রাশেদুল ইসলাম •
কক্সবাজারের আলোচিত বেসরকারি হাসপাতাল ফুয়াদ আল্-আল খতীব হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতি রোগীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনি ঝামেলা এড়াতে তিনদিন পর পরিবারের সঙ্গে সমঝোতা করবেন বলে জানা গেছে।
মৃত প্রসূতি রোগী ফারজানা (২৭) টেকনাফ পৌরসভার নাইক্ষ্যংপাড়া এলাকার জিয়াউর রহমানের স্ত্রী।
কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় এক প্রসূতি রোগীর মৃত্যুর খবর যখন ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয় তখন সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ ওই হাসপাতালে ভিড় হয়৷
রোগীর স্বজনরা স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক নিয়ে ফুয়াদ আল্ খতীব হাসপাতালে ওই চিকিৎসক’র কাছে মৃত্যুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান তিনদিনপরে এ বিষয়ে বসব৷
সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রবিবার (৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে নিহতের স্বজনরা ফুয়াদ আল্-খতীব হাসপাতাল অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এসে বলেন আপনারা উপরে আসেন সমঝোতা হবে বলে শান্তনা করে।
নিহতের স্বামী জিয়াউর রহমান জানান, শনিবার ৪ জুন রাত১১টায় আমার স্ত্রীকে ডাক্তার দেখাতে ফুয়াদ আল্ খতীব হাসপাতালে নিয়ে যায়৷। সেখানে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডাঃ ফাতিমা জান্নাত জানান আপনার স্ত্রীকে সিজার করতে হবে ওনার সময় হয়েছে।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, রাত সাড়ে ১১ টায় স্ত্রী ফারজানাকে ফুয়াদ আল্ খতীব হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷
স্বামী জিয়াউর রহমান জানান, আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্ট অনুযায়ী আমার স্ত্রীর আরো ১-২সপ্তাহ সময় ছিল৷ কিন্তু চিকিৎসক নিশ্চিত করে জানালেন এখনই সিজার করতে হবে৷ অন্যথায় বড় সমস্যা দেখা দিতে পারে৷ তখন বাজে রাত ১১:৪০ মিনিট৷ এত রাত্রে সিজার করতে টাকা পাব কয়! আমি আমার আত্বিয় স্বজনদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমার স্ত্রীর বড় ভাই সাংবাদিক কাইসারুল হক জুয়েলকে নিয়ে বের হয়৷ আমার এক চাচার কাছে গিয়ে টাকা নিয়ে প্রায় রাত সাড়ে ১২টার সময় হাসপাতালে এসে দেখি আমার স্ত্রী নেই৷ হাসাপাতলের একজন দায়িত্বরত স্টাফ আমাকে বলল আপনার স্ত্রীকে সিজার করতে ডাক্তার ভেতরে নিয়েগেছে৷
নিহতের স্বামী জানান, প্রায় ৩ ঘন্টা পর আমাদেরকে ডাক্তারে এসে বলল! আপনার সন্তান নেন৷ আপনার স্ত্রীর অবস্থা ভালনা! তখন ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম কি সমস্যা হয়েছে! ডাক্তার উত্তর না দিয়ে চলেগেছেন আমাদের কে রেফার করলেন জেলা সদর হাসপাতালের আইসিউতে৷
নিহতের বড় ভাই সাংবাদিক কায়সারুল হক জুয়েলের অভিযোগ, তাদের না জানিয়েই এবং তাদের অনুপস্থিতিতে কেন তার বোনকে সিজার করা হয়েছে৷
তিনি অভিযোগ করেন, তার বোন ফারজানা সম্পূর্ণ সুস্থ ছিল। ভুল চিকিৎসায় তাকে মেরে ফেলা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ফুয়াদ আল্ খতীব হাসপাতালে প্রায় সময় ভুল চিকিৎসায় মানুষের মৃত্যু হয়৷ এসব মৃত্যুকে স্বাভাবিক বলে প্রচার করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন অপরাধকান্ডে জড়িত এক শ্রেনীর দালাল জড়িত আছে বলে খবর পাওয়াগেছে৷
এবিষয়ে চিকিৎসক ডাঃ ফাতিমা জান্নাতের সাথে সাক্ষাতে বক্তব্য নেয়ার অনেক চেষ্টার পরেও কথা বলা সম্ভব হয়নি৷
ফুয়াদ আল্ খতীব হাসপাতালের প্রশাসনিক কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন খালিদ বাংলাদেশ বুলেটিনকে জানান, আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ বোর্ড গঠন করে চেষ্টা করেছি৷ হয়ত তার হায়াত এতটুকুই ছিল৷
তিনি আরো জানান, স্বামীর এবং তার স্বজনদের দস্তখত নিয়েই আমরা সিজার করেছি৷
কক্সবাজার সদর মডেল থানার (ওসি) তদন্ত মোঃ সেলিম উদ্দিন জানান, ফুয়াদ আল্ খতীব হাসপাতালে রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় এখনও রোগীর পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে রোগীর চিকিৎসার সব কাগজপত্র দেখা হয়েছে৷ অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-