চট্টগ্রাম •
চট্টগ্রামে প্রায় ৪ কোটি টাকার দুর্নীতি মামলায় ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের পক্ষে সাফাই সাক্ষী দিয়েছেন দুই ব্যক্তি। তারা ওসি প্রদীপের গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও মেম্বার।
রোববার চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্পেশাল জজ মুন্সি আবদুল মজিদ এর আদালত তাদের সাফাই সাক্ষ্যগ্রহণ করেন। এ সময় আসামি ওসি প্রদীপ ও চুমকি কারন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পিপি মাহমুদুল হক মাহমুদ বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে আদালতে ২৪ জনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামিপক্ষ থেকে দু’জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছেন। আগামী ২০ জুন আদালত যুক্তিতর্কের দিন নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সমীর দাশগুপ্ত ও রতন চক্রবর্তী বলেন, প্রদীপ ও চুমকি কারনের পক্ষে দুজন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করেছেন আদালত। সাক্ষ্য দিয়েছেন চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর সারোয়াতলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন এবং ওই ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবদুল জলিল।
দুদক চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, চট্টগ্রাম নগরের পাথরঘাটায় ছয়তলা বাড়ি, ষোলশহরের বাড়ি, ৪৫ ভরি সোনা, একটি করে কার ও মাইক্রোবাস, ব্যাংক হিসাব এবং কক্সবাজারের একটি ফ্ল্যাটের মালিক প্রদীপের স্ত্রী চুমকি কারন। তার ৪ কোটি ৮০ লাখ ৬৪ হাজার ৬৫১ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের বিপরীতে বৈধ ও গ্রহণযোগ্য আয় পাওয়া যায় ২ কোটি ৪৪ লাখ ৬৬ হাজার ২৩৪ টাকার। তার বিরুদ্ধে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪১৭ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের সত্যতা পায় দুদক।
এছাড়া চুমকি নিজেকে মৎস্য ব্যবসায়ী দাবি করলেও এর কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। প্রদীপ ও তার স্ত্রী ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জন, সম্পদের তথ্য গোপন ও মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত।
২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকি কারনের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় চার্জ গঠন করে আদালত। ২৬ জুলাই দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন আদালতে চার্জশিট জমা দেন। ১ সেপ্টেম্বর চার্জশিটের ওপর শুনানি হয়। চলতি বছরের গত ২৯ জুন দুপুরে চট্টগ্রাম সিনিয়র স্পেশাল জজ ও মহানগর দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত প্রদীপ কুমার দাশের অবৈধ সম্পদ দেখভালের দায়িত্ব কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসককে দেন।
গত ২০ সেপ্টম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদকের সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিনের করা আবেদনের শুনানি শেষে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত তাদের অবৈধ সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দেন। ২০২০ সালের ২৩ আগস্ট দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-২ এর তৎকালীন সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজ উদ্দিন বাদী হয়ে প্রদীপের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেন।
প্রসঙ্গত, মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত ওসি প্রদীপ। বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের মৃত হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তাদের নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার চুমকি কারন সন্তানদের নিয়ে তিনি বসবাস করতেন।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-