ঘরে ঘরে সর্দিকাশি, করোনা পরীক্ষা কম

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ :

করোনার সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। চতুর্থ ঢেউয়ে অমিক্রনের উপ-ধরনে সংক্রমণ বেশি বাড়ছে। এ পরিস্থিতিতে রাজধানীসহ সারা দেশের প্রায় ঘরে ঘরে মানুষ জ্বর-সর্দিকাশিতে ভুগছেন।

কিন্তু করোনার পরীক্ষা করাচ্ছেন খুবই কম। পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তায় গুরুত্ব দিচ্ছেন না। দেশে দৈনিক শনাক্ত বেড়ে আবার প্রায় ১৬ শতাংশে পৌঁছেছে। প্রতিদিন মারাও যাচ্ছেন দুই-তিনজন।

সম্প্রতি দেশে করোনাভাইরাস অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের নতুন সাব-ভ্যারিয়েন্ট বা উপ-ধরন শনাক্ত করেছেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের একদল গবেষক। এই উপ-ধরনটি বর্তমানে সংক্রমণশীল অন্যান্য ধরনের তুলনায় বেশি সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এই উপ-ধরনটি দক্ষিণ আফ্রিকায় করোনা সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউ এবং সামপ্রতিক কালে ভারতে করোনার তৃতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী বলে বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।

এ জন্য মাস্ক ব্যবহারসহ কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার কোনো বিকল্প নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত করোনা আক্রান্তের যে সংখ্যা জানাচ্ছে, বাস্তব পরিস্থিতি তার চেয়েও বেশি ভয়াবহ। করোনা পরীক্ষায় মানুষের অনাগ্রহ এবং সংক্রমিতদের কোনো ব্যবস্থাপনায় না রাখাকে লাগামহীন সংক্রমণের কারণ হিসেবে দায়ী করছেন তারা।

বর্তমানে প্রতিদিন যে করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছেন তাদের মধ্যে রাজধানীতে রয়েছেন ৯০ শতাংশের বেশি। ঢাকা মহানগরে অনেক পরিবার আছে, যাদের একাধিক সদস্য জ্বর-সর্দিতে আক্রান্ত। তাদের ঘর যেন একরকম ‘হাসপাতাল’ হয়ে পড়েছে। মফস্বল এলাকায় জ্বর-সর্দিতে আক্রান্তের সংখ্যাও কম নয়।

সতর্কতার পরামর্শ দিয়ে চিকিৎসকরা বলেন, সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বাসায় থাকলেও আইসোলেটেড থাকতে হবে। বাইরে একেবারে ঘোরাফেরা করা যাবে না। আশা করি, আক্রান্তরা চার-পাঁচদিনের মধ্যেই সুস্থ হয়ে যাবেন। তবে শ্বাসকষ্ট বা অন্য কোনো সমস্যা হলেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে।

দেশে সংক্রমণ বাড়ার কারণ হিসেবে জনগণের পরীক্ষায় অনাগ্রহকে দায়ী করছেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা এবং সংস্থাটির সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন।

তিনি বলেন, আমরা দেখছি হঠাৎ করেই দেশে শনাক্তের হার কীভাবে বেড়ে গেছে। চতুর্থ ঢেউ শুরুর দিকে রয়েছে এটি। এতে কমিউনিটি সংক্রমণ হচ্ছে। সংক্রমণ আরও বাড়বে বলে তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

তিনি আরও বলেন, শঙ্কার বিষয় হলো অনেকে আক্রান্ত হলেও পরীক্ষা করাতে আসছেন না। পরীক্ষা করালে সংখ্যা আরও বেড়ে যাবে। তাদের করোনা পরীক্ষায় উৎসাহিত করা দরকার। এখন পরীক্ষা না করার কারণে পরবর্তী সময়ে তাদের করোনায় কোনো শারীরিক জটিলতা হলে তার সঠিক কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বিশেষত নিজের এবং পরিবারের সচেতনতার জন্য হলেও পরীক্ষা করা দরকার।

সংক্রমণের লাগাম কীভাবে টেনে ধরা সম্ভব জানতে চাইলে আইইডিসিআ’র উপদেষ্টা বলেন, আমরা সবসময়ই বলছি মাস্ক পরতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। কিন্তু আসলে এসবে কোনো কাজ হচ্ছে না। আমরা দেখছি, সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে; কিন্তু সে অনুযায়ী পরীক্ষা হচ্ছে না। এ মুহূর্তে সরকারকেই দায়িত্ব নিয়ে করোনা পরীক্ষা জোরদার করতে হবে।

করোনায় শনাক্তের হার প্রায় ১৬ শতাংশ: দিন দিন করোনার চতুর্থ ঢেউ তীব্র হচ্ছে। দৈনিক শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আগের দিন শনাক্তের হার ছিল ১৫ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় নতুন রোগী শনাক্ত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬৮০ জনে। আগের দিন এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ২৮০ জন। ১ হাজার ৬৮০ জনের মধ্যে রাজধানীতেই ১ হাজার ৫১৩ জন শনাক্ত হয়েছেন।

অর্থাৎ মোট শনাক্তের ৯০ শতাংশই রয়েছেন ঢাকা মহানগরীতে। একই সময়ে করোনায় আরও ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। দেশে এ পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ২৯ হাজার ১৪০ জন। নতুন শনাক্ত নিয়ে সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত মোট শনাক্ত ১৯ লাখ ৬৫ হাজার ১৭৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৯ জন এবং এখন পর্যন্ত ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৮৮ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, দেশে ৮৮০টি পরীক্ষাগারে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ হাজার ৭৭৮টি নমুনা সংগ্রহ এবং ১০ হাজার ৭২৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।

এখন পর্যন্ত ১ কোটি ৪২ লাখ ৯২ হাজার ৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। নমুনা পরীক্ষা বিবেচনায় গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৯৭ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ এবং শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। ২৪ ঘণ্টায় ১ জন পুরুষ এবং ১ জন নারী মারা গেছেন। মৃত্যু তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৬১ থেকে ৭০ বছরের একজন, ৯১ থেকে ১০০ বছরের মধ্যে একজন।

তাদের ২ জনই ঢাকা বিভাগের বাসিন্দা। দেশে মোট পুরুষ মারা গেছেন ১৮ হাজার ৬০২ জন এবং নারী ১০ হাজার ৫৩৮ জন। নতুন শনাক্তের মধ্যে ঢাকা মহানগরের রয়েছেন ১ হাজার ৫১৩ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ১ হাজার ৫৭২ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৪ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৪ জন, রাজশাহী বিভাগে ১৪ জন, রংপুর বিভাগে ৪ জন, খুলনা বিভাগে ৪ জন, বরিশাল বিভাগে ১২ জন এবং সিলেট বিভাগে ৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছেন।

আরও খবর