নিজস্ব প্রতিবেদক •
কক্সবাজারের খুরুশকুলে নাফিজা আক্তার (১৪) নামের এক তরুণীকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় তিন বখাটের হাতে বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন আবদুল মোনাফ নামের এক যুবক।
তরুণীর ইজ্জত রক্ষায় ওই যুবকের প্রাণপণ চেষ্টা এবং বেধড়ক মার খাওয়ার ভিডিওটি ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যায়, স্থানীয় বখাটেরা ফিল্মি স্টাইলে নাফিসা আক্তার নামের এক তরুণীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তরুণীকে রক্ষায় এগিয়ে আসেন আব্দুল মোনাফ। বখাটেদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ওই তরুণীকে রক্ষা করতে পারলেও বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন মোনাফ।
আবদুল মোনাফের দাবি, তারা সম্পর্কে ভাই বোন। বোনের ইজ্জত রক্ষা করতে গিয়ে স্থানীয় বখাটেরদের হাতে বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন তিনি। তবে সদর থানা পুলিশ বলছে তারা আসলে ভাই বোন নয়। তবে তাদের একে অপরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক থাকতে পারে।
এদিকে ঘটনাটি কক্সবাজার সদরের খুরুশকুল আশ্রয়ন প্রকল্পের বেড়িবাঁধে গত মঙ্গলবার (৩১ মে ২০২২) বিকেলে ঘটলেও তা সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় শনিবার রাতে। এরপরই নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।
শনিবার মধ্যরাতে রাতে অভিযান চালিয়ে তিনজনের মধ্যে অভিযুক্ত দুই বখাটেকে আটক করেছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী আব্দুল মোনাফ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঝিনুক বিল্ডিংয়ে আমরা থাকি। সেখান থেকে আমার বোন মামার বাড়ি শহরের সমিতি পাড়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ৩১ মে বোন বাড়ি ফেরার পথে খুরুশকুল মনুপাড়ার আরমান, জামাল ও রায়হানসহ ৬/৭ জন আমার বোনকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। তারা এসময় বোনের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। পরে আমার বোন কয়েকবার ফিরে আসতে চাইলে তারা বার বার পথ আটকাচ্ছিল, তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। আমি কিছুটা দুর থেকে এসব দেখে দৌড়ে আসি। জিজ্ঞেস করার সঙ্গে সঙ্গে তারা আমার বোনকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। তখন আমি বোনকে জড়িয়ে ধরি। এসময় তার গায়ে কেন হাত দিয়েছে জানতে চাইলে তারা আমাকেও মারধর শুরু করে।
মোনাফ আরও বলেন, ঘটনার পর পরই সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে এ বিষয়ে সদর থানায় অভিযোগ দায়ের করি। কিন্তু ঘটনার ১১দিন পার হয়ে গেলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। তাই বখাটেরা আমাকে উপর্যুপরি হুমকি দিয়ে আসছে। এ কারণে শনিবার রাতে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করি।
তবে পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী মোনাফ সেদিন পুরো ঘটনা গোপন করে শুধুমাত্র মোবাইল ছিনতাইয়ের একটা অভিযোগ দেন। এ কারণে পুলিশ তাৎক্ষণিক আসল ঘটনা জানতে পারিনি। গতকাল ভাইরাল ভিডিওর সাথে অভিযোগের কোন মিল নাই।
তিনি বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটা দেখে গতরাতে অভিযুক্ত খুরুশকুল মনুপাড়া এলাকা নুরুল আলমের ছেলে রায়হান (২০) ও কুলিয়া পাড়া এলাকার নুরুন্নবীর ছেলে আরমানকে (২০) আটক করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইননে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সেলিম উদ্দিন আরও বলেন, ভাই বোন হিসেবে ভিডিও প্রচার হলেও মূলতো তারা ভাই বোন নয়। হয়তো তাদের দুইজনের মধ্যে সম্পর্ক থাকতে পারে।
পুলিশের এ কর্মকর্তার দাবি, আটকৃতরা পুলিশের কাছে দাবি করেছে, তারা ভাই বোন নয়, ওইদিন তারা উভয়ে বেড়িবাঁধের আড়ালে গিয়ে খারাপ কাজে লিপ্ত হতে দেখে অভিযুক্তরা বাধা প্রদান করে। যা এক পর্যায়ে মারামারিতে পর্যন্ত গড়ায়। যদিও এখন তারা ভাইবোন হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-