যবসায়ী।

তার কাছ থেকে উপ-ইজারা নিয়েছেন রশিদ, খাইরুল বাশার, নুরুল বাশার, আক্তার কামাল পুইক্কা, মিজান, মমতাজ, হেলাল। তারা এলাকাভিত্তিক সিন্ডিকেট করে বালু তুলছে ও পাহাড় কাটছে । এতে বাধা দেওয়ার কেউ নেই।

অভিযোগ রয়েছে তারা ইজারা নেওয়ার পর থেকেই শুধু বালু আহরণ নয়, একেবারে খাল ও আশপাশের পাহাড় কেটে ও মাটি খুঁড়ে বালু তুলে নিয়ে যাচ্ছেন। তারা এক নং খাস খতিয়ানের বিএস দাগ নং ৬৯, ৫১৩, ৫৩৯ এই তিন অংশের বাইরে ১০ কিলোমিটারের বনাঞ্চলে ভেতরের তেলখোলার পরে পেচারমোরা, রিদুরঘোনা, গর্জনখোলা, বড়ইতলী, তুইপ্পাখালীসহ ৬০-৬৫ পাহাড় হতে মাটি কেটে পাচার করছে দেদারসে।

পাহাড় গুলো এখন ন্যাড়া এবং এর আশেপাশের খাল গুলোতে বালু নেই বললেই চলে। অনেকের অভিযোগ ইজারার কাগজ ব্যবহার করে পাশের সংরক্ষিত বনভূমি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি থেকে বালু ও মাটি লুট করে যাচ্ছেন তারা।

পরিবেশ অধিদপ্তর, উপজেলা প্রশাসন ও বন বিভাগ প্রায় সময় অবৈধভাবে বালু তোলার বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে জরিমানা ও মামলা দিয়েও তা রোধ করতে পারছে না।

বনবিভাগের দাবি, জেলা বালুমহাল কমিটির এক নম্বর খাস খতিয়ানের জায়গায় থেকে বালু তোলার জন্য ইজারা দেওয়া হলেও ইজারাদাররা বন বিভাগের এলাকায় ঢুকে বালু তুলছে, যা মহাল আইনে বেআইনি। কারণ সংরক্ষিত বন থেকে বালু তোলার কোনো বিধান নেই।

এ ব্যাপরে সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন নজরদারি নেই বলেও স্থানীয়রা জানান।

তারা বলেন, পাহাড় থেকে নেমে আসা খাল ও ছড়ার এ মহালগুলোতে বালু উত্তোলনের নামে পাহাড় নিধন ও জমির শ্রেণি পরিবর্তন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বাপার উখিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জসিম আজাদ বলেন, উখিয়ার পাহাড়ি এলাকায় নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বালু তোলা হচ্ছে। এতে এসব এলাকার সমৃদ্ধ সংরক্ষিত বন উজাড়ের পাশাপাশি পাহাড় ধ্বংস হয়ে বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত বালি সিন্ডিকেটের সদস্য আবদুর রশিদ জানান, ইজারার সরকারি চুক্তি অনুযায়ী খাল থেকে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। তবে, ইজারার মূল্য বেশী হওয়ায় আগের ইজারাদাররা যে কায়দায় বিভিন্ন স্থান থেকে বালু উত্তোলন করছে আমরাও সে প্রক্রিয়ায় বালু উত্তোলন করে যাচ্ছি। তবে সে স্থান গুলো বনবিভাগের কিনা আমাদের জানা নেই। আমাদের ১২জন সদস্য এই বালু ব্যবসা পরিচালনা করছি।

এ ব্যাপারে স্থানীয় চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন জানান, প্রকৃত ইজারাদার থেকে উপ-ইজারাদার রশিদ ও খাইরুল বাশার গংরা
উপ ইজারা নিয়ে সরকারি চুক্তি লংগন করে বনভূমির গহীন বনাঞ্চলের ৫০-৬০টি পাহাড় থেকে প্রতিদিন ড্রেজার মেশিনের মাধ্যমে কমপক্ষে ছয়শো গাড়ি বালি উত্তোলন করে পাচার করছে। কয়েকদিন আগে অবৈধ পাহাড়ি ভর্তি ৪টি গাড়ি আটক করা হলে অভিযুক্তরা দোষ স্বীকার করে ভবিষ্যতে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করবেনা মর্মে অঙ্গিকারনামা প্রদান করলে তাদের গাড়ি ছেড়ে দেওয়া হয়।

থাইংখালী বিট কর্মকর্তা রাকিব হোসেন এ প্রসঙ্গে জানান, বনবিভাগের বিট অফিসে জনবল সংকট রয়েছে। ইতোপূর্বে যে পাহাড়ি অঞ্চল থেকে অবৈধভাবে বালি উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয় এবং বালিখেকো সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে মামলাও করা হয়। এ অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাছাড়া গত মাসের ১৩ ও ২৩ জুন ৪টি মাটিভর্তি গাড়ি জব্দ করে মামলা দেওয়া হয়।

উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা গাজী শফিউল আলম জানান, পাহাড় ও বালুখেকো যতই শক্তিশালী হোক, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আমরা প্রস্তুত আছি।

তিনি আরও জানান, পরিবেশ রক্ষায় স্থানীয় জনসাধারণ ও জনপ্রতিনিধিদের এগিয়ে আসতে হবে।

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কক্সবাজার দক্ষিণ সারোয়ার আলম জানান, সরকারি বনভূমি ও পাহাড়ের বৈচিত্র রক্ষায় বনবিভাগের অবস্থান স্পষ্ট। বিভিন্নসময় বালু ও পাহাড় খেকোদের ড্রেজার মেশিন আটক ও গাড়ি জব্দ এবং মামলা দায়েরের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। ভবিষ্যতে আরো কঠোরভাবে ভূমি ও বনদস্যুদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে, গত ২৯ জুন উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ ব্যাপারে ভূমি ও বালুখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।