ডেস্ক রিপোর্ট •
ডলারের বিপরীতে টাকার মানের আরও পতন হয়েছে। সবশেষ মঙ্গলবার টাকার মান ৫ পয়সা কমায় বাংলাদেশ ব্যাংক। সে হিসাবে আন্তব্যাংক বিনিময় হার প্রতি ডলার বেড়ে দাঁড়াল ৯২ টাকায়।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার ব্যাংকগুলোর জন্য দেয়া একক রেট তুলে নেয়ার পর থেকে চার কর্মদিবসেই টাকার অবমূল্যায়ন হলো চার দফা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চলতি বছর মুদ্রা বাজারের অস্থিরতা সামাল দিতেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান দফায় দফায় কমাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছর প্রতি ডলারের দর বেড়েছে ৭ টাকা ২০ পয়সা বা ৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ।
আন্তব্যাংক বিনিময়ের ক্ষেত্রে যে দর বেঁধে দেয়া হয়েছে, খোলা বাজারে দাম তার চেয়ে বেশি। যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে খোলা বাজার থেকে মুদ্রাটি কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকা বা তার চেয়ে বেশিতে।
সোমবার দুপুরে টাকার মান ১ টাকা ৬০ পয়সা কমিয়ে ডলারের দর ৯১ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। পরে বাজারে ডলারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় আরও ৪৫ পয়সা কমিয়ে ৯১ টাকা ৯৫ পয়সা দরে ডলার বিক্রি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
মঙ্গলবার সেখান থেকে আরও ৫ পয়সা কমানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ হাবিবুর রহমান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে সমন্বয় করা হচ্ছে। তবে মে মাসে এলসি (ঋণপত্র) খোলার পরিমাণ কমছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে মনে হচ্ছে। তখন টাকা আর অবমূল্যায়নের প্রয়োজন পড়বে না।’
ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ডলারের দর নিয়ে এই অস্থিরতা দেখা দেয়। বিশ্ববাজারে নিত্যপণ্য ও জ্বালানির বাড়তি দাম মেটাতে লাগছে অতিরিক্ত ডলার। রপ্তানির প্রবৃদ্ধি আকর্ষণীয় হলেও বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্যের দাম বৃদ্ধির তুলনায় সেটি তেমন কিছু নয়। আবার প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সেও ভাটা পড়েছে। এ কারণে যত বিদেশি মুদ্রা আসছে, যাচ্ছে তার চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার অবমূল্যায়ন করে যে রেট ঠিক করছিল, ব্যাংকগুলোতে দাম ছিল তার চেয়ে বেশি। এ ক্ষেত্রে একেক ব্যাংক একেক দামে ডলার কিনতে থাকে আবার বিক্রিও করতে থাকে।
এই পরিস্থিতিতে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংক বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য ডলারের একক রেট ঠিক করে দেয়। কিন্তু ৪৮ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পিছু হটে আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।
গত বৃহস্পতিবার একক রেট তুলে দেয়ার দিনই মান কমে যায় ৯০ পয়সা।
একক রেট করে ডলারের বিপরীতে ৯১ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেটি তুলে দেয়ার পর ব্যাংকগুলোর কাছে ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা দরে বিক্রি করা হয় সাড়ে ১৩ কোটি ডলার। ওইদিন দ্বিতীয় দফায় জরুরি চাহিদা মেটাতে আরও ৫০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়।
সোমবার ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে দুইবার। প্রথম দফায় আনুষ্ঠানিকভাবে ১ টাকা ৬০ পয়সা কমানো হয়। পরে বিকেলে দ্বিতীয় ধাপে ৪৫ পয়সা কমিয়ে ডলার বিক্রি করা হয়। তবে টাকার এই অবমূল্যায়নের তথ্য ওয়েবসাইটে আপডেট করা হয়নি, যেটি করা হয় পরের দিন সকালে। এদিন বিকেলে আরও ৫ পয়সা অবমূল্যায়নের তথ্যও ওয়েবসাইটে দেয়া হয়নি।
চাহিদা সামাল দিতে মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েকটি ব্যাংকের কাছে ১২ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করেছে। সব মিলিয়ে চলতি অর্থবছর বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াল ৬৬১ কোটি ২০ লাখ ডলার।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি করতে থাকায় রিজার্ভে টান পড়েছে। যে রিজার্ভ গত বছর ৪৮ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে ৫০ বিলিয়নের দিকে ছুটছিল, সেটি এখন ৪২ বিলিয়নের নিচে নেমে ক্রমহ্রাসমান, যা উদ্বেগ তৈরি করেছে অর্থনীতিতে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-