আবদুল্লাহ আল আজিজ, কক্সবাজার জার্নাল :
সাম্প্রতিককালে সারাদেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের হার দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাওয়ায় দোকান, শপিংমল, বাজার, ক্রেতা-বিক্রেতা, হোটেল রেস্টুরেন্টে সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরিধান করতে নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
কিন্তু জনসাধারণের মধ্যে মাস্ক পরিধান এবং স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণে নেই আগ্রহ। অনেকের ধারণা, করোনার টিকা নেয়ার ফলে মাস্ক পরার দরকার নেই। বেশিরভাগ মানুষের এ নিয়ে রয়েছে উদাসীনতাও। একই সঙ্গে মাস্ক পরা নিয়ে মানুষের আগ্রহ কম থাকায় কমেছে মাস্কের বিক্রি।
রোববার উখিয়ার বিভিন্ন বাজার ঘুরে মানুষের মাস্ক না পরার এমন প্রবণতার চিত্র দেখা গেছে।
উখিয়া বাজারে দেখা হয় এনজিওকর্মী মোহাম্মদ জিসানের সঙ্গে। মুখে মাস্ক নেই কেন এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মাস্ক পরতে ভুলে গেছি। আর অনেক দিনের অভ্যাস তো, তাই মাঝে মাঝে ভুলে যাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘টিকা তো নিয়েছি, তাই মাস্ক পরা নিয়ে আমার তেমন মাথাব্যাথা নেই।’
একই অবস্থা দেখা গেল ক্যাম্প থেকে চাকরি শেষে ফেরা মিজান ও রশিদের বেলায়ও। জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘সবসময়ই মাস্ক পরি। আজ মাস্ক পরা হয়নি। আর আমরা তো দুই ডোজ টিকাও নিয়েছি। তাই মাস্ক পরা নিয়ে তেমন একটা ভাবছি না।’
মাস্ক পরা নিয়ে অবশ্য ভিন্নমত রয়েছে কোটবাজারের প্রবীণ ব্যবসায়ী মুফিজ মিয়ার। তার দাবি, মাস্ক পরলেও করোনা ঠেকানো যাবে না।
তিনি বলেন, ‘মরণ যখন আসবে তা কেউ ঠেকাতে পারবে না। মাস্ক পরলেই কী করোনা ঠেকানো যাবে? মাস্ক পরে কী হবে? কিছুই হবে না। কপালে যা আছে তাই হবে।’
এ দিকে মাস্ক নিয়ে মানুষের উদাসীনতার বিষয়টির প্রভাব পড়েছে মাস্ক বিক্রির দোকানগুলোতেও। সেখানে আগের মতো মাস্ক বিক্রি হচ্ছে না।
জানতে চাইলে কোটবাজার জাগির এন্ড সন্স ফার্মেসীর নীরব বলেন, ‘যখন করোনা খুব বেড়েছিল তখন দিনে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকার মাস্ক বিক্রি করতাম, আর এখন তা এক থেকে দেড় হাজারে নেমে এসেছে।’
একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন কোটবাজারের ফরিদ মেডিকোর সত্বাধিকারী নিশাত। তিনি বলেন, ‘আগের মতো মাস্ক বিক্রি হচ্ছে না। মানুষ ধারণা করছে, টিকা যেহেতু নেয়া হয়েছে তাই মাস্ক পরার দরকার নেই। আগে ৫০-৬০ বক্স মাস্ক বিক্রি করলেও এখন তা ১০-১৫ বক্সে নেমে এসেছে।’
অন্যদিকে, কোরবানি হাট গুলোতেও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই নেই। দুই শিশু ছেলেসহ হাটে এসেছেন থাইংখালী এলাকার ইব্রাহীম মিয়া। তাদেরকে গরুর একপাল থেকে আরেক পালে ঘুরে ঘুরে দাম-দর করতে দেখা যায়।
জিজ্ঞেস করতেই মাঝবয়সী এই ব্যক্তি বলেন, “বাসা কাছাকাছি বলে ও হাটে এসে ছেলেদের গরু দেখার শখ আছে বলে, এদের নিয়েই এসেছি। পছন্দ হলে নিয়ে চলে যাব।”
করোনাভাইরাস সংক্রমণের অতি বিস্তারের মধ্যে পশুর হাটে আসার সরকারি নির্দেশনার বিষয়ে মনে করিয়ে আরও কিছু জিজ্ঞেস করতে গেলে কিছুটা লজ্জাই পেলেন। আর কিছু বলতে চাইলেন না।
শুধু তারা নন, এমন অনেককেই দেখা গেল উখিয়ার কোরবানি পশুর হাটগুলোতে- যেখানে গত শনিবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কেনাবেচা শুরু হয়েছে।
রোববার উখিয়ার কাষ্টমস, বালুখালী মরাগাছতলা বাজার, থাইংখালী বাজার হাট ঘুরে দেখা গেল, গরু কিনতে বা দেখতে দলবেঁধে শিশুরা যেমন ঘুরছেন ফিরছেন, তেমনি বয়স্করাও বাদ নেই।
অনেককেই দেখা গেল দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন গায়ে গা লাগিয়ে। হাটে ক্রেতাদের মত পশু বিক্রেতা ও বেপারীদেরও স্বাস্থ্যবিধি মানতে দেখা যায়নি। হাটে ঢোকার মুখে ও পরে যেসব নিদের্শনা মেনে চলার কথা তা অনুসরনের উদাহরণ চোখে পড়েনি বললেই চলে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে জাফর নামে এক বেপারী বলেন, “ভাই- কাস্টমারই তো ভিড়ছে না, মাস্ক পরে কী হবে। আছে, বৃষ্টি পড়েছিল বলে মাস্ক ব্যাগে রেখে দিয়েছি।”
অথচ এসব হাটে স্বাস্থ্যবিধি ও সুরক্ষার বিষয়ে প্রচারণা, উপজেলা প্রশাসনের হুশিয়ারি ও সতর্কতা থেমে নেই। একদিকে চলছে অনবরত প্রচারণা, অন্যদিকে তা ‘কানে না নিয়েই’ ঘুরে বেড়াচ্ছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
এদিকে উখিয়ার সচেতন নাগরিকরা বলেন, প্রশাসনের নজরদারি কম থাকায় স্বাস্থ্যবিধি মানার যে ভীতি তাও কমে গেছে। বর্তমানে এমন পরিস্থিতিতে আমরা যেভাবে পারি মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি প্রশাসন একটু নজর দেয় তাহলে স্বাস্থ্যবিধি পালনে সাধারণ মানুষ সচেতন হবে।
উখিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইমরান হোসাইন সজীব বলেন,” করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে উখিয়া উপজেলার জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার জন্য উদ্ধুদ্ধ করা হচ্ছে। সরকারি নির্দেশনা যথাযথ জনসাধারণকে মেনে চলতে সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হবে।”
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-